বার্নাব্যুতে গোল-বন্যা, মেসিকে জবাবটা ভালোই দিলেন রোনালদো

এভাবে বারবার প্রতিপক্ষ শিবিরে হানা দেন রোনালদো। ছবি: এএফপি
এভাবে বারবার প্রতিপক্ষ শিবিরে হানা দেন রোনালদো। ছবি: এএফপি
• ৬-৩ গোলে রিয়ালের জয়।
• রোনালদোর চার গোল।
• পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এল রিয়াল মাদ্রিদ।


দিনের শুরুতে মেসি এক গোল করেছেন, করিয়েছেন এক গোল। অ্যাটলেটিকোকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা। ২৯ ম্যাচে ২৩ জয় নিয়ে শীর্ষ অবস্থানটা আরও পাকা করল মেসির বার্সেলোনা। পিচিচি ট্রফির দৌড়ে অনেক পিছিয়ে থাকা রোনালদোকে তাই বাড়তি কিছু করতেই হতো। রোনালদো করে দেখালেন তেমনই কিছু। হ্যাটট্রিক তো করলেনই, আবার দলের অন্য গোলও বানিয়ে দিয়েছেন। রোনালদোর এমন আলো ছড়ানো রাতে জিরোনাকে ৬-৩ ব্যবধানে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ১৮ জয়ে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে রিয়ালকে পয়েন্ট টেবিলের তিনে টেনে তুললেন রোনালদো।

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই মনে হচ্ছিল, এ ম্যাচে গোল হবেই। ৭ মিনিটের মধ্যেই দুই গোলে এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল। প্রথমে রোনালদো, পরে লুকাস ভাসকেজকে গোলবঞ্চিত করেন জিরোনা গোলরক্ষক। ৯ মিনিটে আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরও ভাসকেজ-রোনালদোর মুখে হাসি! কারণ, প্রথম ৯ মিনিটের ফুটবল দেখেই মনে হচ্ছিল, খেলাটা শুধু খেলছেনই না তাঁরা, উপভোগও করছেন। ১১ মিনিটে গোলও পেয়ে গেল রিয়াল। কর্নার থেকে আবার বল ফেরত পেয়েছিলেন ক্রুস। তাঁর নিচু ক্রস থেকে রোনালদোর দারুণ এক শট (১-০)।

গোলের পরও খেলার ধার কমেনি রিয়ালের। ২০ মিনিটের মধ্যে আরও গোটা তিনেক সুযোগ পেয়েছে রিয়াল। পাল্টা আক্রমণে জিরোনাও সুযোগ সৃষ্টি করেছিল দুটি। ২২ মিনিটে ভাসকেজের গোল ভুল অফসাইডে বাতিল করেন লাইন্সম্যান। রিপ্লেতে দেখা গেছে রোনালদো অফসাইডে থাকলেও বল ধরার কোনো চেষ্টাই করেননি। গোলে শট নেওয়া ভাসকেজ ঠিকই অন সাইডে ছিলেন। কিন্তু রোনালদোদের আপত্তিতে কাজ হয়নি কোনো।

২৯ মিনিটে কারভাহালের ভুলে সমতায় ফেরে জিরোনা। ডান প্রান্তে অযথা এক ফাউল করেন রিয়াল রাইটব্যাক। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি কিকে হেড করে স্টুয়ানির গোল। স্টুয়ানিকে ডিফেন্ড করার দায়িত্বে কারভাহালই ছিলেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা সমানে সমান লড়েছে দুই দল।

প্রথমার্ধের শেষভাগটা দুয়ো শুনে কাটাতে হয়েছিল করিম বেনজেমাকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাই জবাব দিলেন। ৪৭ মিনিটে তাঁর দারুণ এক থ্রু পাস থেকে দ্বিতীয় গোল রোনালদোর। এবারও বাঁ পায়ের শটে বোনোকে ফাঁকি দিলেন রোনালদো (২-১)।

এ তো গেল গোলদাতা রোনালদোর কথা। গোল তিনি নিয়মিত করেন। লা লিগায় গত ৬ ম্যাচে ১৪ গোল তাঁর। কিন্তু আজ রোনালদো খেলেছেন মাঠ জুড়ে। খেলা তৈরি করেছেন। মাঝমাঠে নেমে অন্যদের বল বানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি এসেনসিওকে ফ্রি কিক নিতে দিয়েছেন। ৫৯ মিনিটের গোলটা সেই রোনালদোকে পূর্ণতা দিল। বাঁ প্রান্ত থেকে মার্সেলো দিলেন বেনজেমাকে। বেনজেমার দুর্দান্ত পায়ের কাজে ডি-বক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেলেন রোনালদো। ওই জায়গা থেকে রোনালদো শট নেবেন, এটা জানা কথা। কিন্তু বার্নাব্যু–ভর্তি দর্শক ও টিভি পর্দায় তাকিয়ে থাকা সবাইকে স্তব্ধ করে রোনালদো পাস দিয়ে দিলেন ভাসকেজকে! ব্যবধান বাড়ল রিয়ালের (৩-১)।

রোনালদোর উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি
রোনালদোর উদ্‌যাপন। ছবি: এএফপি

৬৪ মিনিটে হ্যাটট্রিকটা বুঝে নিলেন রোনালদো। ডান প্রান্তে মার্কো এসেনসিওর দুর্দান্ত বল প্লেয়িংয়ে ফাঁকায় বল পেলেন বেনজেমা। কিন্তু বেনজেমা গোল করতে পারলেন না! ফিরতি বল পেয়ে অবশ্য কোনো ভুল করেননি রোনালদো (৪-১)। ৩ মিনিট পরে ব্যবধান কমালেন স্টুয়ানি। ফ্রি কিক থেকে আরেকটি হেডে গোল করলেন দারুণ ফর্মে থাকা স্টুয়ানি (৪-২)।

৮৬ মিনিটে জিরোনার লড়াইয়ের শেষ আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিলেন বদলি নামা গ্যারেথ বেল। তাঁর সঙ্গেই বদলি নামা লুকা মডরিচের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে ব্যবধান বাড়ালেন (৫-২) ওয়েলশ ফরোয়ার্ড। ২ মিনিট পরেই জিরোনার গোল (৫-৩)! গোল–বন্যা তখনো শেষ হয়নি!

যোগ হওয়া প্রথম মিনিটে (৯১) ক্রুসের আরেকটি পাস খুঁজে নিল রোনালদোকে। আরেকটি ঠান্ডা মাথার প্লেসিং। ম্যাচের নবম গোল (৬-৩)!

এর আগেই ৮২ মিনিটে মাঠ ছেড়ে উঠে গেছেন বেনজেমা। দর্শকের দুয়ো ততক্ষণে করতালিতে রূপ নিয়েছে। রোনালদোর সেরাটা বের করতে নিঃস্বার্থ বেনজেমার গুরুত্বটা যে শুধু জিদান নন, দর্শকেরাও বুঝতে শিখছেন!