অভিনন্দন বাংলাদেশ!

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক–প্রথম আলো জাতীয় গণিত উৎসবের উদ্বোধন, ২০১৮। ছবি: প্রথম আলো
ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক–প্রথম আলো জাতীয় গণিত উৎসবের উদ্বোধন, ২০১৮। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ২০ বছর ধরে গণিত অলিম্পিয়াডসহ জ্ঞানভিত্তিক অন্যান্য প্রতিযোগিতা আমাদের তরুণ-কিশোরদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনের জন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় গণিত উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) ধারাবাহিক সাফল্য তা-ই প্রমাণ করে। এ বছরের আইএমওতে আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর স্বর্ণপদক প্রাপ্তি মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আমাদের তরুণদের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে। দেশে জাতীয় গণিত উৎসব এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্য নিয়েই এবারের প্রতিবেদন। লিখেছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ

আমাদের দেশটি মধ্য আয়ের দেশের যোগ্যতা পূরণ করেছে—মূলত পোশাকশিল্পে কর্মরত স্বল্প শিক্ষিত মেয়েদের শ্রমে পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, মধ্যপ্রাচ্যে নিগৃহীত হয়ে, কিছুটা অভুক্ত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করা অদক্ষ-অর্ধদক্ষ কর্মীদের কল্যাণে। আর স্বাধীনতার সময় মাত্র সাত কোটি মানুষের দেশে কিছুটা বেশি আবাদযোগ্য ভূমির খাদ্যঘাটতির দেশকে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীরা তুলনামূলকভাবে কম আবাদযোগ্য ভূমিতে দ্বিগুণ মানুষের খাদ্য জোগান দিচ্ছেন।

আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী
আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী

পৃথিবীর গড় জনঘনত্বের ২৪ গুণ বেশি ঘনত্বের দেশকে একুশ শতকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সফল হতে চাইলে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির দক্ষতায় এবং জ্ঞানে উৎকর্ষ অর্জন করতে হবে। ২০ বছর ধরে গণিত অলিম্পিয়াড, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতা আমাদের তরুণ-কিশোরদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনের জন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় গণিত উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) ধারাবাহিক সাফল্য তা-ই প্রমাণ করে। এ বছরের আইএমওতে আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্তি মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আমাদের তরুণদের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে।

আমাদের জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী সংগঠক মুনির হাসান, আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, কেমব্রিজের ডিগ্রিধারী ড. মাহবুব মজুমদারের পরিচর্যা, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধ প্রথম আলো, বন্ধুসভা ও মুভার্সের নিরলস চেষ্টা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম. সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রচেষ্টায় তাদের উদার অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং আমাদের তরুণ-কিশোরদের ও তাদের অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গণিত উৎসব এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটি এমনকি উন্নত দেশের জন্যও একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। সারা দেশের প্রায় ২৫টি স্থানে গড়ে হাজার ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে আঞ্চলিক উৎসব থেকে বিজয়ীদের নিয়ে জাতীয় উৎসব আয়োজন করা হয়। জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে চলতে থাকে নানা কর্মশালা, পরীক্ষা। এসব আয়োজন থেকে মর্যাদাকর আইএমওর জন্য বাংলাদেশের ছয়জন প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়।

রাজধানীর সিএ ভবন মিলনায়তনে দেশের প্রথম মিনি গণিত অলিম্পিয়াড, ২০০২
রাজধানীর সিএ ভবন মিলনায়তনে দেশের প্রথম মিনি গণিত অলিম্পিয়াড, ২০০২

গণিত উৎসবের শুরুর দিকে নটর ডেম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন জাতীয় অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী—আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে প্রথম পদক অর্জন, প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন, গণিতে নোবেল পুরস্কারখ্যাত ফিল্ডস মেডাল ও বিজ্ঞানের কোনো শাখাতে নোবেল পুরস্কার। আমার মতো শিক্ষায় আশাবাদী মানুষও সেদিন ভাবতে পারেনি, এমনকি এর প্রথমটিও আমাদের জন্য অর্জন করা সম্ভব হবে। কী আশ্চর্য, প্রথম দুটি লক্ষ্য আমরা নির্ধারিত সময়ের কাছাকাছি সময়েই অর্জন করেছি। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন উৎসবমুখর পরিবেশে গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে কাটছে শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি।

একাধিকবার রৌপ্যপদক ও স্বর্ণপদক একেবারেই নাকের ডগা থেকে হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু এবার আমাদের ব্রোঞ্জ, রৌপ্যপদক বিজয়ী জাওয়াদ ৪৮ জন স্বর্ণপদক বিজয়ীর মধ্যে ২৭তম স্থান দখল করে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র স্বর্ণপদক আমাদের দেশে নিয়ে এসেছে। বিশ্বসভায় আমাদের দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে সে। অভিনন্দন বাংলাদেশ!

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রথম আয়োজন, ২০০৩
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পর্যায়ের প্রথম আয়োজন, ২০০৩

যে দক্ষতা ও জ্ঞান দিয়ে একুশ শতকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে বাংলাদেশকে অগ্রসর হতে হবে, আমাদের কিশোরেরা প্রমাণ করেছে, তাদের সেই প্রতিভা রয়েছে। সেটিকে জাগ্রত করতে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের মতো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। গণিত অলিম্পিয়াডের হাত ধরে অন্যান্য বিষয়ের অলিম্পিয়াডও শুরু হয়েছে এবং সেখানে আমাদের তরুণ-কিশোরেরা তাদের প্রশংসনীয় নৈপুণ্য প্রদর্শনও করছে।

এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশের অর্জন ১টি স্বর্ণ, ৬টি রৌপ্য, ২২টি ব্রোঞ্জ ও ২৭টি সম্মানসূচক স্বীকৃতি। ২০১৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমরা যদি পেছনের দিকে যাই, তাহলে দেশভিত্তিক র‍্যাঙ্কিংয়ে আমাদের অবস্থান যথাক্রমে ৪১, ২৬, ৩৫, ৩৩, ৫৩, ৬১, ৫৪, ৭২, ৬৯, ৫৮, ৭৫, ৮০, ৮০ ও ৮৫তম।

জাতীয় গণিত উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান, ২০১০
জাতীয় গণিত উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান, ২০১০

ওপরের ধারা থেকে বাংলাদেশ গণিত দলের ধারাবাহিক অগ্রগতি পরিষ্কার। গত বছর র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা ভারতের থেকেও এগিয়ে ছিলাম; ভারতের ছিল ৫২ আর পাকিস্তানের অবস্থান ছিল ৮১তম। উল্লেখ করা যেতে পারে, যে ভারত সফটওয়্যার রপ্তানি বাজার থেকে প্রতিবছর ১৩০-১৪০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করে, সেই ভারতকেও আমাদের ছাত্ররা প্রায় নিয়মিতভাবেই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে।

১৭ জুলাই রাজধানীর টিসিবি ভবনের মিলনায়তনে আমাদের গণিত দলের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের দীর্ঘক্ষণ উপস্থিতি প্রমাণ করে যে সরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের এই অর্জনে গর্বিত। দলের প্রত্যেক সদস্যকে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ল্যাপটপ কম্পিউটার উপহার দেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় অর্থ পুরস্কার।

জাতীয় গণিত উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকেরা, ২০০৬ সাল
জাতীয় গণিত উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকেরা, ২০০৬ সাল

ড. মাহবুবের পরিচর্যায় আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু গণিতের দক্ষতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তারা জানে, তাদের অর্জিত জ্ঞান-দক্ষতা দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে। স্বর্ণপদক বিজয়ী জাওয়াদের কণ্ঠে সেই সংকল্পই প্রতিধ্বনিত হলো। বিনয়ের সঙ্গে সে বলল, ‘আমরা বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য স্বর্ণপদক হারিয়েছি, এটা পাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল।’ একটি দলকে ড. মাহবুব মজুমদার পরিচর্যা করে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে গেছেন যে স্বর্ণপদকপ্রাপ্তি কেবলই সময়ের ব্যাপার ছিল। টিসিবি মিলনায়তন সেদিন উৎসাহী মানুষের উপস্থিতিতে ভরে গিয়েছিল। আনন্দের বিষয়টা হলো জ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আর বাড়বেই না কেন, এখানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা ছাড়া আমাদের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়া তো অসম্ভব।

জাওয়াদের অনুরূপ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত টেরেন্স টাও সর্বকনিষ্ঠ ফিল্ডস মেডাল বিজয়ী হয়েছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ফিল্ডস মেডাল।

চলতি বছরের আইএমওতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দলনেতা মাহবুব মজুমদার (ডানে)। ছবি: প্রথম আলো
চলতি বছরের আইএমওতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দলনেতা মাহবুব মজুমদার (ডানে)। ছবি: প্রথম আলো

অভিনন্দন আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী, তাহনিক নূর সামিন, জয়দীপ সাহা, তামজিদ মুর্শেদ রুবাব, রাহুল সাহা ও সৌমিত্র দাস। অভিনন্দন আমাদের গণিত দল, অভিনন্দন বাংলাদেশ! আমাদের শিক্ষার্থীদের এই অর্জন সব ক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিশ্বাস জাগাবে, অন্যান্য অলিম্পিয়াড দলও আত্মবিশ্বাসী হয়ে বাংলাদেশের জন্য বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনবে।

লেখক: অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

সদস্য, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

আইএমওর পথে যাত্রা

১৭ জুন ২০০১: প্রথম আলোর তখনকার বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ‘নিউরনে অনুরণন’ নামে বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াডের সূচনা।

২৬ জানুয়ারি ২০০২: রাজধানীর সিএ ভবন মিলনায়তনে দেশের প্রথম মিনি গণিত অলিম্পিয়াড।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০২: নারায়ণগঞ্জে প্রথম জেলা পর্যায়ের গণিত অলিম্পিয়াড।

৩১ জানুয়ারি-১ ফেব্রুয়ারি ২০০৩: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় দেশে প্রথম জাতীয় পর্যায়ের গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন।

১৩ এপ্রিল ২০০৩: অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সভাপতি করে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি গঠন।

৯ এপ্রিল-২৫ জুন ২০০৪: দেশের ছয়টি বিভাগীয় আয়োজন দিয়ে শুরু ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড-প্রথম আলো গণিত উত্সব’।

৬-১৬ জুলাই ২০০৪: গ্রিসে ৪৫তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদান ও পূর্ণ সদস্যপদ লাভ।

৮-১৯ জুলাই ২০০৫: মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ৪৬তম আইএমওতে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ। ৬ সদস্যের দলের ৩ পয়েন্ট প্রাপ্তির মাধ্যমে ৯১টি দেশের মধ্যে ৮৫তম অবস্থান।

১০-২২ জুলাই ২০০৯: জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ৫০তম আইএমওতে সামিন রিয়াসাত ও নাজিয়া চৌধুরীর দেশের পক্ষে প্রথম ব্রোঞ্জপদক অর্জন।

৪-১৬ জুলাই ২০১২: আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ৫৩তম আইএমওতে ধনঞ্জয় বিশ্বাসের দেশের পক্ষে প্রথম রৌপ্যপদক অর্জন।

৪-১৬ জুলাই ২০১৫: থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৫৬তম আইএমওতে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ।

৩-১৪ জুলাই ২০১৮: রোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫৯তম আইএমওতে দেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণপদক পান আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী।

এম. সাহাবুদ্দিন আহমেদ
এম. সাহাবুদ্দিন আহমেদ

স্বর্ণজয়ের স্বপ্নপূরণ
এম. সাহাবুদ্দিন আহমেদ
চেয়ারম্যান, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড

বাংলাদেশের যেকোনো সাফল্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। একদল কিশোর শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে দারুণ সাফল্যের মাধ্যমে আমাদের উজ্জীবিত করেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক উজ্জীবিত শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় থাকতে চায়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব এখন এক অনুপ্রেরণার নাম।

রোমানিয়াতে অনুষ্ঠিত ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে আমাদের শিক্ষার্থীদের একজন, আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী স্বর্ণপদক জয় করেছে। আর অন্যরা ব্রোঞ্জ ও অনারেবল মেনশন অর্জনের মাধ্যমে আমাদের মেধাভিত্তিক প্রত্যয় সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। এ বছর দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই একমাত্র দেশ, যারা স্বর্ণপদক জয় করেছি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা যা পারেনি, তা আমাদের বাংলাদেশের সন্তানেরা অর্জন করে দেখিয়েছে। আমরা প্রমাণ করেছি, চেষ্টা করলে যেকোনো অসম্ভবকে আমরা জয় করতে পারি।

এক যুগের বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, স্বেচ্ছাসেবক, প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংক গণিত উৎসবকে সহযোগিতা করে আসছে। ২০০৪ সালে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আমরা গণিত উৎসবে পথচলা শুরু করি। এ সময় আরও ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মুনির হাসানসহ অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব। আমাদের উদ্যোগ যখন শুরু হয়, তখন আমরা জানতাম আমরা কত দূর যাব। সুফল আমরা পেয়েছি, স্বর্ণজয়ের স্বপ্নপূরণ এখন আমাদের কাছে বাস্তবতা। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, চেষ্টা করলে যেকোনো সাফল্যই আমরা অর্জন করতে পারি। সেই চেষ্টার প্রত্যয় এখন আমাদের আরও বড় আকারে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রত্যয়ী শিক্ষার্থীরা বদলে দেবে সম্ভাবনাময় এই বাংলাদেশকে। আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় থাকব। আমরা প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করছি। আমরা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ জয় করেছি, আগামী দিনে গণিতের সর্বোচ্চ জ্ঞানভিত্তিক পুরস্কার ফিল্ডস মেডেলসহ বিজ্ঞানে নোবেল জয় করব বলে আশা করছি। সুদিন আসছে।