বোনাসে অকৃপণ অথচ পাওনা বকেয়া জাতীয় লিগে!

জাতীয় লিগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন খুলনা। ফাইল ছবি
জাতীয় লিগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন খুলনা। ফাইল ছবি

• জাতীয় লিগ শেষ হয়েছে তিন মাস হলো, এখনো পারিশ্রমিক পাননি খেলোয়াড়েরা
• জাতীয় লিগের মাঝে হয়েছে বিপিএল, পরে হয়েছে বিসিএল, এখন চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
• জাতীয় লিগের পারিশ্রমিক পেতে যতটা অপেক্ষা করতে হয়, অন্য লিগগুলোয় সেটি নয়

জাতীয় লিগ শুরু হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে, পাঁচ রাউন্ড শেষে প্রায় দেড় মাসের বিপিএল-বিরতি। শেষ রাউন্ডটি হয়েছে ডিসেম্বরে। দেশের প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের এই লিগ শেষ হয়েছে তিন মাস হলো। এখনো পারিশ্রমিক পাননি খেলোয়াড়েরা।
জাতীয় লিগের মাঝে হয়েছে বিপিএল, পরে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)। এখন চলছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ, বিপিএল-বিসিএলে পারিশ্রমিক নিয়ে এবার অভিযোগ শোনা যায়নি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। বিপিএল-বিসিএল দুটিই ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বলে দ্রুতই পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়। ঢাকা লিগে এবার পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে বিপিএলের নিয়মে। দেরি হচ্ছে শুধু জাতীয় লিগে।

জাতীয় লিগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন খুলনা বিভাগের এক খেলোয়াড় বললেন, ‘জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি পেতে প্রতিবারই প্রায় পাঁচ-ছয় মাস লেগে যায়। অনেক সময় টাকা পেতে পেতে পরের জাতীয় লিগের সময় হয়ে আসে। অথচ বিপিএল-বিসিএলে এ সমস্যাটা দেখা যায় না। লিগ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পারিশ্রমিক পেয়ে যান খেলোয়াড়েরা। দুই মাস আগে বলা হয়েছিল, সব প্রস্তুত, যার যার ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে। এখনো আসেনি।’

এবার জাতীয় লিগে ২৫ হাজার টাকা থেকে ম্যাচ ফি ৩৫ হাজার করা হয়েছিল (প্রতিবেশী ভারতের রঞ্জি ট্রফির চেয়েও যদিও অনেক কম)। লিগ শেষে কে কত ম্যাচ খেলেছেন সেটি হিসাব করে একবারে ম্যাচ ফি দেয় বিসিবি। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক পরিশোধে বিসিবির দীর্ঘসূত্রতা যে নতুন নয়, সেটি খেলোয়াড়ের কথাতেই বোঝা গেল। জাতীয় দল ভালো খেললে কোটি টাকার বোনাস থাকে। বিপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও টাকার ছড়াছড়ি। অথচ যে লিগ বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল ভিত্তি, সেখানেই পারিশ্রমিক পেতে খেলোয়াড়দের অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন।

অবশ্য বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটি সূত্রে জানা গেল, এবার দ্রুতই নাকি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা ছিল। সমস্যাটা হয়েছে অন্য জায়গায়। টুর্নামেন্ট কমিটির এক কর্মকর্তা বললেন, ‘লিগ শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে সাধারণত টাকাটা চলে যায়। এবার যে সমস্যাটা হয়েছে, আমরা সবার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগে দিতাম অ্যাকাউন্ট-পে চেক। এবার সব খেলোয়াড়ের অ্যাকাউন্ট নাম্বার জোগাড় করতেই একটু দেরি হয়েছে। অনেক খেলোয়াড়ের অ্যাকাউন্ট নাম্বারও ছিল না। আর বিসিবির যাঁরা চেক অনুমোদন করবেন তাঁদের বেশির ভাগই মাঝে শ্রীলঙ্কায় ছিলেন (নিদাহাস ট্রফি দেখতে)। একটু দেরি হচ্ছে এ কারণেই। সব তৈরি হয়ে গেছে, আগামী সপ্তাহে আশা করি খেলোয়াড়েরা টাকা পেয়ে যাবে।’

বিসিবি কর্মকর্তার ‘একটু দেরি’ অবশ্য অনেকের চোখে কম দেরি নয়। যেখানে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন এ ব্যাপারে বিসিবির আন্তরিকতা নিয়েও। গত জানুয়ারিতে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বার্ষিক সভায় সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটকে আর তাঁদের লক্ষ্য হিসেবে দেখেন না।

এমনিতে তেমন টাকাপয়সা নেই, যেটাও পান, সেটিও পেতে দীর্ঘ অপেক্ষা। সাকিব ভুল বলেননি, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তরুণ খেলোয়াড়দের আগ্রহ হবে কী করে!