বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুখবর, স্কটল্যান্ডের বাদ পড়া অন্যায়ও

বিশ্বকাপের টিকিট কাটার উচ্ছ্বাস উইন্ডিজের। ছবি: আইসিসি
বিশ্বকাপের টিকিট কাটার উচ্ছ্বাস উইন্ডিজের। ছবি: আইসিসি
>

• এই প্রথম কোনো সহযোগী দল থাকবে না বিশ্বকাপে
• টেস্ট স্ট্যাটাস আছে ১২ দলের, বিশ্বকাপে খেলবে ১০ দল
• আইসিসির এমন নীতিতে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা বাড়ছেই

কানের পাশ দিয়ে গুলি গিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কাল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৫ রানে জিতেছে ক্যারিবীয়রা। উইন্ডিজের এমন জয়ে চেপে রাখা শ্বাস ফেলেছেন ক্রিকেটের বিশুদ্ধবাদীরা। যাক, ক্যালিপসো সুরবিহীন একটি বিশ্বকাপ তো দেখতে হচ্ছে না। ক্রিকেটের জন্য সুখবর তো বটেই। কিন্তু অন্যায়ও কি নয়? কাল তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারতেও পারত!

ম্যাচের ফলটা আজ নির্দ্বিধায় বলা যাচ্ছে, ৫ রানে জয়ী হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একটু এদিক-ওদিক হলেই ফলটা লিখতে হতো ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৩ রানে জয়ী স্কটল্যান্ড, ২০১৯ বিশ্বকাপে স্বাগতম!

খুলেই বলা যাক। উইন্ডিজদের ১৯৮ রান তাড়া করতে নেমে ১২৫ রান করে ফেলেছিলেন স্কটিশরা। ৩৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বৃষ্টির জন্য খেলা থামানো হয়, যা আর শুরুই করা যায়নি। বৃষ্টি আইনে সে সময় জয়ের জন্য স্কটল্যান্ডের দরকার ছিল ১৩০ রান। এ কারণেই ৫ রানে হেরেছে স্কটল্যান্ড। অথচ স্কোর কার্ডে উইকেটসংখ্যা ৫-এর বদলে ৪ থাকলেই এ স্কোরেই ৩ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হতো স্কটল্যান্ডকে।

৫ উইকেট না হয়ে ৪ উইকেট হওয়ার কথা কেন আসছে? কথাটা টানতে হচ্ছে, কারণ স্কটল্যান্ডের পঞ্চম ব্যাটসম্যান রিচি বেরিংটন যে ভুল সিদ্ধান্তের শিকার! টপ স্কোরার বেরিংটনকে এলবিডব্লু দিয়েছেন আম্পায়ার। অথচ সে বল পঞ্চম স্টাম্পের লাইনে ছিল। ডিআরএসের ব্যবস্থা না থাকায় সে সিদ্ধান্ত পাল্টানো যায়নি।

স্কটল্যান্ডের সঙ্গে এমন অন্যায় আগের ম্যাচেও হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে আগের ম্যাচ জিতলেই বিশ্বকাপে চলে যেত স্কটিশরা। সে ম্যাচে আইরিশ ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি ব্যালবার্নিকে পরিষ্কার এলবিডব্লু দেননি আম্পায়ার। নতুন জীবন পাওয়া ব্যালবার্নি সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন, দলকেও জিতিয়েছেন। টানা দুই ম্যাচে এভাবে ভুল সিদ্ধান্ত বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে স্কটিশদের।

স্কটিশদের এমন দুর্ভাগ্য অবশ্য আয়ারল্যান্ডের কাজে লাগেনি। আজ জিম্বাবুয়ে নিজেদের ম্যাচ জিতলেই বিশ্বকাপের দুয়ারটা বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্বকাপে বরাবরই দুর্দান্ত খেলা আয়ারল্যান্ড কিংবা গত কয়েক বছর জিম্বাবুয়েকে নাকানি-চুবানি খাওয়ানো আফগানিস্তান কাল মাঠে নামবে শুধু আনুষ্ঠানিকতা মানতে। কারণ, ক্রিকেটের বিশ্বায়নের ব্রত নিয়ে নামা আইসিসি এবার ১০ দলের বিশ্বকাপ আয়োজন করছে।

২০০৭ বিশ্বকাপে ১৬টি দল খেলেছিল। সুপার এইটের কারণে অহেতুক লম্বা হওয়ায় সে ফরম্যাট ধোপে টেকেনি। ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা ১৪তে নেমে আসে। নতুন ফরম্যাটে ম্যাচসংখ্যা একটু কমলেও জমজমাট দুটি বিশ্বকাপ দেখা গিয়েছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া ১০ দলের সঙ্গে সহযোগী ৪ দলের অংশগ্রহণ টুর্নামেন্ট দুটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। দুই টুর্নামেন্টেই সেরা দুই ম্যাচের সঙ্গে জড়িত ছিল সহযোগী দেশগুলো। ফল? আইসিসি এমনই এক নিয়ম করল, যাতে ২০১৯ বিশ্বকাপে সহযোগী কোনো দেশই আর জায়গা করে নিতে না পারে!
সহযোগী দেশের কথা নাহয় বাদই থাক, সদ্য টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানও যে বিশ্বকাপে সুযোগ পাবে কি না সন্দেহ! যে খেলা টেস্ট খেলে ১২টি দেশ, সে খেলার বিশ্বকাপ হবে কিনা ১০ দলের! এভাবে ক্রিকেটকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে আইসিসি?

বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। মাত্র দুটি শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য বাছাইপর্ব আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক হিসেবে ইংল্যান্ডের জায়গা পাকাই ছিল। বাকি ৭ দল র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী আগেই জায়গা পাকা করে রেখেছিল।

আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান কিংবা অন্যান্য সহযোগী দলগুলো বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলারই সুযোগ পায় না। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর আফগানিস্তানকে নিয়মিত খেলতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি করে ওয়ানডে খেলাই তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন! আয়ারল্যান্ড সে তুলনায় ভাগ্যবান। ইংল্যান্ড সফরে যাওয়া দলগুলো মাঝেমধ্যে অনুশীলনের জন্য আয়ারল্যান্ডকে বেছে নেয় বলে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া দলগুলোর স্বাদ মাঝেমধ্যেই পেয়েছে তারা। কিন্তু বিশ্বকাপকে একদম হাতের নাগালে পেয়েও যেতে না পারা স্কটল্যান্ডের যে সৌভাগ্যও হয়নি। গত তিন বছরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচই ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ভরসা।

যেখানে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলারই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না দলগুলোকে, সেখানে তারা রেটিং বাড়াবে কীভাবে? আর রেটিং না বাড়াতে পারলে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগটাও তারা কীভাবে পাবে?

ফুটবল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কঠিন পরীক্ষা পার হতে হয় বলেই বিশ্বকাপ এতটা জমজমাট হয়ে ওঠে। সব কটি মহাদেশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় বলেই বিশ্বকাপের কয়েকটা সপ্তাহ পুরো বিশ্ব নির্ঘুম থাকে। এবারের বাছাইপর্বে যেমন অংশ নিয়েছে পুরো বিশ্বের ২১০টি দল! সবাই সমান সুযোগ পেয়েছে বাছাইপর্বে। র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কোনো সুরক্ষা দেয়নি। র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে থেকেও ওয়েলস আর চিলি বিশ্বকাপে জায়গা পায়নি।
এমনিতে তো আর ফিফা গর্ব করে বলতে পারে না, বিশ্বকাপ! সামনে দল আরও বাড়াচ্ছে ফিফা। ২০২৬ বিশ্বকাপে যেমন মূল পর্বে থাকবে ৪৮টি দল। সেখানে আইসিসি পরিধি আরও কমিয়ে আনছে। দশে মিলে আড্ডা জমানো যায়, বিশ্বকাপ নয়!