হঠাৎ কী সভা মাশরাফি-সাকিবদের?

তামিম-লিটনের ছবিটা বলে দিচ্ছে, সিনিয়র-তরুণ সব খেলোয়াড় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় একতাবদ্ধ। ছবি: প্রথম আলো
তামিম-লিটনের ছবিটা বলে দিচ্ছে, সিনিয়র-তরুণ সব খেলোয়াড় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় একতাবদ্ধ। ছবি: প্রথম আলো

প্রিমিয়ার লিগের কোনো ম্যাচ নেই, কোনো অনুশীলনও নেই। বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের মেলা বসল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ—জাতীয় দল কিংবা জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররাই শুধু নন; ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন—প্রায় সব ক্রিকেটার এক হলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে। উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল তৈরি হলো, হঠাৎ কিসের এ জরুরি সভা!

প্রায় দুই ঘণ্টার সভা শেষে খেলোয়াড়েরা জিমনেশিয়াম থেকে বের হলেন হাসিমুখে। কিন্তু সবার মুখে কুলুপ, কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে—যাকেই জিজ্ঞেস করা হয়, হাসিমুখে একটাই উত্তর, ‘সবাই গেট টুগেদার করে, ক্রিকেটারদের হয় না। আমরা সেটি করলাম। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সামনে আমরা একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করব। একটি পিকনিক করব আমরা।’
যতই ঠাট্টা-রসিকতা হোক, আলোচনা হয়েছে সিরিয়াস বিষয় নিয়েই। আলোচনায় অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের সূত্র ধরেই পরে জানা গেল, আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল ক্রিকেটার কল্যাণ সমিতি বা সংক্ষেপে কোয়াব। বর্তমানে বিসিবির অনেক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে খেলোয়াড়েরা একমত নন। তাঁদের স্বার্থ নিয়ে বিসিবির সঙ্গে আলোচনা করতে পারে যে সমিতি, সেই কোয়াব কতটা সক্রিয়, কতটা কার্যকর, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান ও সহসভাপতি খালেদ মাহমুদ। দুজনই বিসিবির পরিচালক। প্রশ্ন উঠেছে, খেলোয়াড়দের নিয়ে দর-কষাকষির জায়গায় কি কোয়াব আছে? যেখানে সংগঠনের দুই শীর্ষ ব্যক্তিই বোর্ডের সঙ্গে জড়িত! শুধু তা-ই নয়, সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল একজন কাউন্সিলর। এখন এটিকে যদি ‘অকার্যকর’ সংগঠন বলা হয়, সেটা কি খুব বাড়িয়ে বলা হবে?
বর্তমান ক্রিকেটাররাও কোয়াবের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। কোয়াবকে কার্যকর ও গতিশীল সংগঠনে রূপ দেওয়ার দাবি তাঁদের বহুদিনের। কোয়াবের বর্তমান সংগঠকেরা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই সাকিবকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছেন। কোয়াবকে কীভাবে নতুনভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে।
আজ সেই আলোচনা সভায় খেলোয়াড়েরা মন খুলেই নিজেদের সব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সভায় অংশ নেওয়া এক ক্রিকেটার বললেন, ‘বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনেক সময় খেলোয়াড়দের বিপক্ষে যায়। এসব নিয়ে কথা বলতে হলে একটি প্ল্যাটফর্ম লাগে। সেই প্ল্যাটফর্মটা হচ্ছে কোয়াব। কোয়াবকে আরও গতিশীল কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা বসেছিলাম। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারিশ্রমিক নিয়ে খেলোয়াড়দের অসন্তুষ্টি রয়েছে। এবার প্রিমিয়ার লিগে অনেকে পারিশ্রমিক ঠিকমতো পায়নি। খেলোয়াড়দের টাকা কমিয়ে দিয়ে বোর্ড প্লেয়ার বাই চয়েস করেছে। এটা করেও তো ঠিকমতো টাকা পাচ্ছি না। আমরা ট্যাক্স দিই, কিন্তু ট্যাক্স পরিশোধের কাগজ পাই না। ধরুন, একটি ক্লাবের সঙ্গে আমার চুক্তি ২০ লাখ টাকা। পারিশ্রমিকের ১০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। ক্লাব সেটি দিয়ে দেয় বলে দাবি করে অথচ কাগজ দেখায় না। প্লেয়ার বাই চয়েসে আপনি মনমতো দল পাবেন না। দল লিগে ভালো না করতে পারলে আবার ২৫-৩০ শতাংশ পারিশ্রমিক মার! ক্লাব কর্তৃপক্ষ তখন রেজাল্ট ভালো না হওয়ার দোহাই দেয়। দল তারা জেনে-বুঝে করেছে। খারাপ ফলের দায় কি শুধু খেলোয়াড়ের? এই যে অনিয়ম, এগুলোর প্রতিবাদ জানানোর কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই খেলোয়াড়দের। সে কারণে কোয়াবকে আমরা শক্তিশালী করতে চাই।’

সাকিব-সৌম্যদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছে, তাঁদের আলোচনাটা ফলপ্রসূ হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
সাকিব-সৌম্যদের হাসিমুখ বলে দিচ্ছে, তাঁদের আলোচনাটা ফলপ্রসূ হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

আলোচনা সভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোয়াবের একজন আইনি পরামর্শক ও অপারেশনস ম্যানেজার থাকবেন, যাদের প্রধান কাজ হবে খেলোয়াড়দের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বোর্ড কিংবা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া।
কোয়াবের বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছে চার বছর আগে। এই কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে শিগগিরই সাকিবদের সঙ্গে বসবেন বর্তমান কমিটির নেতারা। কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বললেন, ‘খেলোয়াড়দের আজ বসতে বলার প্রস্তাবটা আমাদেরই। তাদের বলেছি নিজেদের মধ্যে আগে কথা বলে নিতে। খেলোয়াড়েরা যেন মন খুলে নিজেদের সমস্যা বলতে পারে, সে কারণেই বসতে বলা। আমাদের সামনে হয়তো অনেকে মন খুলে কথা না–ও বলতে পারে। আমরা চাই, যেহেতু সংগঠনের ব্যাপ্তিটা বড়, সাবেক–বর্তমান সবাইকে নিয়ে কোয়াবের একটি গতিশীল কমিটি হোক।’