দিল্লিকে ভেলকি দেখালেন 'মি. ৩৬০ ডিগ্রি'

উইকেটের চারপাশেই দারুণ সব স্ট্রোক খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপি
উইকেটের চারপাশেই দারুণ সব স্ট্রোক খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স। ছবি: এএফপি
>
  • আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৭৪ রান তুলেছিল দিল্লি
  • ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জিতেছে বেঙ্গালুরু
  • বেঙ্গালুরুর হয়ে ৩৯ বলে ৯০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ডি ভিলিয়ার্স

১১তম ওভারে হর্শাল প্যাটেলের শেষ বলটা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে ফুলটস ছিল। দারুণ টাইমিং করেছিলেন বিরাট কোহলি। বলটা ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছুটছিল বুলেটের গতিতে। কিন্তু সীমানা থেকে ট্রেন্ট বোল্ট লাফিয়ে যে ক্যাচটা নিলেন, তাতে মাঠে সবার চক্ষু চড়কগাছ! 

কোহলি নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি এটা ক্যাচ হতে পারে! ভিডিও রিপ্লে দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর মাঠ ছেড়েছেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। তবে কোহলি ফিরে গেলেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। এবি ডি ভিলিয়ার্স তো ছিলেন। উইকেটের চারপাশেই বাহারি সব স্ট্রোকের পসরা সাজিয়ে দলকে ৬ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন এ প্রোটিয়া।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ উইকেটে ১৭৪ রান তুলেছিল দিল্লি। টি-টোয়েন্টিতে মোটামুটি লড়াকু সংগ্রহ। কিন্তু এই রান তাড়া করতে নেমে ৩ ওভার শেষে বেঙ্গালুরু ১ উইকেটে ১৫। দ্বিতীয় ওভারে মনন ভোহরাকে তুলে নেন দিল্লি স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কুইন্টন ডি ককও (১৮) দ্রুত ফিরে গেলে চাপে পড়ে বেঙ্গালুরু। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি জয়ের পথে ফেরায় বেঙ্গালুরুকে। তারপর ১১তম ওভারে বোল্টের সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচে কোহলি (২৬ বলে ৩০) ফিরলেও দিল্লি ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ডি ভিলিয়ার্স আসলে দিল্লিকে ফিরতে দেননি।
আইপিএলে এবার প্রথম দুই ম্যাচে ডি ভিলিয়ার্স রান পেয়েছিলেন। ৪৪ ও ৫৭ রানের দুটি ইনিংস। এরপর দুই ইনিংসে (২০ ও ১) রান না পাওয়ার জ্বালাটা কি জুড়ালেন দিল্লির বোলারদের কচুকাটা করে! সপ্তম ওভারে শাহবাজ নাদিমের শেষ তিন বলে টানা তিনটি চার মেরে শুরু করেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে রাহুল তেওতিয়াকে পাঠিয়েছেন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ছাদে! না, তেওতিয়া নন, তাঁর করা ডেলিভারিটা।
কোহলি আউট হওয়ার পর ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট আরও বেশি চওড়া হয়ে উঠেছিল। ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পথে ১৩তম ওভারে নিয়েছেন ১৭ রান। ১৫তম ওভারে ক্রিস মরিসের ডেলিভারিকেও পাঠিয়েছেন ছাদে। ডি ভিলিয়ার্সের এই অগ্নিমূর্তিতে শেষ ৩০ বলে বেঙ্গালুরু দাঁড়িয়ে ছিল ৩৫ রানের দূরত্বে। অথচ ডি ভিলিয়ার্স যে ওভারে (৫ম ওভার ) ব্যাটিংয়ে নামলেন, সেই ওভার শেষে বেঙ্গালুরু দাঁড়িয়ে ছিল ৯০ বলে ১৩৮ দূরত্বে।
কঠিন এ লক্ষ্যটা মামুলি হয়ে উঠেছে শুধু ডি ভিলিয়ার্সের খুনে ব্যাটিংয়ে। ঘরের মাঠ চিন্নাস্বামীতে দিল্লিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেলেই তাঁর ব্যাট বুঝি তলোয়ার হয়ে ওঠে! দিল্লির বিপক্ষে এর আগে এই মাঠে ৩৩ বলে ৫৫ ও ৪২ বলে ৬৪* রানের ইনিংস রয়েছে ডি ভিলিয়ার্সের। আজ নিজের ‘মি. ৩৬০ ডিগ্রি’ তকমার প্রতি সুবিচার করে স্ট্রোকের দ্যুতি ছড়িয়েছেন উইকেটের চারপাশেই। থার্ডম্যান, কভার, স্ট্রেট, মিড অন, মিড উইকেট, স্কয়ার লেগ—কোথায় স্ট্রোক খেলেননি!
১৮তম ওভারে দলের জয়ও এনেছেন শেষ দুই বলে চার মেরে। সব মিলিয়ে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় সাজানো ৩৯ বলে ৯০ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে ডি ভিলিয়ার্স দলকে জিতিয়েছেন ১২ বল হাতে রেখেই।
তার আগে দিল্লির সৌরভ ছড়িয়েছেন ঋষভ পান্ত ও শ্রেয়াস আয়ার। ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস। ঋষভ খেলেন ৪৮ বলে ৮৫ রানের দারুণ এক ইনিংস। এ দুজনের ব্যাটে ভর করেই লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছিল দিল্লি। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্সের দিনে তো যেকোনো স্কোরই অনিরাপদ!