সালাহই সেরা, ব্যালন ডি'অর তাঁরই পাওনা

মৌসুমে ৪৩ গোল করেছেন। গত রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমির প্রথম পর্বে রোমার বিপক্ষে করলেন জোড়া গোল। লিভারপুলের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা হাতছানি দিয়েই ডাকছে তাঁকে। ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের মতে, মোহাম্মদ সালাহ এখন ব্যালন ডি’অরেরই অন্যতম দাবিদার। সে জন্য অবশ্যই লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে হবে তাঁকে।

কী খেলাটাই না খেললেন মোহাম্মদ সালাহ। মিসরের এই ফরোয়ার্ডের দুর্দান্ত ফুটবলই তো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে রোমার বিপক্ষে ৫-২ গোলে জিতে ফাইনালের পথে অনেকটা পথই এগিয়ে দিয়েছে লিভারপুলকে। যদিও ৭৫ মিনিটে সালাহকে তুলে নেওয়ার পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ ‘অ্যাওয়ে গোলে’ একটা লাইফলাইন অন্তত আদায় করে নিয়েছে ইতালীয় ক্লাবটি।

মৌসুমজুড়ে সালাহর ৪৩ গোল হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে লিভারপুল জার্সিতে ইয়ান রাশের তিন দশকের রেকর্ড। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে এই ওয়েলশ ফুটবলার ৪৭ গোল করেছিলেন। মৌসুমের কিছুটা সময় বাকি থাকতে রাশকে যে সালাহ ধরে ফেলবেন না, সেটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে সেটি করতে পারলে লিভারপুলের ইতিহাসে রচিত হবে নতুন এক রূপকথা—মিসরীয় এক রাজকুমারের হাত ধরে।

ব্যালন ডি’অর ডাকছে মোহাম্মদ সালাহকে! ছবি: এপি
ব্যালন ডি’অর ডাকছে মোহাম্মদ সালাহকে! ছবি: এপি

আরও একটি দুর্দান্ত রেকর্ড অবশ্য সালাহ ঠিকই নিজের করে নিয়েছেন। গত রাতে রোমার বিপক্ষে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোলে প্রথম লিভারপুল ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০ গোল করার কীর্তি নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তবে ব্রাজিলীয় সতীর্থ রবার্তো ফিরমিনহো সালাহকে এই গর্ব একা বেশিক্ষণ উপভোগ করতে দেননি। ৬৮ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেই তাঁর সঙ্গে ব্রাকেটবন্দী হয়েছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের হয়ে ১০ গোল করা ফুটবলার এখন দুজন—সালাহ ও ফিরমিনহো। এক মৌসুমে একই দলের দুই খেলোয়াড়ের ১০ গোল করার কীর্তিও এটি মাত্র দ্বিতীয়বার, এর আগে বার্সেলোনার হয়ে যেটি করেছিলেন মেসি ও নেইমার।

কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের কণ্ঠে গত রাতের সংবাদ সম্মেলনজুড়ে ছিল সালাহর প্রশংসা। তিনি এই মিসরীয়কে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলারই বলছেন। তবে একই সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন কিছু শর্তও, ‘কোনো সন্দেহ নেই, সালাহ যেভাবে খেলছে, তাতে এই মুহূর্তে তাকে বিশ্বসেরা ফুটবলার বলা যেতেই পারে। আপনারাও যদি তাই ভাবেন, সেটা বলতেও পারেন, লিখতেও পারেন। তবে তাকে সবাই বিশ্বসেরা হিসেবে পুরোপুরি মেনে নেবে, যদি সে এই খেলাটা নিয়মিত ও দীর্ঘদিন ধরে খেলতে পারে।’

এদিকে সাবেক ইংল্যান্ড ও চেলসি মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড সবাইকে ছাপিয়ে সালাহর হাতে দেখছেন ব্যালন ডি’অরই। তাঁর মতে, বিশ্বসেরা ফুটবলারের এই পুরস্কারে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বড় এক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন সালাহ। তবে এ জন্য লিভারপুলকে অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে হবে এই মিসরীয় তারকার, ‍‘পিএফএর বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়ার পর সালাহ এখন নিজেকে ব্যালন ডি’অরের অন্যতম প্রার্থীতে পরিণত করেছে। তবে এটা ঠিক, মেসি ও রোনালদোকে ডিঙিয়ে এই পুরস্কার পাওয়াটা তার জন্য কঠিনই হবে। তবে মেসি ও রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু ও হয়েই গেছে। আরও অনেক কীর্তিই তাকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। তবে সে যদি লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে পারে, তাহলে ব্যালন ডি’অর পাওয়ার একটা সম্ভাবনা কিন্তু তৈরি হবে।’

মেসি ও রোনালদোর দখলেই গত ১০ বছরের বর্ষসেরার ট্রফিটা। সেটি এবার সালাহর দখলে যাবে কি না, সময়ই বলে দেবে। অন্তত যেভাবে খেলছেন, যেন ভিডিও গেম! এত নিখুঁত ছিল কাল সালাহর প্রতিটা মুহূর্ত। কি গোল করায়, কি গোল করানোতে। বলের ওপর পা রেখে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার সেই ড্রিবলিং তো লাখ লাখবার দেখা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। কিংবা তাঁর প্রথম গোলটি? প্রতিটা ইঞ্চি যেন মাপা ছিল সেই গোলে।

ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে এই মৌসুমে গোলের লড়াইয়ে সালাহ কালকেই সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন। তাঁর ৪৩ গোল, রোনালদোর ৪২টি, সিরো ইম্মোবিলের ৪১ আর মেসির ৪০। মানতে হবে, এর মধ্যে সালাহর কাজটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন লিগে যে খেলেন, যেখানে প্রতিটা গোল আদায় করে নিতে ঘাম ছুটে যায়।

ফলে ল্যাম্পার্ড বা ক্লপ যত কূটনৈতিক ভাষাতেই বলুন, কাল এক টিভি চ্যানেলের বিশেষজ্ঞ হয়ে হাজির হওয়া লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড কোনো রাখঢাক করলেন না। সরাসরি বললেন, ‘বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলারের নাম মোহাম্মদ সালাহ।’