ধোনির দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে কোহলির বেঙ্গালুরুর হার

দলের জয় তুলে নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ধোনি। ছবি: এএফপি
দলের জয় তুলে নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ধোনি। ছবি: এএফপি
>
  • আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২০৫ রান তোলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু
  • তাড়া করতে নেমে ২ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে চেন্নাই
  • ছক্কা মেরে জয় তুলে নেন চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি

ভারতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কের লড়াই। একজন ম্যাচে চাপ বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাথা ঠান্ডা রাখেন। আরেকজন অমিত প্রতিভাধর হলেও কিছুটা আবেগপ্রবণ। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এই দুই রকম মনোজগতের দুই বাসিন্দার লড়াইয়ে শেষ হাসিটা ঠান্ডা মাথার মানুষটি—মহেন্দ্র সিং ধোনি। অন্যদিকে, দুই শতাধিক রানের পুঁজি নিয়েও জিততে না পারার হতাশা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু অধিনায়ক বিরাট কোহলির।
এবারের আইপিএলে দুই শতাধিক রান তাড়া করে জয়ের (কলকাতার বিপক্ষে) প্রথম নজির গড়েছিল ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। দলটি আজ তা দ্বিতীয়বারের মতো করে দেখাল। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ২০৫ রান তুলেছিল বেঙ্গালুরু। তাড়া করতে নেমে ২ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় চেন্নাই। ১ চার ও ৭ ছক্কায় ৩৪ বলে ৭০* রানের দারুণ এক ইনিংসে দলের জয় তুলে নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি।
তবে বড় রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাইয়ের টপ অর্ডার শুরুতে ঠিক ছন্দে ছিল না। বেঙ্গালুরু স্পিনার পবন নেগির করা প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ছক্কা মেরে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন চেন্নাই ওপেনার শেন ওয়াটসন। কিন্তু পরের বলেই ওয়াটসনকে ফেরান নেগি। ৯ ওভারের মধ্যে সুরেশ রায়না (১১), স্যাম বিলিংস (৯) ও রবীন্দ্র জাদেজা ফিরে গেলে চাপে পড়ে চেন্নাই। দলটির স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৭৪।
উইকেট পড়ার সঙ্গে রানের গতিও মন্থর হয়ে আসছিল। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন আম্বাতি রাইডু ও ধোনি। ওয়াটসন-রায়নারা দ্রুত ফিরলেও ওপেন করতে নেমে একপ্রান্ত ধরে রেখেছিলেন রাইডু। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৭১ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। কোরি অ্যান্ডারসনের করা ১৬তম ওভারে ধোনি-রাইডু মিলে ১৬ রান নেন। এই ওভারে রাইডুর ক্যাচ ফসকান বেঙ্গালুরু পেসার উমেশ যাদব। রাইডুর দুর্ভাগ্য ‘জীবন’ পেলেও দুর্দান্ত ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে সেই যাদবেরই সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হন রাইডু (৫৩ বলে ৮২)।
জিততে হলে শেষ দুই ওভারে চেন্নাইকে ৩০ রান করতে হতো। ১৯তম ওভারে মোহাম্মদ সিরাজ তিনটি ওয়াইড সহ মোট ১৪ রান দেওয়ায় শেষ ওভারে লক্ষ্যটা নেমে আসে ১৬ রানে। অ্যান্ডারসনের করা এই শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে লক্ষ্যটা ১২ রানে নামিয়ে আনেন ডোয়াইন ব্রাভো। পরের বলেই ছক্কা! এরপর ১ রান নিয়ে ব্রাভো প্রান্ত বদলের পর চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করেন ধোনি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পঞ্চম ওভারে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে (১৮) হারায় বেঙ্গালুরু। এরপরই এবি ডি ভিলিয়ার্স ঝড়ের শুরু। কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৫৩ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়েন ডি ভিলিয়ার্স। দুজনের এই জুটিতে ভর করেই মূলত দুই শতাধিক রানের সংগ্রহ পায় বেঙ্গালুরু। শেষ দিকে ১৭ বলে ৩২ রান করেন মন্দীপ সিং। তবে বেঙ্গালুরুর স্কোর আরও বড় হতে পারত, যদি দুটি মেডেন ওভার আর শেষ ওভারে ৩টি উইকেট না পড়ত।
বেঙ্গালুরুর ইনিংসটা বেশ অদ্ভুতুড়ে। ম্যাচের একটা সময়ে চেন্নাইয়ের বোলারেরা আধিপত্য ছড়িয়েছেন। অন্য সময়ে বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানেরা। তার মধ্যে ডি ভিলিয়ার্সের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। আগের ম্যাচেই ৩৯ বলে ৯০* রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই প্রোটিয়া। সেই ফর্মটা তিনি টেনে এনেছেন চিন্মাস্বামী স্টেডিয়ামেও।
৪.২ ওভারে কোহলি (১৮) আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ১৫তম ওভারে ইমরান তাহিরকে উইকেট দেওয়ার আগে খেলেছেন ৩০ বলে ৬৮ রানের খুনে ইনিংস। ব্যাটিংয়ে নেমে পরের ওভারেই হরভজন সিংকে বেধড়ক পিটিয়ে তুলেছেন ১৬ রান। ১১তম ওভারে ইমরান তাহিরের কাছ থেকে নিয়েছেন ১৫। এর মধ্যে তাহিরের চতুর্থ ডেলিভারিকে পাঠিয়েছেন স্টেডিয়ামের বাইরে। আর ১৩তম ওভারে শার্দুল ঠাকুরের প্রথম তিন বলে মেরেছেন তিন ছক্কা! ২ চার ও ৮ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ডি ভিলিয়ার্স। ৩৭ বলে ৫৩ রান করা কুইন্টন ডি ককও দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তাঁকে।