বাইশ গোল করেও 'মারাকানাজ্জো' দুঃখ

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হারের পর ব্রাজিল অধিনায়ক অগাস্তোকে সমবেদনা জানাচ্ছেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রক মাসপোলি। ১৯৫০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ব্রাজিল। ছবি: টুইটার
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হারের পর ব্রাজিল অধিনায়ক অগাস্তোকে সমবেদনা জানাচ্ছেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রক মাসপোলি। ১৯৫০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ব্রাজিল। ছবি: টুইটার
>

বিশ্বকাপ, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের পর্দা ওঠার আর মাত্র ২২ দিন বাকি। দুরু দুরু বুকে ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষণগণনা শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়। শুরু হয়েছে প্রথম আলো অনলাইনেরও ‘কাউন্ট ডাউন’। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে ক্ষণগণনা নিয়ে একটি বিশেষ রচনা থাকছে। আজ থাকছে ‘২২’ সংখ্যাটি নিয়ে

গুইলার্মো স্তাবিলকে মনে আছে? সেই যে প্রথম বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১৯৩০ সালের টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ৮ গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ জিতেছিলেন আর্জেন্টিনার এই সাবেক ফরোয়ার্ড। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ম্যাচপ্রতি গড়ে দুই গোল করাটা মোটেও খেলো বিষয় না। পরের টুর্নামেন্টগুলোয় তা প্রমাণও হয়েছে।

স্তাবিল এক টুর্নামেন্টেই ৮ গোল করেছিলেন। তা টপকাতে অনেক তারকা ফুটবলারকে বিশ্বকাপে একের অধিক টুর্নামেন্ট খেলতে হয়েছে। দু-একজন আবার এক টুর্নামেন্টেই আটের বেশি গোল করেছেন। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে গুইলার্মো স্তাবিলের চেয়ে বেশি গোল করতে পেরেছেন ২২ জন। এর মধ্যে ৯ গোল করেছেন ৯ জন খেলোয়াড়, ১০ গোল করেছেন ৬ জন। বাকি ৭ খেলোয়াড়—ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান (১১), স্যান্ডর ককসিস (১১), পেলে (১২), জাস্ট ফন্টেইন (১৩), গার্ড মুলার (১৪), রোনালদো (১৫) ও মিরোস্লাভ ক্লোসা (১৬)।

১৯৫০ বিশ্বকাপ মানেই ‘মারাকানাজ্জো’র সেই স্মৃতি। শিরোপানির্ধারণী ম্যাচটা খেলার আগেই গোটা ব্রাজিল জানত, তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে! সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছিল দেশটিতে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের উৎসব মাটি করে দিয়েছিল উরুগুয়ে। অবশ্য ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের দোষ দেওয়া যায় না। গোটা টুর্নামেন্টে ব্রাজিলই ছিল সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল। অংশ নেওয়া সব কটি দলের মধ্যে ব্রাজিলের গোলসংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি (২২)। আর সেই টুর্নামেন্টে ম্যাচসংখ্যাও ছিল ২২।

টনি মিওলা স্তাবিলের মতো কিংবদন্তি গোছের কেউ ছিলেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ গোলরক্ষক বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটি জায়গায় অনন্য। ১৯৯০ বিশ্বকাপে সাবেক চেকোশ্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে দেশের নেতৃত্ব দেন মিওলা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের রেকর্ড গড়েন তিনি। তখন মিওলা কেবল ২২ বছরে পা রেখেছেন।

বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার পথটা বেশ লম্বা। তবে কতটা লম্বা, তা এবার টের পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে উঠতে ‘সকারুজ’দের পাড়ি দিতে হয়েছে ২২ ম্যাচের দীর্ঘ পথ। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে সুইজারল্যান্ডের পারফরম্যান্স শ্রেয়তর। বিশ্বকাপে মিনিটের হিসাবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় গোল না খাওয়ার রেকর্ডটি কিন্তু সুইসদের। ৫৫৯ মিনিট তারা কোনো গোল হজম করেনি (১৯৯৪, ২০০৬, ২০১০)। আবার বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে ন্যূনতম এক গোল করে হজমের রেকর্ডও সুইসদের। টানা ২২ ম্যাচ (১৯৩৪-১৯৯৪)।

সাধারণত মে, জুন কিংবা জুলাইয়ে মাঠে গড়িয়ে থাকে বিশ্বকাপ। এ পর্যন্ত কুড়িটি টুর্নামেন্টে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে এই অলিখিত নিয়ম মানা হবে না। উষ্ণ জলবায়ুর কারণে সেখানে বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে নভেম্বরে। আর এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে একবিংশ শতকের ২২তম বছরে।