বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখছে যে মুহূর্তগুলো

চার বছর পর আবারও তর্ক–বিতর্কে মেতেছেন ফুটবল–ভক্তরা। পছন্দের দলটির জার্সি জড়িয়েছেন নিজেদের গায়ে। শুধু তা–ই নয়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানিসহ নানান দেশের পতাকায় ছেয়ে গেছে শহুরে আকাশ। আর যে বেশি সময় হাতে নেই। রাশিয়ায় আজ শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপের ২১তম আসর। ইতিমধ্যেই ঘড়ি নিয়ে ক্ষণগণনা শুরু করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবে কিছুক্ষণের জন্য একটু পিছিয়ে গেলে কেমন হয় বলুন তো? চলুন এক নজরে বিশ্বকাপ ইতিহাসের কিছু মুহূর্ত দেখে আসা যাক, যেগুলো ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ঘিঘিয়ার গোল
১৯৫০ বিশ্বকাপে সবাই ধরেই নিয়েছিল, এবারের শিরোপাটি ব্রাজিল জিততে যাচ্ছে। ফাইনাল ম্যাচে যদি কোনো ফলাফলও না হতো, তবু শিরোপাটি শেষমেশ ব্রাজিলের হাতেই উঠত। কিন্তু উরুগুয়ের ঘিঘিয়া তা আর হতে দিলেন কই। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে গোল করে ২-১–এ এগিয়ে নিলেন উরুগুয়েকে। সেই সঙ্গে দ্বিতীয়বার এবং শেষবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপাটি ঘরে উঠেছিল উরুগুয়ের।

ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়
জন্মদাতা ইংল্যান্ড হলেও ফুটবলীয় সাফল্যে অনেক পিছিয়ে তারা। তবু ভাগ্যিস, ১৯৬৬ বিশ্বকাপটা জিতেছিল তারা। ফাইনালেও পৌঁছেছে সেই একবারই। ভাগ্যিস, ববি মুর সেবার জিতিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। মুরের এই ছবিটাও তাই ঐতিহাসিক হয়ে আছে।

পেলের গোল উদ্‌যাপন
১৯৭০ বিশ্বকাপটি ব্রাজিল এবং পেলে উভয়ের জন্যই ছিল তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়। তবে ফাইনাল ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে গোল করার পর এমন বাঁধভাঙা উল্লাসের আরেকটি কারণ কিন্তু ছিল। গোলটি ছিল ব্রাজিল দলের ১০০তম গোল। আর তা পেলের পায়ের ছোঁয়ায় হওয়াতেই এমন উল্লাস।

তারদেল্লির দৌড়
১৯৮২ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির সঙ্গে তারদেল্লির গোলেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইতালি। ম্যাচের মাত্র ২১ মিনিট বাকি থাকায় বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল দেশটি। আর তাই গোল করেই পুরো মাঠ দৌড়ে বেড়িয়েছিলেন ইতালিয়ান এই খেলোয়াড়। শেষে ৩-১ ব্যবধানে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল ইতালি।

ঈশ্বরের হাত
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল করাটা এখনো ব্রাজিলিয়ান ও ইংলিশ ভক্তদের মূল আলোচনা। ম্যারাডোনা অবশ্য মানতে রাজি নন, তিনি হাত দিয়ে গোল করেছেন। এই কিংবদন্তির দাবি, তাঁর হয়ে ঈশ্বরই গোল করিয়েছেন!

ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়
১৯৮৬ বিশ্বকাপটি এখনো আর্জেন্টাইনদের জন্য স্মরণীয়, আর ম্যারাডোনার জন্য তো বটেই। এই বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই মূলত পাকাপোক্তভাবে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ম্যারাডোনা।

থুতু নিক্ষেপের খেলা
ফাইনাল ম্যাচ ছিল না, তবু ম্যাচে উত্তাপের কমতি ছিল না সেদিন। বলছি ১৯৯০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের নেদারল্যান্ডস-জার্মানি ম্যাচটির কথা। সে ম্যাচে বেশ কিছুবার নেদারল্যান্ডসের ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের সঙ্গে তর্কে জড়ান জার্মান ফরোয়ার্ড রুডি ভলার। একপর্যায়ে খেলা চলাকালীন সময়েই একে অপরকে থুতু ছোড়াছুড়ি শুরু করেন। পরে অবশ্য দুজনই লাল কার্ড পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান।

রজার মিলার সেই নৃত্য
১৯৯০–এর বিশ্বকাপে রজার মিলা ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়। তবে বয়সের ভাঁড়ে নুয়ে যাওয়ার মতো খেলোয়াড় নন তিনি। বিশ্বকাপজুড়ে চারটি গোল করেছিলেন সেবার। আর প্রতিটি গোল করার পর এমনই নাচের দৃশ্যে তাঁকে দেখেছিলেন সবাই।

বেবেতোর গোল উদ্‌যাপন
১৯৯৪ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার বেবেতোর গোল উদ্‌যাপনটা এখনো সবার চোখে ভাসে। গোল করেই বাচ্চা কোলে নেওয়ার ভান করে উদ্‌যাপন করতেন, সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই।

১৯৯৪ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের জয়
১৯৯৪ বিশ্বকাপটি ব্রাজিলিয়ানদের জন্য ছিল চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়। ম্যাচের পুরো সময় ইতালির সঙ্গে গোলশূন্য থাকায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পরে ব্রাজিল ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতে নেয়।

রশিদী ইয়েকিনীর বুনো উল্লাস
১৯৯৮ এর বিশ্বকাপটি নাইজেরিয়ানদের জন্য ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। তবে নাইজেরিয়ার খেলা দেখে মনেই হয়নি তারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রেখেছে। প্রথম ম্যাচেই বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় পায় নাইজেরিয়া। সে ম্যাচে গোল করার পরই রশিদী ইয়েকিনির এমন উল্লাস।

জিদানের ঢুস
বোন নিয়ে গালি দেওয়ায় রেগে গিয়ে মার্কো মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরেছেন ফ্রেঞ্চ কিংবদন্তি জিনেদিন জিদান। ২০০৬ বিশ্বকাপের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে আছে এটি।

জিদানের লাল কার্ড
২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে লাল কার্ড পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন জিনেদিন জিদান। অসাধারণ এক ক্যারিয়ারের অবিশ্বাস্য পরিণতি! জিদানের মাঠ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ের আশাও ছাড়তে হয়েছিল ফ্রান্স–ভক্তদের।