পৃষ্ঠাটা উল্টে রেখেছেন চেরচেশভ

একদিকে রাশিয়ার জয়োল্লাস, আর অন্যদিকে সৌদি আরবের হতাশায় ভেঙে পড়া। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের সেরা বিজ্ঞাপন তো এটিই। ছবি: রয়টার্স
একদিকে রাশিয়ার জয়োল্লাস, আর অন্যদিকে সৌদি আরবের হতাশায় ভেঙে পড়া। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের সেরা বিজ্ঞাপন তো এটিই। ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের আগে কেউ যদি স্তানিস্লাভ চেরচেশভকে বলতেন, রাশিয়া এক গোলে জিতবে, তাঁকে হয়তো বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতেন। আর শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে কি না ৫-০ গোলে উড়ে গেল সৌদি আরব। ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টে দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে উদ্বোধনী ম্যাচে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম জয়। সেই ৮৪ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রকে ৭-১ গোলে হারিয়ে বৃহত্তম জয়টি তুলে নিয়েছিল ইতালি।

মধুরতম অনুভূতির নাম জয়, আর সেটি যদি হয় এমন বিধ্বংসী জয়, যেকোনো কোচই আনন্দে ভেসে যাবেন। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের চেয়ারে বসে রাশিয়ার কোচকে দেখে মনে হলো তাঁর মনের মধ্যে দুকুল উপচানো আনন্দ। তবে এমন জয়টাও তাঁর কাছে কি না ঘটে যাওয়া অতীত। বললেন, পৃষ্ঠাটা তিনি উল্টে রেখেছেন। এখন পড়বেন পরের পৃষ্ঠাটা, সেই পৃষ্ঠায় রয়েছে ১৯ জুনের মিসর ম্যাচ। কারণ তিনি ভোলেননি গত বছরের কনফেডারেশনস কাপের স্মৃতি। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েও ওই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারেনি স্বাগতিক দল।

চেরচেশভের মুখে হাসির ঝরনা, ওদিকে সৌদি আরবের কোচ আন্তোনিও পিজ্জির এখন চাকরি নিয়েই চিন্তা। গ্রুপের বাকি দুটি ম্যাচের দলের দায়িত্ব তাঁর হাতে থাকে কি না সেই চিন্তা কিন্তু একটু হলেও আর্জেন্টাইন কোচকে পেয়ে বসেছে! এ নিয়ে একটি প্রশ্ন উঠল সংবাদ সম্মেলনে। প্রশ্নকর্তার দিকে এক পলক তাকিয়ে স্প্যানিশ ভাষায় বললেন, খুব ভালো প্রশ্ন।

প্রশ্নটা খুব ভালো না হলেও দলটি যেহেতু সৌদি আরব, সে জন্য সেটির মধ্যে সারবত্তা কিছু থাকে। বার্ট ফন মারউইক সৌদি আরবকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিয়ে থাকতে পারেননি। ২০১০ বিশ্বকাপে হল্যান্ডকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া ডাচ কোচকে আরেকটি চাকরি জুটিয়ে নিতে সমস্যা অবশ্য হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ডেকে নিয়েছে তাঁকে। এই বিশ্বকাপে তিনিও আছেন। ফন মারউইকের পর সৌদি আরবে আসেন এদগার্দো বাউজা। তাঁকেও সৌদি আরব থেকে চলে যেতে হয়েছে, কেননা দলকে ক্ষুরধার করে তুলতে পারেননি।

অবশেষে চিলিকে ২০১৬ শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকা জেতানো এই আর্জেন্টাইনের আগমন সৌদি আরবের। আর সেই কোচের হাতেই কি না পেতে হলো ৫-০ গোলের লজ্জা। ফিফার প্রেসিডেন্টের বক্সে ম্যাচের শেষ দিকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ধরল ক্যামেরা, তাঁর মুখে পরিষ্কার বিব্রতকর অভিব্যক্তি। পিজ্জির কাছে ওই সাংবাদিকের প্রশ্নটা ভালো না লাগুক গুরুত্বপূর্ণ মনে তো হয়েছেই।

দুই কোচের দুই রকম অভিব্যক্তির মাঝে ম্যান অব দ্য ম্যাচ দেনিস চেরিশেভের অভিব্যক্তিকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। বদলি নেমে কী অসাধারণ দুটি গোলই না তিনি করেছেন। যোগ করা সময়ে দলের চতুর্থ গোলটি নিয়ে নিজেও অভিভূত ভিয়ারিয়ালের মিডফিল্ডার, ‘এ রকম গোল করতে পারব, আমি নিজেই তো সেটি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি।’

চেরিশেভের স্বপ্ন এখন বাস্তব। আর রাশিয়া চেরিশেভদের নিয়েই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নতুন করে। ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা পরও লুঝনিকি স্টেডিয়ামে আলোর নাচন কমেনি। চারদিকে উজ্জ্বল আলো। স্বেচ্ছাসেবক আর বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের মধ্যে আনন্দের স্ফুরণেও সেটা বোঝা যাচ্ছে।