আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিতে সাইকেলে করে রাশিয়া

মস্কোর রেড স্কয়ার লাগোয়া নিকোলস্কায় সড়ক। এই সড়কে মূলত পর্যটকদের আনাগোনা থাকে বারোমাসই। বিশ্বকাপের কারণে এখন সেখানে ভিড়ভাট্টা একটু বেশি। বিদেশি ফুটবল-ভক্তদের পদচারণই বেশি চোখে পড়ল।

বুধবার বিকেলে রেড স্কয়ারকে পেছনে ফেলে নিকোলস্কায় সড়ক ধরে পাতালরেলের দিকে কিছুটা হেঁটে যেতে একটা জটলা দেখে কাছে এগিয়ে গেলাম। চারদিক থেকে সবাই গোল করে দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে একটা সাইকেলের পেছনে দাঁড়ানো লোকের সঙ্গে একে একে সবাই ছবি তুলছেন। আশপাশের রুশদের কথা শুনেই ঝটপট বুঝে ফেললাম, ভদ্রলোকের নাম আমাইয়া মাতিয়াস। তিনি আর্জেন্টিনার নাগরিক এবং সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরের শহর সান জুয়ান। আর্জেন্টিনার দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলীয় ওই শহরে বেড়ে ওঠেন আমাইয়া মাতিয়াস। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই আর্জেন্টিনার নাগরিক মূলত বাইসাইকেল পর্যটক হিসেবে সে দেশে একনামে পরিচিত। ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলকে সমর্থন জানাতে বাইসাইকেলে ব্রাজিল ভ্রমণ করেছিলেন। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে বাইসাইকেলে চড়েই সুদূর সান জুয়ান থেকে মস্কো আসেন মাতিয়াস।

বাইসাইকেলে চড়ে রাশিয়া আসার যাত্রা মাতিয়াসের শুরু হয় আরও পাঁচ বছর আগে। মূলত বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে রাশিয়ার নাম ঘোষণার পরেই এই বিশ্বভ্রমণের জন্য নিজেকে তৈরি করেন তিনি। এই পাঁচ বছর শুধু সাইকেলই চালিয়েছেন। উদ্দেশ্য—রাশিয়া বিশ্বকাপে পৌঁছানো এবং প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে উৎসাহ দেওয়া। গত পাঁচ বছরে তিনি সাইকেলে চড়ে ৩৭টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং অতিক্রম করেছেন ৮০ হাজার কিলোমিটার।

আর্জেন্টিনার নাগরিক আমাইয়া মাতিয়াস সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
আর্জেন্টিনার নাগরিক আমাইয়া মাতিয়াস সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো

মাতিয়াসের সাইকেলটি এবার ভালো করে দেখে নিলাম। পেছনের সিটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও শহরের পতাকার যেন একটা মেলা। আর সামনে ও পেছনের চাকার সঙ্গে রয়েছে ছোট প্লাস্টিকের ড্রাম। শুকনো খাবার আর পানি ধরে রাখতে সেটি ব্যবহার করেন তিনি। হ্যান্ডেলের পাশে রাখা আছে একটা স্মার্টফোন। পথ চিনতে জিপিএস নেভিগেশনের সাহায্য নিতে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেন।

মাতিয়াস ইংরেজি বলতে পারেন না, তাই দোভাষীর সাহায্য নিয়ে তাঁর বিশ্বভ্রমণের গল্প জানতে হলো। সাইকেলের সামনে রাখা একটা বিশ্ব মানচিত্র দেখিয়ে স্প্যানিশ ভাষায় প্রথম আলোকে মাতিয়াস বলেন, ‘আর্জেন্টিনার শহর থেকে প্রথমে সড়কপথে বাইসাইকেল চালিয়ে পানামায় পৌঁছাই। সেখান থেকে বিমানে চেপে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাই স্পেনে। আর স্পেন থেকে প্রায় দুই বছর লেগেছে আমার রাশিয়ায় পৌঁছাতে।’

ইংরেজি না জানায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে মাতিয়াস বলেন, ‘বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। রাশিয়ার সীমান্তে প্রবেশের পর যখন রুশরা জানতে পারলেন, আমি শুধু বিশ্বকাপের জন্যই সাইকেলে চড়ে রাশিয়ায় এসেছি, তখন সবাই খুব অবাক হয়েছেন। অনেকেই রুবল ও খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। সবার কাছ থেকেই ভালোবাসা পেয়েছি।’

মাতিয়াসকে এরপর বললাম বাংলাদেশের কথা, বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার ফুটবল-ভক্তদের কথা। মাতিয়াস জানালেন, রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে তিনি এশিয়া ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বেন এবং এশিয়ার যে দেশগুলোতে তিনি যাবেন, সেই তালিকায় নাকি বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা-সমর্থকদের তাই ভাগ্য ভালো হলে মাতিয়াসের সঙ্গে দেখা হয়েও যেতে পারে।