বিদায়ঘণ্টা বাজছে আর্জেন্টিনার

বিশ্বকাপটা কী দীর্ঘশ্বাসই হয়ে থাকবে মেসির কাছে? ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপটা কী দীর্ঘশ্বাসই হয়ে থাকবে মেসির কাছে? ছবি: রয়টার্স
নোভগোরাদে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। ৫৩ মিনিটে রেবিচের গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ৮০ মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করেন লুকা মডরিচ। ৯০ মিনিটে যোগ করা সময়ে রাকিতিচের গোলে ক্রোয়েশিয়া জিতল ৩-০ ব্যবধানে।

উইলি কাবায়েরো এটা কী করলেন! ডাগ আউটে বিমর্ষ হোর্হে সাম্পাওলি, ভিআইপি গ্যালারিতে বসা হতবাক ডিয়েগো ম্যারাডোনা, নির্বাক নিযুত-কোটি আকাশি-সাদা সমর্থক। আন্তে রেবিচ সামনে দাঁড়িয়ে অথচ শিক্ষানবিশের মতো বল পাস করতে গেলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো। এই ভুল ক্ষমার নয়, চড়া মূল্য দিতে হলো আর্জেন্টিনাকে।

৫৩ মিনিটে রেবিচের গোলে এগিয়ে যাওয়া ক্রোয়েশিয়া আর্জেন্টিনার দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে আবারও চেপে ধরল। ৮০ মিনিটে মডরিচের দুর্দান্ত ফিনিশিং কার্যত সব আশা কেড়ে নিল আর্জেন্টিনার। ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিলেন ইভান রাকিতিচ!

লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন এমনকি পরে পাওলো দিবালাকেও নামালেন সাম্পাওলি। বিশ্বের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগ নিয়েও ক্রোয়েশিয়ার জাল বল পাঠাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। পারবে কীভাবে? বলটা তো আসতে হবে মিডফিল্ড থেকে। মিডফিল্ড বল সরবরাহ করতে পারেনি, সঙ্গে অতি দুর্বল রক্ষণ, ছন্নছাড়া এই আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতবে কী, একটার পর একটা গোল খেতেই থাকল! আর এতে রাশিয়া বিশ্বকাপের বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করল গতবারের রানার্সআপদের। আর টানা দুই ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় পর্ব নিশ্চিত ক্রোয়েটদের।

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্রয়ের পর আজ তীব্র চাপ নিয়ে নোভগোরাদে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। সেই চাপ কতটা, জাতীয় সংগীতের সময় মেসির চিন্তিত মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভাঙতেই পারল না আকাশি-সাদারা। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও আর্জেন্টিনা–সমর্থকেরা তাকিয়ে ছিল মেসির দিকে। ১২ মিনিটে ভেসে আসা বলটায় পা ছোঁয়াতে পারলেন না আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। কয়েকটি ‘হাফ চান্স’ হাতছাড়ার আফসোস দূর করার কী সুযোগটাই না পেলেন এনজো পেরেজ। আজ প্রথম একাদশ থেকেই তাঁকে খেলিয়েছেন সাম্পাওলি। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন কই? ৩০ মিনিটে অরক্ষিত গোলপোস্টেই বল পাঠাতে পারলেন না আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপের মতো এই বড় মঞ্চে এমন সুযোগ কি বারবার আসে?

দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনা তেমন সুযোগই পায়নি। যা পাওয়ার ক্রোয়েশিয়াই পেয়েছে। পেয়েছে বলতে ৫৩ মিনিটে কাবায়েরোর ওই উপহার। শিশুতোষ ভুল বললেও যেন কম বলা হয়। কাবায়ের ওই ভুলে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে আরও যেন ভেঙে পড়ে আর্জেন্টিনা । গোল শোধের চেষ্টায় চিড় ধরে রক্ষণেও। সেই ফাটলের সুযোগেই বক্সে নিজের মতো জায়গা করে নিয়ে নিল মডরিচের দুর্দান্ত ফিনিশিং। এই ম্যাচে ফিরবে কী, বাকি ১০ মিনিট যেন নিঃসাড় হয়ে পড়ল আর্জেন্টিনা! জালে বল পাঠানো দূরে থাক, ক্রোয়েটদের রক্ষণে ঢোকার শক্তিটাই যেন ততক্ষণে তারা হারিয়ে ফেলেছে। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে খেলা করার এই সুযোগ ক্রোয়েশিয়া হাতছাড়া করবে কেন? বার্সা–সতীর্থ ও বন্ধু মেসিকে আরও হতাশায় পোড়াতে শেষ মুহূর্তে রাকিতিচও একটা গোল দিলেন।

ক্রোয়েশিয়ার কাছে যে গোল অতি সহজ হয়ে দাঁড়াল, আর্জেন্টিনার কাছে সেটাই কঠিন, অতি কঠিন! মেসির জাদু দেখার অপেক্ষায় ছিল কত চোখ। প্রতিপক্ষের রক্ষণ কাঁপিয়ে তুলবেন কী, বলে পা-ই ছোঁয়ালেন কবার—গুনে বলে দেওয়া যায়। বলের অভাবে ডান প্রান্তে কখনো কখনো ছোট ছোট পায়ে হেঁটেও বেড়িয়েছেন। বিশ্বকাপটা তবে দীর্ঘশ্বাসই হয়ে রইল আর্জেন্টিনা অধিনায়কের কাছে! ম্যাচ শেষে সবার আগে টানেলে ঢুকলেন। মেসি মাঠেও এমন নিঃসঙ্গ। তাঁকে চিনতে চিনতে আগের তিনটা বিশ্বকাপ ফুরিয়ে ফেলেছে তাঁর আর্জেন্টিনা–সতীর্থরা । আরেকটি যাওয়ার পথে!