ফুটবলটা শেষে জার্মানিই জেতে

জার্মানিকে জিতিয়ে টনি ক্রুসের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
জার্মানিকে জিতিয়ে টনি ক্রুসের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
>সোচিতে ২-১ গোলে সুইডেনকে হারিয়েছে জার্মানি। ৩২ মিনিটে অলা তইভনেনের গোলে এগিয়ে যায় সুইডেন। ৪৮ মিনিটে জার্মানকে সমতায় ফেরান মার্কো রয়েস। আর ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে দলকে জেতান টনি ক্রুস।
জার্মানদের সাধারণত আবেগ স্পর্শ করে না। জোয়াকিম লো এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু আজ যে অন্য ছবি। জার্মান কোচ অস্থির হয়ে উঠছেন ডাগ আউটে। ৪০ বছরেও জার্মানিকে হারাতে পারেনি সুইডেন। সেই সুইডেন সোচিতে চোখ রাঙাচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে জার্মানদের স্বপ্ন কেড়ে নেওয়ার। শেষ পর্যন্ত পারেনি সুইডেন, ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া জার্মানরাই জিতেছে। স্নায়ুক্ষয়ী অন্তিম মুহূর্তে টনি ক্রুসের নাটকীয় গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতে প্রমাণ করেছে, শেষের আগে জার্মানরা হার মানে না!
 
আজ হারলে রাশিয়ার সৈকত নগরী সোচিতে স্বপ্নের সলিলসমাধি হয়ে যেত জার্মানদের। এমনকি ড্র হলেও দ্বিতীয় পর্বে পা রাখাটা ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে যেত বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ২ ম্যাচে ৬ পয়েন্টে গ্রুপের শীর্ষে মেক্সিকো। ৩ পয়েন্ট নিয়ে জার্মানি টিকিয়ে রেখেছে দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা। সুইডেনের পয়েন্টও অবশ্য ৩। দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করতে ২৭ জুন কাজানে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচটি খেলবে জার্মানি।
 
আজ জার্মানি শুরু করেছে একেবারে ‘টপ গিয়ার’ থেকে। শুরু থেকেই ঝড়ের মতো আক্রমণ। লো একটাই মন্ত্র পড়ে দিয়েছেন ছাত্রদের—আক্রমণ, আক্রমণ আর আক্রমণ! দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জার্মানির এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। ঝোড়ো আক্রমণে সুইডিশ রক্ষণ কতটা তটস্থ, এ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার—১০ মিনিটেই জার্মানির পাস ১২২, সুইডেনের সেখানে ৬।
 
দুই প্রান্ত থেকে সুইডেনের রক্ষণে বারবার হানা দিয়েছেন মার্কো রয়েস ও ইউলিয়ান   ড্রাক্সলার। গতিশীল আর আক্রমণাত্মক কৌশলে জার্মানি যখন লক্ষ্যভেদের চেষ্টায়, তখনই সুইডেনের প্রতি–আক্রমণ। ১২ মিনিটে বক্সে ঢুকে পড়া সুইডিশ ফরোয়ার্ড মার্কাস বার্গকে থামাতে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে বসেন বোয়েটাং। সুইডেনের ভিএআরের আবেদন কানে তোলেননি পোলিশ রেফারি। তুললে জার্মানির ভাগ্যে অন্য কিছু থাকতে পারত!
 
২৫ মিনিটে আঘাত পেয়ে নাক দিয়ে রক্ত ঝরল সেবাস্তিয়ান রুডির। রুডি মাঠের বাইরে চলে গেলে মিনিট পাঁচেকের জন্য ১০ জনের দল হয়ে গেল জার্মানি। বাধ্য হয়ে রুডির বিকল্প হিসেবে নামাতে হলো গুনদোয়ানকে। জার্মানি রক্তাক্ত হলো, তবু গোল পেল না! গোল পেল সুইডেন। আক্রমণে বেশি জোর দিতে গিয়ে হালকা ফাটল ধরল জার্মানির রক্ষণে। এই সুযোগে ৩২ মিনিটে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে পড়ে অ্যান্তোনিও রুডিগার ও ম্যানুয়েল নয়্যারকে হার মানিয়ে অলা তইভনেনের দুর্দান্ত প্লেসিং। শুরু থেকেই নিরন্তর চেষ্টা করল জার্মানি, কিন্তু গোল পেল সুইডেন! আক্রমণের পর আক্রমণ আর বারবার চাপ প্রয়োগ করেও প্রথমার্ধে গোলের দেখাই পেল না জার্মানি।
রয়েসের গোলে সমতায় ফেরে জার্মানি। ছবি: রয়টার্স
রয়েসের গোলে সমতায় ফেরে জার্মানি। ছবি: রয়টার্স
দ্বিতীয়ার্ধে দুরন্ত জার্মানি গোলের ক্ষুধায় হামলে পড়ল সুইডেনের রক্ষণে। অবশেষে ৪৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেল জার্মানরা, জটলায় রয়েসের ছোঁয়ায় সমতায় ফিরল জার্মানি। ড্র নয়, জার্মানিদের ভাবনায় একটা লক্ষ্যই ছিল, জিততে হবে, জয়ের কোনো বিকল্প নেই। আক্রমণাত্মক ফুটবলে বারবার সুইডেনকে চেপে ধরেও শুধু গোলের দেখাটাই তারা পাচ্ছিল না। কখনো পোস্টের পাশ দিয়ে, কখনো বারের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল শট। এত দুর্দান্ত খেলেও যখন গোল পাচ্ছিল না, তবে কি আজ জার্মানির সঙ্গে শুধু ভাগ্যটাই নেই? ৮৩ মিনিটে দুঃসংবাদ, দুই হলুদ কার্ড মিলিয়ে লাল কার্ড দেখলেন বোয়েটেং। বিশ্বকাপে সপ্তম জার্মান খেলোয়াড় হিসেবে লাল কার্ড দেখলেন এ জার্মান ডিফেন্ডার। আর এই বিশ্বকাপ প্রথম (দুই হলুদ কার্ড মিলিয়ে লাল কার্ড)।
 
১০ জনের দলে পরিণত হওয়া জার্মানি কি জিততে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর ৯০ মিনিটেও পাওয়া গেল না। যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে চলে এসেছে ম্যাচ। ফ্রিকিক পেল জার্মানি। ক্রুস সরাসরি নয়, রয়েসকে দিয়ে একটু বানিয়ে নিলেন। সুইডেনের গোলপোস্টের একেবারে কোনা বরাবর বল নয়, যেন জার্মানদের স্বপ্নটাই উড়িয়ে দিলেন—গোওওওল বলে ধারাভাষ্যকারদের গগনবিদারী চিৎকার! সোচির গ্যালারিতে জার্মানদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, ক্রুস যে একেবারে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করলেন দলকে।
 
নান্দনিক, গতিশীল, ছন্দময় আর আক্রমণাত্মক ফুটবলের মিশেলে জার্মানি যে খেলাটা খেলল, এ জয় তাঁদের পাওনাই ছিল। সোচিতে জার্মানি এ–ও প্রমাণ করল, স্নায়ু আর চাপের কাছে তারা হার মানে না; ফুটবলটা শেষে তারাই জেতে!