লজ্জার টেস্ট শেষ লজ্জার রেকর্ড দিয়ে

>
নুরুলের ব্যাট যা একটু জবাব দিল। ছবি: এএফপি
নুরুলের ব্যাট যা একটু জবাব দিল। ছবি: এএফপি

অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ও ২১৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট ১৪৪ রানে। নুরুল হাসান করেছেন ৬৪। বাকি সবাই মিলে ৭৫

‘ভাই, চলো, চেষ্টা করি, আরামসে খেলো’, ‘ওই জায়গায় বল পাঠালে আসতে পারবা না (সিঙ্গেল নেবেন)?’—প্রথমটি পরামর্শ, কামরুল ইসলামকে। দ্বিতীয়টি অনুরোধ, রুবেল হোসেনকে। কে বলবে নুরুল হাসান মাত্রই দ্বিতীয় টেস্ট খেলছেন? প্রথমে চেষ্টা করলেন কামরুলকে নিয়ে, দ্বিতীয় চেষ্টা রুবেলকে নিয়ে। নুরুলের গন্তব্য কোথায়? অ্যান্টিগা টেস্টের ফল অনেকটা নির্ধারণ হয়ে গেছে প্রথম সেশনেই। তৃতীয় দিনের সকালে নুরুল তবে কিসের চেষ্টা করছেন? সম্মান বাঁচাতে!

অ্যান্টিগা টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ও ২১৯ রানে। লজ্জার হার তো অবশ্যই। তবে এই টেস্টে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির কোনো উপাদান যদি থাকে, সেটি নুরুলের চেষ্টা। মহাকাব্যিক কোনো ইনিংস খেলেননি। কামিন্সের শর্ট বলটায় ফিরতি ক্যাচ হওয়ার আগে করেছেন ৬৪ রান। অষ্টম উইকেটে কামরুলকে নিয়ে ২৫ আর ৯ম উইকেটে রুবেলকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েছেন। তাতেও অবশ্য লজ্জা এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে (১৮৭ রান) এটাই কোনো টেস্টে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর।

নুরুল যে চেষ্টাটা করেছেন, সেটির ভিডিও বারবার দেখতে পারেন বাংলাদেশ দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা। এ ভিডিওতে তাঁরা দেখে নেবেন, নুরুল কীভাবে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে বুঝিয়েছেন, ক্যারিবীয় পেসাররা ভিনগ্রহ থেকে আসেননি। তাঁরা ‘আনপ্লেয়েবল’ নন। তাঁদের সব বল মরণঘাতী নয়। উইকেটে একটু সময় কাটাতে পারলে অনায়াসে খেলা যায়, স্কোর সচল রাখা যায়, বোলারদের চিন্তায় ফেলে দেওয়া যায়। প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে বারবার বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, লজ্জা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়!

৬ উইকেটে ৬২ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস দেখার চেয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স-উরুগুয়ে ম্যাচ দেখাটা হয়তো উত্তম মনে করেছেন অনেকে। আগের দিন ১৫ রানে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ দিনের প্রথম বলেই আউট হয়ে যেন বলতে চাইলেন, ‘আমাদের খেলা দেখে আর কী হবে, ফুটবলই দেখেন!’

কিন্তু নুরুল তাতে যে ‘বাগড়া’ দিলেন! লেজ গুটিয়ে পালানোর বদলে প্রতি–আক্রমণ শুরু করলেন! নুরুলের এই সাহস দেখে হকচকিয়ে গেলেন ক্যারিবীয় পেসাররাও। গত দুদিন যে দলের ব্যাটসম্যানরা শুধু অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদের একজন কিনা চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন! পুল, ড্রাইভে বল সীমানাছাড়া তো করছেনই; শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের এক স্লোয়ারে লং অফ দিয়ে উড়িয়েও মারলেন। কখনো স্কুপ, পেরিস্কোপের মতো উদ্ভাবনী শট খেলতেও দেখা গেল। কিন্তু এ লড়াই নুরুল ছাড়া মনে রাখবেন না আর কেউ!

দারুণ বোলিং করেছেন, বাংলাদেশের টপঅর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন; তবু গ্যাব্রিয়েলের ইকোনমিটা (৬.৪১) যে বাজে দেখাচ্ছে, সেটি নুরুলের কারণেই। ১২ ওভারে ৫ উইকেট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার রান দিয়েছেন ৭২!

২০০২ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ২২৬ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে এত দিন সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বনিম্ন। তবে আরেকটি রেকর্ড শুধু বাংলাদেশের নয়; সব দল মিলিয়েই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যেকোনো দলের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড এটাই।

এই টেস্টে মনে রাখার মতো বাংলাদেশ তেমন কিছুই করতে পারেনি। জোর করে ‘প্রাপ্তি’র কথা যদি বলতেই হয়, নুরুলের ওই চেষ্টাটা।