হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া গেল না হ্যারি কেইনকে!

নিষ্প্রভ কেইন, নিষ্প্রভ ইংল্যান্ড
নিষ্প্রভ কেইন, নিষ্প্রভ ইংল্যান্ড
>ফুটবল মাঠে এখন কত ধরনের প্রযুক্তিরই না ব্যবহার হয়। এসবের সাহায্য নিয়ে চলে খেলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ। প্রযুক্তি-সাহায্য নিয়ে প্রথম আলো ডিজিটালও বিশ্বকাপের বড় ও আলোচিত ম্যাচগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে। নতুন ধারাবাহিক ‘প্রযুক্তির চোখে’র চতুর্দশ পর্বে থাকছে ক্রোয়েশিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের বিশ্লেষণ। লিখেছেন নিশাত আহমেদ


হ্যারি কেইন জ্বলে উঠলে জ্বলে ওঠে ইংল্যান্ড। কেইন নিষ্প্রভ থাকলে নিষ্প্রভ থাকে দলও। এই অমোঘ সত্যটাই কাল আবারও যেন মাঠ ফুঁড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল! ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে নেমে ইংল্যান্ড ফাইনালের পথে উঠতে পারেনি। ‘হারিকেন’ না জ্বললে পথ চিনবে কীভাবে!

কিয়েরান ট্রিপিয়েরের গোলে ইংল্যান্ড প্রথমার্ধে এগিয়ে গেলেও পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে ইভান পেরিসিচ আর অতিরিক্ত সময়ে মারিও মানজুকিচের গোলে তুলে নেওয়া জয়ে ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে উদ্ধার করতে পারেননি হ্যারি কেইন। প্রায় একই উচ্চারণ বলে অনেকেই তাঁকে ‘হারিকেন’ নামে ডেকে থাকেন। কিন্তু এই কেইনকে কাল মাঠে সত্যিকারের ‘হারিকেন’ জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি!

কেইন কেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন? দায়টা বর্তাতে পারে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের ওপর। হ্যারি কেইন যে জায়গায় খেলে বর্তমানে বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেখানে কেইনকে সাউথগেট খেলতে দিলেন কই?

অথচ এই কেইন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ভীতিজাগানিয়া ‘নাম্বার নাইন’। বক্সের মধ্যে তাঁর মতো চতুর গোলশিকারি নেই বললেই চলে। সেই কেইনকে সাউথগেট একটু নিচে খেলিয়েছেন। অনেকটা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের ভূমিকায়। আর ৩-৫-২ ছকে কেইনের পাশে আরেক স্ট্রাইকার হিসেবে খেলা স্টার্লিংকে খেলিয়েছেন একটু ওপরে। অর্থাৎ কেইনই তাঁর সহজাত পজিশন ও খেলার ধরন বদলে স্টার্লিংয়ের জন্য একটু নিচে নেমে খেলেছেন, আর স্টার্লিং খেলেছেন কেইনের জায়গায়।

সাউথগেট জানতেন, তাঁর মিডফিল্ডারদের পক্ষে এই ৩-৫-২ ছকে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণভাগে নিয়মিত সংযোগ ঘটানো সম্ভব না। তাই কেইনকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই কাজটা করার জন্য, কেননা বল পায়ে সতীর্থদের সঙ্গে আক্রমণ রচনা করার ক্ষমতা স্টার্লিংয়ের থেকে কেইনের বেশি। ফলে বক্সের মধ্যে কেইনের সহজাত ক্ষিপ্রতা, দুর্দান্ত ফিনিশিংগুলোর অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ইংল্যান্ড। ওদিকে স্টার্লিং বক্সের মধ্যে কেইনের মতো অতটা চতুর কখনোই ছিলেন না, গতিসর্বস্ব স্টার্লিংকে সামলাতে তাই একদমই বেগ পেতে হয়নি ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডারদের। হ্যারি কেইনের হিটম্যাপ আর টাচম্যাপ দেখলেই বুঝতে পারবেন তিনি সাধারণত যে পজিশনে খেলেন, তাঁর থেকে বেশ নিচে নেমে খেলেছেন—

যথারীতি দুর্দান্ত খেলেছেন ইংলিশ রাইটব্যাক কিয়েরান ট্রিপিয়ের, ইংল্যান্ডের আক্রমণের ডান দিকটা সম্পূর্ণরূপে ট্রিপিয়ের-নির্ভর ছিল, ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে একমাত্র গোলটাও করেছেন তিনিই! দেখে নিন গোলটা -&nbsp

ওদিকে প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে ওঠেন মদরিচ-পেরিসিচ-মানজুকিচরা। দ্বিতীয়ার্ধ থেকে একদম ম্যাচের শেষ পর্যন্ত মিডফিল্ডের লাগাম ধরে রেখেছিলেন লুকা মদরিচ আর ইভান রাকিতিচরা। আর মিডফিল্ডে তাঁদের ভালো খেলার সুফল পেয়েছেন ইভান পেরিসিচ ও মারিও মানজুকিচ। পুরো ম্যাচে গোল বরাবর সাতটা শট নিয়েছেন পেরিসিচ! সমতাসূচক গোলটাও এসেছে তাঁর কাছ থেকেই।
পেরিসিচ-মানজুকিচ-মদরিচ-রাকিতিচ—উদ্যমী এই ‘চতুষ্টয়’কে সামলানোর ক্ষমতা ইংল্যান্ডের সীমিত প্রতিভার সৈনিকদের ছিল না। হ্যারি কেইনেরও তাই কালকে জ্বলে ওঠা হলো না!