এবার সবচেয়ে বড় মারণাস্ত্র কী ছিল?

কাল ট্রিপিয়েরের দারুণ ফ্রি–কিক ম্যাচের ৫ মিনিটে এগিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ছবি: রয়টার্স
কাল ট্রিপিয়েরের দারুণ ফ্রি–কিক ম্যাচের ৫ মিনিটে এগিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ছবি: রয়টার্স
>সেমিফাইনাল পর্যন্ত ১৬১ গোলের ৭০টির উৎস সেট পিস। শতকরা হিসাবে যা মোট গোলের প্রায় ৪৪ ভাগ

ফুটবল মাঠ যেন দাবার বোর্ড। আর খেলোয়াড়েরা দাবার ঘুঁটি। ম্যাচ জিততে, প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলতে কোচদের কতই না জটিল পরিকল্পনা, কতই না রণকৌশল। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে এসে যেন সব জটিলতা-ফটিলতা উধাও। কর্নার, ফ্রি–কিক, পেনাল্টি অর্থাৎ সেট পিস থেকে হওয়া ভূরি ভূরি গোল প্রমাণ দিচ্ছে, ফুটবলটা এখনো সরল এক খেলাই আছে। পরশু প্রথম সেমিফাইনালেও বেলজিয়ামকে এই শিক্ষাই দিল দিদিয়ের দেশমের ফ্রান্স। দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ড এগিয়ে গিয়েছিল সেট পিস থেকেই।

আঁতোয়ান গ্রিজমানের কর্নার থেকে স্যামুয়েল উমতিতির মাথা হয়ে বলটি জালে জড়াতেই যে ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল ফ্রান্স-বেলজিয়ামের। রাশিয়া বিশ্বকাপও পেয়ে গেল সেট পিস উৎস থেকে ৭০তম গোল। সেমিফাইনাল পর্যন্ত হওয়া ১৬১ গোলের শতকরা প্রায় ৪৪ ভাগের উৎস কিনা সেট পিস। ২০১৮ বিশ্বকাপকে সেট পিসের বিশ্বকাপ তো বলাই যায়।

সেমিফাইনালের আগে কোয়ার্টার ফাইনালের ১১ গোলের ৫টিও এসেছে হয় কর্নার, না হয় ফ্রি–কিক থেকে। উরুগুয়ের বিপক্ষে ফ্রান্সের রাফায়েল ভারানের গোলের উৎস ফ্রি–কিক, বেলজিয়ামের বিপক্ষে ব্রাজিলের ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতী গোলটির উৎস কর্নার। সুইডেনের বিপক্ষে কর্নার থেকে ইংল্যান্ডের হ্যারি ম্যাগুয়ারের গোল। তিনটি গোলই আবার ম্যাচের প্রথম। কোয়ার্টার ফাইনালের চার ম্যাচের মাত্র একটিই ব্যতিক্রম। দেনিস চেরিশেভের অসাধারণ গোলটি ছিল ক্রোয়েশিয়া-রাশিয়া ম্যাচের প্রথম গোল। তবে অতিরিক্ত সময়ে কর্নার ও ফ্রি–কিক থেকে গোল দোমাগয় ভিদা ও মারিও ফার্নান্দেজ আবার তা পুষিয়ে দিয়েছেন।

সেট পিস থেকে হওয়া গোল এবার রেকর্ডই করে ফেলেছে। এর আগে কোনো বিশ্বকাপে ৩৬ শতাংশের বেশি গোল সেট পিস থেকে হয়নি। এবার তা ৪৪ ভাগ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের শতকরা ৩৬ ভাগ গোল হয়েছিল সেট পিস থেকে। শতকরা ৩৩ ভাগ সেট পিস গোল নিয়ে তিনে ১৯৯৪ বিশ্বকাপ।

সেট পিস থেকে গোল করার সহজ কৌশল নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে এগিয়েছে ফুটবল ঐতিহ্যে পিছিয়ে থাকা দলগুলো। র‍্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে থেকে বিশ্বকাপ শুরু করা স্বাগতিক রাশিয়ার ১১ গোলের পাঁচটিই সেট পিসজাত। ২৮ বছর পর সেমিফাইনালে ওঠার পথে সেট পিস থেকে আট গোল ইংলিশদের, যার তিনটি আবার পেনাল্টি থেকে।

তবে ভাববেন না সেট পিসের সুবিধা শুধু ছোট দলগুলোই নেয়, এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বড় দলগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানিই তার প্রমাণ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ২৭.৮ শতাংশ গোলই সেটি পিস থেকে পেয়েছে জার্মানরা।

তো ঠিক কী কারণে সেট পিস থেকে এত এত গোল? কারণ, দলগুলো সেট পিসকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অনুশীলনে এটার জন্য বাড়তি
সময় দিচ্ছে তারা। ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট তো সেট পিস নিয়ে গবেষণা করতে সহকারী কোচ অ্যালান রাসেলকে সঙ্গী করে যুক্তরাষ্ট্রেও ঘুরে এসেছেন।

তা ১৫ জুলাই লুঝনিকির ফাইনালেও কি সেট পিস থেকে অন্তত একটি গোল হবেই! সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ির ওপরেই দাঁড়িয়ে যে খেলা, সেই ফুটবলে কিনা এখন বলটা থেমে গেলেই হাজির হয় সব নাটক আর বিনোদন!
রাশিয়া এবার অন্য রকম বিশ্বকাপই উপহার দিল। অন্তত বুঝিয়ে গেল, এখন ফুটবলের সবচেয়ে বড় মারণাস্ত্রের নাম সেট পিস!