ভারতে বিশ্বকাপের ফুটবলার, বাংলাদেশ পড়ে আছে গা-জোয়ারি ফুটবলে

বিশ্বকাপে নেইমারের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে জনি অ্যকোস্তা। সংগৃহীত ছবি
বিশ্বকাপে নেইমারের বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে জনি অ্যকোস্তা। সংগৃহীত ছবি
ভারতীয় ফুটবলে খেলতে আসেন বিশ্বকাপের তারকারা। আর বাংলাদেশ পড়ে আছে মানহীন আফ্রিকান ফুটবলারদের নিয়েই


রাশিয়া বিশ্বকাপ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়ে হইচই ফেলে দিয়েছে ভারতের বিখ্যাত ক্লাব ইস্টবেঙ্গল। বিশ্বকাপে কোস্টারিকার হয়ে খেলা জনি অ্যাকোস্তা ইতিমধ্যেই সই করেছেন কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিতে। গ্রুপ পর্বে কোস্টারিকার তিনটি ম্যাচেই খেলেছেন এই ডিফেন্ডার।

ভারত প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাটা চলে আসে। বাংলাদেশের ক্লাবগুলো যে মানের বিদেশি খেলোয়াড় দলভুক্ত করে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। গত দশ বছরে যত বিদেশি খেলোয়াড় বাংলাদেশের ফুটবলে খেলে গেছেন, তাঁদের মধ্যে ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে হাতে গোনা দু–একজনের বেশি থাকার কথা নয়।

বাংলাদেশের ফুটবলে মানহীন আফ্রিকান খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি। এই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকেই। তার আগে অবশ্য বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক উঁচু মানের খেলোয়াড়েরাই খেলে গেছেন। বিশ্বকাপে খেলা খেলোয়াড়েরাও খেলেছেন। ১৯৮৭ সালে আবাহনীতে খেলতে এসেছিলেন ছিয়াশির বিশ্বকাপে ইরাকের হয়ে খেলা সামির শাকির ও করিম মোহাম্মদ। সে বছরই মোহামেডানের কোচ–কাম–গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরানের গোলবার আগলানো এশিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক নাসের হেজাজি। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে মোহামেডানে খেলা নাইজেরীয় ফুটবলার এমেকা ইজিউগো ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে নাইজেরীয় স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন।

ভারতের ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে বাংলাদেশের আবাহনী-মোহামেডানের ঐতিহ্য কিন্তু কম নয়। কিন্তু এই দুটি ক্লাব বিশ্বকাপ দূরে থাক, মানসম্মত বিদেশি খেলোয়াড়ও দলে নিতে অপারগ। কালেভদ্রে দু-একজন ভালো মানের বিদেশিকে নিয়ে এলেও একটু বেশি টাকা দিয়ে তাঁদের রেখে দিতে পারে না তারা। সাম্প্রতিক সময়ে আবাহনী ইংল্যান্ড থেকে লি টাক নামের অত্যন্ত উঁচু মানের একজন ফুটবলারকে আনলেও পরের মৌসুমেই তিনি চলে যান মালয়েশিয়ার লিগে। তারকা ফুটবলার সনি নর্দে দুই মৌসুম বাংলাদেশ লিগে খেললেও পরে বেশি টাকায় চলে যান কলকাতার মোহনবাগানে।

শেষ মৌসুমে এই প্রথায় কিছুটা বদল এনেছিল নবাগত সাইফ স্পোর্টিং। কলম্বিয়া থেকে দুজন আর ইংলিশ স্ট্রাইকার চার্লি শেরিংহামকে এনেছিল তারা। তবে শেরিংহামের নামের পাশে ইংলিশ ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও আলাদাভাবে দর্শকদের মন কাড়তে পারেননি। গেল মৌসুমে যে দুজন এক–আধটু নজর কেড়েছেন, তাঁরা হলেন শেখ জামালের দুই স্ট্রাইকার সলোমন কিং ও রাফায়েল অনব্রে। ১৫টি করে গোল করে দুজনেই হয়েছেন শীর্ষ গোলদাতা। বাংলাদেশে খেলা বিদেশিদের তুলনায় গাম্বিয়ান সলোমনের বায়োডাটাটাই যা একটু সমৃদ্ধ। গাম্বিয়ার জাতীয় দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও খেলেছেন বয়সভিত্তিক দলগুলোতে। আর রাফায়েল খেলেছেন নাইজেরিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।

ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার যে দর্শক আগ্রহেও জোয়ার আনতে পারে, সেটি সব সময়ই ভুলে যান বাংলাদেশের ক্লাব-কর্তারা। ভারতকে দেখেও কি একটু শিখবেন না তাঁরা?