একটা টেনিস ম্যাচের আয়ু চার ফুটবল ম্যাচের চেয়েও বেশি!

ম্যারাথন লড়াইয়ে হারের পর অ্যান্ডারসনকে অভিনন্দন ইসনারের। ছবি: রয়টার্স
ম্যারাথন লড়াইয়ে হারের পর অ্যান্ডারসনকে অভিনন্দন ইসনারের। ছবি: রয়টার্স
>

উইম্বলডনে পুরুষ এককের সেমিফাইনালে কাল জন ইসনারকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন কেভিন অ্যান্ডারসন। ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের এই লড়াই উইম্বলডনের ইতিহাসে দীর্ঘতম সেমিফাইনাল। টেনিস ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম ম্যাচ

উইম্বলডনে আট বছর আগের সেই ম্যাচ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম ছিল ‘ইসনার এমন ম্যাচ জিতলেন যা শেষ হয়নি’। আসলে ম্যাচ শেষ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জন ইসনার-নিকোলাস মাহুতের ম্যারাথন লড়াই এভাবে ভাবতে বাধ্য করেছিল। দুই-এক ঘণ্টা বা এক দিন না, খেলাটি হয়েছিল টানা তিন দিন! ১১ ঘণ্টা ৫ মিনিটের সেই লড়াই টেনিস ইতিহাসেই দীর্ঘতম। এমন ম্যাচ জিততে কেমন লাগে ইসনার, তা টের পেয়েছিলেন হাড়ে হাড়ে। সেই ইসনারই এবার টের পেলেন টেনিস ইতিহাসের তৃতীয় দীর্ঘতম ম্যাচ হারতে কেমন লাগে!

উইম্বলডনের সেমিফাইনালে কাল কেভিন অ্যান্ডারসনের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইসনার। সেন্টার কোর্টে দুজন প্রতিপক্ষ হলেও কোর্টের বাইরে তাঁরা কিন্তু পুরোনো বন্ধু। লড়াইয়ের মোড়কে দুজন বেশ মজা করেই দর্শকদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন! আর এ কাজে তাঁরা সফলও। ধৈর্য হারানো দর্শক গ্যালারি থেকে চিৎকার করে বলেছেন, ‘কেউ একজন জেতো।’ এমন বলবে না কেন? দুই-এক ঘণ্টা নয়, দুজন লড়েছেন ৬ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। এর মধ্যে শুধু শেষ সেটের নিষ্পত্তি হতেই লেগেছে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। অর্থাৎ, ফুটবলে চারটি ম্যাচের নির্ধারিত সময় (৯০ মিনিট) একসঙ্গে করলেও তা এই ম্যাচের আয়ু থেকে পিছিয়ে থাকবে। ভাবা যায়!
হাঁটুর সহ্য ক্ষমতা পরখ করে দেখার এই পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত জিতেছেন অ্যান্ডারসনই। ইসনারকে ৭-৬ (৮-৬), ৬-৭ (৫-৭), ৬-৭ (৯-১১), ৬-৪, ২৬-২৪ গেমে হারিয়ে ৯৭ বছর পর প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেব উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেছেন অ্যান্ডারসন। তার আগে ১৯২১ সালে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে অভিজাত এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছিলেন ব্রায়ান নরটন।

গত বছর ইউএস ওপেনের ফাইনাল খেলা অ্যান্ডারসন সেভাবে পরিচিতি না পেলেও তাঁর ফাইনালে ওঠা কিন্তু মোটেও ‘ফ্লুক’ নয়। লম্বা সময়ের ম্যাচ খেলাও যেন তাঁর মজ্জাগত। শেষ ষোলোয় গায়েল মনফিলসকে হারিয়েছেন ৩ ঘণ্টা ২৯ মিনিটের লড়াইয়ে। আর কোয়ার্টার ফাইনালে ৪ ঘণ্টা ১৪ মিনিটে বিদায় করেছেন রজার ফেদেরারকে!

ইসনার-অ্যান্ডারসনের এই ম্যারাথন লড়াইয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশ দেরিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ। দুই কিংবদন্তির এই সেমিফাইনাল লড়াই কাল আর শেষ হয়নি। নাদালের ৬-৪, ৩-৬, ৭-৬ (১১-৯) ব্যবধানে এগিয়ে আজ আবার স্প্যানিয়ার্ডের মুখোমুখি হবেন জোকাভিচ। এ ম্যাচে যে জিতবেন ফাইনালে তাঁকে অ্যান্ডারসনের মুখোমুখি হতে হবে। তার আগে অ্যান্ডারসন-ইসনারের কাব্যিক লড়াই কিন্তু নতুন ইতিহাসেরও জন্ম দিয়েছে।

২০১৩ সালের সেমিফাইনালে হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোকে হারাতে ৪ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট সময় নিয়েছিলেন নোভাক জোকোভিচ। উইম্বলডনের ইতিহাসে এত দিন এটাই ছিল দীর্ঘতম সেমিফাইনাল। রেকর্ডটা কাল নতুন করে লিখিয়েছেন ইসনার-অ্যান্ডারসন। গোটা টুর্নামেন্ট বিবেচনায় এটা আবার দ্বিতীয় দীর্ঘতম ম্যাচ। দুজন আর কয়েক মিনিট লড়লেই দখল করতে পারতেন টেনিস ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ম্যাচের জায়গাটি। ২০১৫ সালে ডেভিস কাপে ৬ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট লড়েছিলেন লিওনার্দো মেয়ার ও হোয়াও সউজা। আর মাত্র ৯ মিনিট লড়লেই মেয়ার-সউজাকে পেছনে ফেলতে পারতেন অ্যান্ডারসন-ইসনার।