বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সমস্যা কোথায়?

সাকিবের সামনে উড়ছেন হোল্ডার, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যর্থতার প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি
সাকিবের সামনে উড়ছেন হোল্ডার, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যর্থতার প্রতীকী ছবি। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশের আনন্দদায়ী স্মৃতি কম নয়। ২০০৯ সালে উইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার কথা না হয় বাদ গেল। কিন্তু ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে বাংলাদেশের সেই ড্র সমতুল্য জয়কে ভুলবেন কী করে! কলিন্স, এডওয়ার্ডস, বেস্টদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান। ২০১৪ সালে সাফল্য না পেলেও এতটা বাজে ব্যাটিং তো হয়নি। এবার কী হয়েছে তামিম-মুশফিকদের?


আমিনুল ইসলাম একটা সুসংবাদ পেয়েছেন। বাংলাদেশ দলের সাবেক ও অধিনায়কের ছেলে মাহদি ইসলাম সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৫ ইনডোর ক্রিকেট দলে। এই দলটা আগামী অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডে যাবে ইনডোর বিশ্বকাপ খেলতে। আজ বিকেলে যখন আমিনুলের সঙ্গে কথা হলো, বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানালেন ছেলের সাফল্যের কথা। কিন্তু যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গ উঠল, সুসংবাদের উচ্ছ্বসটা হঠাৎ উধাও!

বোলিং খুব একটা খারাপ হচ্ছে না। কিন্তু একটা দল কতটা বাজে ব্যাটিং করতে পারে, এবার ক্যারিবীয় সফরে সেটির সর্বোচ্চ প্রদর্শনীই যেন করছে বাংলাদেশ। একটু বল মুভ করলে, ভেতরে ঢুকলে কিংবা জোরে এলেই তামিমদের থরহরি কম্প দশা! অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা যেন পরিণত হচ্ছেন নবিশে। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের কঙ্কালটা এমনভাবে বেরিয়ে পড়েছে, যেটি শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়েও উঠে গেছে প্রশ্ন।

আমিনুল অবশ্য সাকিব-তামিমদের স্কিল নয়, দায়ী করছেন অ্যাপ্লিকেশনকে, ‘বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই দীর্ঘদিন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট খেলেননি। মে-জুনে যে কন্ডিশনিং ক্যাম্প শুরু হয়েছিল বেশি মনোযোগ ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। সেটির পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে সেভাবে কোনো বিশেষ প্রস্তুতি ছিল না। সবুজ-গতিময় উইকেটে খেলতে হলে যে প্রস্তুতিটা দরকার, সেটি যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রস্তুতি দুই ধরনের, একটা স্কিলের আরেকটা মনস্তাত্ত্বিক। তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর টেকনিক ভুল বলতে পারবেন না। এ টেকনিকেই তো তারা ১০-১২ বছর ধরে খেলছে। সমস্যা হচ্ছে সামর্থ্যের প্রয়োগে। তারা যেভাবে খেলছে, তাতে ভুল আছে। মনস্তত্ত্ব আর দক্ষতায় সমন্বয় ঠিকমতো হয়নি বলে তারা এমন ব্যর্থ হচ্ছে।’

বাংলাদেশ দলের ‘থিংক ট্যাংক’ যথেষ্ট সমৃদ্ধ কি না, সে প্রশ্নও এসে যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে রওনা দেওয়ার দিন চারেক আগে বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছেন নতুন কোচ স্টিভ রোডস। দলের খেলোয়াড়দের ভালোভাবে চেনার সময়ও তিনি পাননি। সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছেন, সাকিবদের চিনছেন তিনি ইউটিউব দেখে। দলের সঙ্গে যাননি ম্যানেজার। একজন নির্বাচক দেখা যায় প্রতি সফরে। এবার সেটিও দেখা যাচ্ছে না।

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে যে দারুণ কিছু করা যায়, সেটি বাংলাদেশ প্রথম প্রমাণ করেছে ২০০৪ সালে। সেন্ট লুসিয়া টেস্টে বাংলাদেশ যে জয় সমতুল্য ড্র করেছিল, তাতে বিরাট অবদান ছিল খালেদ মাসুদের, দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন অপরাজিত ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ১৪ বছর আগেই যদি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইন্ডিজ বোলারদের বিপক্ষে অসাধারণ ব্যাটিং করতে পারে, তামিম-মুশফিকদের মতো ব্যাটসম্যানরা কেন পারছেন না?

আমিনুলের সঙ্গে খালেদ মাসুদ একমত—সমস্যাটা পরিকল্পনায়। পরিকল্পনা ভালো হচ্ছে না, ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের স্কিল কাজে লাগাতে পারছেন না। মাসুদের বিশ্লেষণ, ‘প্রতিপক্ষ দলে যত ভালো বোলার থাকুক, আমরা এখন নিয়মিত বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলছি। অভিজ্ঞতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান দলটা আমাদের চেয়ে পিছিয়েই থাকবে। অনেক তরুণ খেলোয়াড় তাদের দলে। অন্যদিকে আমাদের পাঁচ-ছয়জন খেলোয়াড় নিয়মিত দেশ-বিদেশে নানা লিগে খেলে থাকে। তারা ১০-১২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। অ্যাপ্লিকেশনটা ঠিকঠাক হচ্ছে না। পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে। পরিকল্পনা ভালো না হলে আপনি বেশি ভুল করবেন। আর ম্যানেজমেন্টে দুর্বলতা থাকলে পরিকল্পনা ভালো হবে না, দলও ভালো করতে পারবে না।’