প্রযুক্তি ফাইনালে নিয়ে এসেছে ক্রোয়েশিয়াকে?

ক্রোয়েশিয়ার এই দলে আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আছে। তার নাম প্রযুক্তি। ছবি: রয়টার্স।
ক্রোয়েশিয়ার এই দলে আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আছে। তার নাম প্রযুক্তি। ছবি: রয়টার্স।
>বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। বলকান দেশটি এই প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। ক্রোয়েশিয়ার এই সাফল্যের পেছনে ফুটবলারদের সঙ্গে আছেন আরেকজন সদস্য। রক্তমাংসের কেউ নন, কিন্তু সে কে?

ক্রোয়েশিয়ায় ৪৫ লাখ মানুষের বসবাস। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যায় সর্বনিম্নের তালিকায় চতুর্থ। আর বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা সব দলের মধ্যে সর্বনিম্ন (জনসংখ্যায়)। ক্রোয়েশিয়া দলে কিন্তু শুধু লুকা মদরিচ, ইভান রাকিতিচ আর মানজুকিচের মতো তারকাই নেই। দলটিতে আছেন আরও এক ‘তারকা’—প্রযুক্তি। এবারের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াই একমাত্র দল যাঁরা ‘স্ট্যাটস এজ’ নামের এক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রতি ম্যাচের খুব উন্নত বিশ্লেষণ করেছে।

গত শতাব্দীর শেষ দিকে প্রযুক্তির কল্যাণে জীবন হয়েছে সহজ। ফুটবলও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতি ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করে মাঠে নামে না, এমন দল এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়া। আমেরিকার শিকাগো শহরের এক আইটি ফার্মের তৈরি বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিপক্ষ দলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিশেষ মুহূর্তে তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি তাঁদের অতীত ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা যায়।

এই বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো ম্যাচ বিশ্লেষণের আগে ৫ ঘণ্টার ‘কোডিং’ করা হয়। তারপর বিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা-দুর্বলতা যাচাই করা হয়। পরের ৫ ঘণ্টা তা পুনরায় মিলিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ভিডিও অ্যানালাইসিস তো আছেই। নিজেদের এই অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সহসভাপতি ডক্টর প্যাট্রিক লুসে বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপে আমাদের পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং ক্রোয়েশিয়া আমাদের প্রথম ক্রেতা। বিশ্বকাপ সম্প্রচারে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা অর্থহীন। তাতে ম্যাচের পুরো চিত্র এবং কার জেতার সম্ভাবনা বেশি, এমন কোনো ব্যাপার থাকে না।’

ইংল্যান্ড দল পুরো বিশ্বকাপে ভালোই খেলেছে এবং ম্যাচে ৫৩ শতাংশ বল দখল নিজেদের কাছে রেখেছে। হাই-প্রেসিং ফুটবল খেলেছে দলটি। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেই ইংল্যান্ডই অন্যান্য ম্যাচের তুলনায় বলের দখল কম রাখতে পেরেছে এবং খেলার ধরন বদলাতেও বাধ্য হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, দুই দলের প্রত্যাশিত গোলেও ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে—ইংল্যান্ডের .৭ আর ক্রোয়েশিয়ার ২.৪।

এই প্রযুক্তি আমেরিকার বাস্কেটবল, ফুটবল, বেসবল খেলায় পরিচিত হলেও ইউরোপিয়ান ফুটবলে এর তেমন একটা জনপ্রিয়তা নেই। আজ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে দেওয়া খুব সহজ কাজ হবে না মদরিচ-রাকিচিতদের জন্য। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকা ক্রোয়েশিয়া কৌশলী খেলা দিয়ে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যদের আটকে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।