রেড স্কয়ারের দখল যেন ক্রোয়েশিয়ার

ক্রোয়াট দম্পতির দেখা মিলল স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: প্রথম আলো
ক্রোয়াট দম্পতির দেখা মিলল স্টেডিয়ামের বাইরে। ছবি: প্রথম আলো

ছোট্ট দেশ, জনসংখ্যা মাত্র ৪২ লাখ। কিন্তু বেলা ১১টায় রেড স্কয়ারে গিয়ে মনে হলো, বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে ২১ লাখ ক্রোয়াটই চলে এসেছে মস্কোয়। যেদিকে চোখ যায় লাল-সাদা চৌখুপি জার্সি, একই রঙের পতাকা। ফ্রান্স গেল কোথায়?

অনেক পরে চোখে পড়তে লাগল দু-একটি লাল-নীল-সাদা জার্সি ও পতাকা। কিন্তু ফ্রান্সের সমর্থক দুপুর ১২টার আগ পর্যন্ত ভীষণভাবে সংখ্যালঘু। আগেভাগেই রেড স্কয়ার ও ক্রেমলিনের দখল নিয়ে ফেলেছে ক্রোয়েশিয়া। এখন লুঝনিকি স্টেডিয়ামে তারা দখল নিতে পারলেই নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাবে ফুটবল।

সমর্থনের শক্তিকে উপেক্ষা করা যায় না। গত তিন দিনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, সমর্থনের পাল্লাটা ক্রোয়েশিয়ার দিকেই ঝুঁকে থাকবে। দুজন তারকা–সমর্থক গ্যালারি আলো করবেন—ক্রোয়াট প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচ, ক্রোয়েশিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিশ্বকাপের সোনার বুটজয়ী ডেভর সুকার। ফরাসি আধিপত্য ভেঙে ফিফাকেও নাকি খানিকটা ক্রোয়েশিয়া–করণ করে ফেলেছেন ১৯৯৮ সেমিফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া দলের অধিনায়ক জভোনভির বোবান।
ওদিকে প্রায় একই সময়ে শুরু হবে উইম্বলডনের ফাইনাল। ১৩তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রোয়াটদের ‘জাতশত্রু’ সার্বিয়ার নোভাক জোকোভিচ পর্যন্ত ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে শুভকামনা জানিয়েছেন। লুকা মদরিচ-ইভান রাকিতিচরা জোকোভিচের শুভেচ্ছায় ভীষণ অনুপ্রাণিত। ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে মদরিচ প্রশংসায় ভাসিয়েছেন জোকোভিচকে, ‘আমরা তো আগে একই দেশের মানুষ ছিলাম। সে আমাদের ভক্ত, আমরাও তার ভক্ত। আগে তো আমরা একই দেশের মানুষ ছিলাম। ঈশ্বর চাইলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব, আর ওদিকে নোভাক চ্যাম্পিয়ন হলেও ভালো হবে।’

ফরাসি দম্পতি গলা ফাটাতে এসেছে নিজ দলের। ছবি: প্রথম আলো
ফরাসি দম্পতি গলা ফাটাতে এসেছে নিজ দলের। ছবি: প্রথম আলো

রাশিয়া ফাইনালের নির্ভেজাল দর্শক। ক্রোয়াট ডিফেন্ডার দোমাগয় ভিদা ইউক্রেনকে কোয়ার্টার ফাইনালের জয় উৎসর্গ করে খেপিয়ে তুলেছিলেন রাশিয়াকে। সেই ক্রোধ ও ঘৃণার পরিচয় মিলেছিল লুঝনিকির সেমিফাইনালে। তবে ভিদা বারবার ক্ষমা চাওয়ায় মনে হচ্ছে রাগটা পড়েছে রাশিয়ার। রুশদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, প্রায় অর্ধেক রুশ ফুটবল জনতার সমর্থন পেয়ে যেতে পারে ক্রোয়েশিয়া।
ফাইনাল শুরু স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায়, কিন্তু ৪ ঘণ্টা আগেই লুঝনিকি যেন টগবগ করে ফুটছে। ফ্রান্স পরিষ্কার ফেবারিট। তবে ক্রোয়েশিয়া পুরো টুর্নামেন্টেই অনমনীয় হার না-মানা চরিত্র তুলে ধরে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের নিয়ে শেষ কথা বলা যায় না।
মিডিয়া সেন্টারে ঢোকার মুখে দেখা হোসে লুই চিলাভার্টের সঙ্গে। বিশ্বকাপ খেলা প্যারাগুয়ের সাবেক গোলকিপার ও অধিনায়ক বর্ণিল এক চরিত্র। জাতীয় দলের হয়ে সেট পিস থেকে অনেক গোল করে তাঁর সময়ে বিশ্ব মাতিয়েছেন। উল্টোপাল্টা কথা বলেও মিডিয়ার খোরাক হয়েছেন। তবে আজ দুপুরে যা বললেন, তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এটাই হয়তো ঠিক। ফাইনালে দুই দলের জয়ের সম্ভাবনাই সমান অর্থাৎ ৫০: ৫০। আর ম্যাচের ভাগ্য গড়ে উঠতে পারে গোলবারের নিচে।
ফ্রেঞ্চ গোলকিপার হুগো লরিস ও ক্রোয়াট গোলকিপার দানিয়েল সুবাসিচই নাকি ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের। গোলকিপারের চোখ প্রথমেই যায় গোলবারের নিচে। তবে চিলাভার্টের কথাটা অবশ্যই ভেবে দেখার মতো। শেষ লড়াইয়ে দাঁড়ানোর রাস্তাটা গড়ে দেওয়ার নেপথ্যে দুই শেষ প্রহরীর ভূমিকা বিশাল।
বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞদের হাটও বটে। বিশেষজ্ঞরা আবার বলছেন, ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারিত হবে মাঝমাঠে। যেখানে মদরিচ-রাকিতিচদের সঙ্গে লড়াইটা পগবা, মাতুইদি, কান্তেদের।
এই তো আর মাত্র কিছুক্ষণ। দেখতে থাকুন সন্ধ্যার লুঝনিকি মুকুট পরায় কার মাথায়। ভাত্রেনি জেতে, না লে ব্লুর। ক্রোয়েশিয়া ফুটবল দলকে বলা হয় ভাত্রেনি, মানে ব্লেজার। গায়ে চাপানো ব্লেজার। আবার ব্লেজারের অন্য অর্থও হয়—যা আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। লে ব্লুর অর্থ আপনাদের অনেক আগেই জানা—নীল দল।