৩০ দিনের সারাংশ ৯০ মিনিটে!

আত্মঘাতী গোলেই প্রথমে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ছবি এএফপি
আত্মঘাতী গোলেই প্রথমে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ছবি এএফপি
>ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জিতল ফ্রান্স। ম্যাচজুড়েই ছিল নাটকীয়তা। যা ৩০ দিনে চলা পুরো বিশ্বকাপের সারাংশ বললেও ভুল হওয়ার কথা নয়

কেন স্মরণীয় হয়ে থাকবে রাশিয়া বিশ্বকাপ?

কোনটা রেখে কোনটার কথা বলবেন। এ বিশ্বকাপ মনে রাখার জন্য উপাদানের যে অভাব নেই। পেনাল্টি গোলের রেকর্ড ভাঙা, সেট পিস থেকে ভূরি ভূরি গোল, আত্মঘাতী গোলের ছড়াছড়ি, গোলরক্ষকদের হাস্যকর ভুল, ভিএআর—কত কিছু! রাশিয়া বিশ্বকাপকে রেকর্ড ভাঙার বিশ্বকাপও বলা যায়, রেকর্ড তো কম হলো না।

পুরো বিশ্বকাপেই ছিল ঘটনাগুলো। দুর্দান্ত এক সারাংশের মতোই বিশ্বকাপের প্রতিটি আলোচ্য বিষয়ই আজকের ফাইনালে উঠে এল। সত্যিকারের এক ফাইনালে লুঝনিকিতে আজ উঠে এল পুরো বিশ্বকাপ। ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে আজ কী ছিল না—আত্মঘাতী গোল, দুর্দান্ত গোলে সমতায় ফেরা, ভিএআর, পেনাল্টি, রেকর্ড।

১৮ মিনিটেই দেখা গেছে আত্মঘাতী গোল। এ গোলেই এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ফ্রি–কিক থেকে নেওয়া আঁতোয়ান গ্রিজমানের শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল হেড করে জালে জড়িয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচ। যেটি বিশ্বকাপের ১২তম আত্মঘাতী গোল। এর আগে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬টি আত্মঘাতী গোল দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। এবার সংখ্যাটা হলো দ্বিগুণ। ১৫ জুন ইরানের বিপক্ষে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে নিজেদের জালে বল পাঠিয়ে ‘আত্মঘাতী উৎসবের’ উদ্বোধন করেন মরক্কোর আজিজ বুহাদ্দুজ। যার সমাপ্তি টানলেন মানজুকিচ।

এরপরেই আসবে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির কথা। পুরো বিশ্বকাপেই ডিফেন্ডারদের ঘুম হারাম করে দিয়ে আলোচনায় ছিল প্রযুক্তিটি। প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের বিপক্ষে বক্সের মধ্যে একটু ওলট–পালট হলেই প্রযুক্তিনির্ভর রেফারিংয়ে পেনাল্টির বাঁশি। আজ তার খেসারত দিলেন ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড ইভান পেরিসিচ। গ্রিজমানের নেওয়া কর্নার লাফিয়ে উঠে হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে হাতে লাগে পেরিসিচের। মাঠে থাকা আর্জেন্টাইন রেফারির চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ঘটনা। এ নিয়ে ভিএআরের সাহায্যে আটটি পেনাল্টি দেখল রাশিয়া বিশ্বকাপ।

ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দিচ্ছেন রেফারি
ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দিচ্ছেন রেফারি

স্পটকিক থেকে ২-১ করতে কোনো ভুলই করেননি গ্রিজমান। তাঁর নেওয়া পেনাল্টিটি ছিল চলতি বিশ্বকাপের ২১তম। যার মধ্যে গোল হয়েছে ১৬টি। এর আগে এক বিশ্বকাপে পেনাল্টি থেকে সর্বোচ্চ ১৮টি গোল হয়েছিল, ১৯৯৮। অর্থাৎ এবার তিনটি বেশি।

ব্যক্তিগত আরও বড় একটি রেকর্ড ছুঁয়েছেন ফ্রান্সের তরুণ স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে জোড়া গোলের কীর্তিতে পেলেকে আগেই ছুঁয়েছিলেন। আজ ফাইনালে গোলও করলেন। এত অল্প বয়সে এ দুই কীর্তি করার নজির কেবল পেলের নামের পাশেই ছিল এত দিন! বয়স উনিশের ঘরে থাকতে আর কোনো খেলোয়াড় ফাইনালে গোল করতে পারেননি। এমবাপ্পের রেকর্ড গড়া গোলেই ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

সব স্বাদই যখন পাওয়া গেছে বিশ্বকাপের ফাইনালে, তাহলে গোলরক্ষকের হাস্যকর ভুলটাই-বা বাদ যাবে কেন? এবার বিশ্বকাপে সবচেয়ে হাস্যকর ভুলটি করেছিলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো। তাঁর শিশুসুলভ ভুলের জের ধরেই গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোল খেয়েছিল মেসির দল। আজও প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের এক হাস্যকর ভুলে গোল পেয়েছে ক্রোয়াটরা। ফ্রান্স অধিনায়ক ও গোলরক্ষক হুগো লরিস কারিকুরি দেখাতে গিয়ে বল পায়ে লাগিয়ে দেন মানজুকিচের, সেখান থেকেই গোল।

আহ্, প্রায় এক মাসজুড়ে চলা পুরো বিশ্বকাপের সারাংশ ফুটে উঠল ৯০ মিনিটে। এমন ফাইনালই তো দেখতে চান সবাই, নাকি!