বিদেশে মুমিনুলের কী হয়?

এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা ভালো যায়নি মুমিনুলের। ছবি: এএফপি
এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা ভালো যায়নি মুমিনুলের। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার ইনিংসে করেছেন ১৬ রান। মুমিনুল নিজেও মানবেন—এমন বাজে সফর তাঁর আগে কখনো আসেনি। মুমিনুলের দেশ ও বিদেশের পারফরম্যান্সে আকাশ-পাতাল ফারাক। দেশে যেখানে গড় প্রায় ৬০, বিদেশে সেটি ২৫—পারফরম্যান্সে এত বৈপরীত্য কেন?


ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভীষণ হতাশ করেছে বাংলাদেশ। ভীষণ হতাশ করেছেন মুমিনুল হকও। নামের পাশে ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ বসে গেছে বলেই নয়। মুমিনুল যে মানের ব্যাটসম্যান, অতীতে যেসব দুর্দান্ত ইনিংসে খেলেছেন, তাঁর কাছে স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রত্যাশা থাকে অনেক। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজের আগেও মুমিনুলের সর্বশেষ চারটি ইনিংসই দেখুন না—৩৩, ০, ১০৫ ও ১৭৬। 

টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরিই ছিল গত ফেব্রুয়ারিতে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। দেশের মাঠে অবশ্য মুমিনুলের রেকর্ড সব সময়ই দুর্দান্ত। ১৭ টেস্টে ৫৯.০৩ গড়ে ৬ ফিফটি ও ৬ সেঞ্চুরিতে রান ১৫৯৪। বিদেশের মাটিতে বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্স ঠিক বিপরীত। ১২ টেস্টে ২৫.০৪ গড়ে ৬ ফিফটি। কোনো সেঞ্চুরি নেই। কঠিন, অচেনা কন্ডিশনে খেলতে নামলেই মুমিনুল যেন খেই হারিয়ে ফেলেন। অ্যান্টিগা টেস্টে ১ ও ০। জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও শূন্য করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রান।
দেশে যেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় প্রায় ৬০, বিদেশে সেটি ২৫—পারফরম্যান্সে এত বৈপরীত্য! এশিয়ায় তবুও গড় ৫২.৯৭, এশিয়ার বাইরে সেটিই ২৩.০৬।
২০১৪ সালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আবিষ্কার করেছিলেন, শর্ট বলে দুর্বলতা আছে মুমিনুলের। গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরে তিনিই রায় দিলেন, মুমিনুল অফ স্পিনও খেলতে পারছেন না। যদিও মুমিনুল বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কিন্তু বেশির ভাগই দেশে। ৬ সেঞ্চুরির ছয়টি তাই দেশে। বিদেশে সর্বোচ্চ ৭৭, করেছেন গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তবুও আগের সাতটি বিদেশ সফরে ছয়বার অন্তত ফিফটি পেয়েছেন মুমিনুল।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্টেই ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন। এবার তাঁর ক্যারিবীয় সফরটা হলো খুব বাজে, ৪ ইনিংসে করতে পেরেছেন মাত্র ১৬ রান। মুমিনুল নিজেই স্বীকার করবেন, এর চেয়ে বাজে বিদেশ সফর তাঁর আগে কখনো হয়নি!
অথচ নতুন কোচ স্টিভ রোডসের দৃষ্টি আকর্ষণের দারুণ এক সুযোগই ছিল মুমিনুলের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তাঁকে শুধু টেস্টে আবদ্ধ না রেখে ওয়ানডেতেও কাজে লাগানো যায় কি না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে দু-একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছে মতামত জানতে চেয়েছিলেন কোচ। রোডস খুব একটা ইতিবাচক উত্তর পাননি। আর এবার চোখের সামনেই দেখলেন, ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে কীভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন মুমিনুল।
তবে মুমিনুলের আক্ষেপ আছে, যেহেতু শুধু টেস্ট খেলেন, দীর্ঘ বিরতিতে খেলতে নেমে ছন্দ খুঁজে পেতে সময় লেগে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মুমিনুলের সামনে উদাহরণ হিসেবে চেতেশ্বর পূজারা-মুরালি বিজয় তো আছেন। দীর্ঘ বিরতিতে টেস্ট খেলতে নেমেও তাঁদের ব্যাটে খুব একটা মরচে ধরে না। কেন পারছেন না, এর উত্তর মুমিনুলই সবচেয়ে ভালো জানেন। টেস্টে এখন অনেক বেশি নির্ভর করা হয় মুমিনুলের ওপর। আর তাই তাঁর না-পারা যে দলকে অনেক বেশি ভোগাচ্ছে।