কী 'জিতলে' বিশ্বজয় হতো না ফ্রান্সের?

প্যারিসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ ট্রফিসহ ফ্রান্স দলের কোচ ও অধিনায়ক। ছবিঃ রয়টার্স
প্যারিসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশ্বকাপ ট্রফিসহ ফ্রান্স দলের কোচ ও অধিনায়ক। ছবিঃ রয়টার্স
>খেলোয়াড়ের পর কোচের ভূমিকায়ও বিশ্বকাপ জয়। বিরল কীর্তি গড়ার নেপথ্যে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম তুলে আনছেন দুই বছর আগে ইউরোর ফাইনালে হারকে। সেই ফাইনালটা জিতলে রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জয় হতো না বলে মনে করেন দেশম।

ফাইনালের আগে কথাটা বারবার বলেছিলেন। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমের কথার সুর বদলায়নি ম্যাচের পরও। ১৯৯৮ সালে নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স পরশু মস্কোতে মাঠে নেমেছিল আরেকটি বিশ্বকাপের হাতছোঁয়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে। কিন্তু ম্যাচের আগে ১৯৯৮-এ জয়ী দলটার অধিনায়ক ও বর্তমান ফরাসি দলের কোচ দিদিয়ের দেশমের ছিল এক কথা-১৯৯৮ বিশ্বকাপের শিরোপা নয়, ফ্রান্সকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করছে দুই বছর আগে নিজেদের মাটিতে ইউরোর ফাইনালে হার।

সেদিন প্যারিস কেঁদেছে, পরশু ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে মস্কো থেকে প্যারিসে ফ্রান্স ছড়িয়েছে বিশ্বজয়ের আনন্দ। আনন্দের রেশের মধ্যেই দেশমের মুখে সেই ইউরোর কথা, ‘আমরা প্যারিসে সেদিন ইউরো জিতলে হয়তো আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতাম না। ওই হারটা থেকে আমরা অনেক শিখেছি।’ দুই বছর আগে-পরের দুই ফাইনালে পার্থক্যটা কী ছিল, ফ্রান্স কোচের কাছ থেকে জানা গেল সেটিও, ‘এবার খেলোয়াড়েরা ধীরেসুস্থে খেলেছে। জানত কী করতে হবে। জিতলে কী পাবে, হারলে কী হারাবে, সেটিও জানত।’

দেশম নিজেও কি জানতেন না? দুই বছর আগের ইউরো আর এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের খেলায় যে অনেক ব্যবধান! প্রতিভায় ঠাসা দলটিকে কীভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে, সেটির নিখুঁত সূত্রই বের করেছেন ফরাসি কোচ। তাতে পুরস্কার তো এসেছেই, দেশম নিজেও গড়েছেন মারিও জাগালো ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার তৃতীয় কীর্তি। খুশিটা লুকাননি দেশম, ‘অনেক খুশির একটা অর্জন। এই বৃত্তটা খুবই ছোট। আমাদের সবারই সাফল্য সমান, তবে তাঁরা দুজন অসাধারণ খেলোয়াড় ছিলেন। আমার খেলা দেখতে এত আকর্ষণীয় ছিল না, তবে আমিও শিরোপা জিতেছি।’

ফ্রান্সের দুই বিশ্বকাপের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে দেশমের নাম। তবে শুধু নিজের নয়, ফ্রান্স কোচের মুখে থাকল খেলোয়াড়দের কীর্তিগাথাও, ‘২০ বছর আগে খেলোয়াড় হিসেবে এই অভিজ্ঞতার সুযোগ হয়েছিল আমার। সেটা আবার ছিল ফ্রান্সে, অভিজ্ঞতাটা তাই সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু ওরা আজ যা করেছে, সেটাও একই রকম বড় অর্জন, একই রকম সুন্দর।’

তরুণ ফ্রান্স দলের খেলোয়াড়দের কাছাকাছি বয়সের এক ছেলে আছে তাঁর, সেই প্রসঙ্গ টেনে বোঝাতে চাইলেন বিশ্বজয়ের মাহাত্ম্য, ‘আমার নিজের ২২ বছরের একটা ছেলে আছে। আমরা যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, সেটা বোঝার মতো বয়সও তখন ওদের হয়নি। কিন্তু এখন যাদের বয়স ১০, ১৫ বা ২০ বছর বয়স, ওদের জন্য এই অভিজ্ঞতা, এই খুশি অনেক বড়। এই খেলোয়াড়েরা কী দারুণ করেছে, সেটা কাল বা আগামী কয়েক দিনে আরও ভালো করে বুঝতে পারব আমরা।’

খেলোয়াড়দের জন্য সেটিই হয়ে থাকবে সারা জীবনের স্মৃতি। দেশমের চেয়ে ভালো তা কে জানে, ‘এরপর একেকজনের জীবন হয়তো একেক রকম হবে, তবে এই ২৩ জন খেলোয়াড় সারা জীবনের জন্য এক সুতোয় বাঁধা হয়ে গেল। আজকের পর পেশাদারির দিক থেকে কোনো কিছুই আর একই রকম থাকবে না, কারণ ওরা এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। একজন ফুটবলারের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।’ তা আর বলতে!