সাকিব-তামিমের জুটির রেকর্ডে আশা দেখছে বাংলাদেশ

সাকিবকে সঙ্গী করে ইনিংস গড়ছেন তামিম। ছবি: এএফপি
সাকিবকে সঙ্গী করে ইনিংস গড়ছেন তামিম। ছবি: এএফপি
>
  • ২০৭ রানের রেকর্ড জুটি সাকিব-তামিমের
  • ১৩০ রান করেছেন তামিম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ইনিংস
  • ১৪৬ বলে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের ধীরতম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন তামিম

‘তাদের দ্রুত রান তোলা উচিত ছিল, তাদের দ্রুত রান তোলা দরকার।’
ইয়ান বিশপের কণ্ঠে তাগাদা। মাত্র এক উইকেট হারিয়েও ৪৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ২০৭। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা দুই ব্যাটসম্যানের সেটা শোনার কথা নয়। তবে সাকিব আল হাসান দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে সেই ওভারে আউট হয়ে গেছেন। তামিম ইকবাল অবশ্য সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ধীরতম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমের ১১ বলে ৩০ রানে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে ২৭৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুরুটা একদমই মনমতো হয়নি। মাত্র ৩ বল খেলে শূন্য হাতে ফিরেছেন এনামুল হক। অন্য প্রান্তে তামিম ইকবালও তখনো কোনো রান করতে পারেননি। আন্দ্রে রাসেলের এক ওয়াইডের সুবাদে স্কোরবোর্ডে রান তখন ১। টেস্ট সিরিজের স্মৃতি ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসছিল তখন। তবে প্রাথমিক ঝাপটা সামলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৯৭ রানে আউট হওয়া সাকিব ও ১৩০ রানে অপরাজিত তামিম দেখালেন বাংলাদেশ চাইলে টিকে থাকতে পারে উইকেটে, সফরে প্রথমবারের মতো!

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে এনে দিয়েছেন ২০৭ রান। এতে নিজেদের এক রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন। এর আগে ওয়ানডেতে ৩০ বার দুজন একসঙ্গে ব্যাট করেছেন। জুটিতে সর্বোচ্চ ১৪৪ রান করেছিলেন ২০১৭ সালে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর ডাম্বুলাতে। আজ নিজেদের সে রেকর্ড টপকে গেছেন দুজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটিও এটি। এর আগে ২০১২ সালে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে খুলনায় তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৭৪ রান এনে দিয়েছিলেন এনামুল হক।

সেদিন ১২০ রান করা এনামুল অবশ্য আজ নামের পাশে শুধু শূন্যই বসাতে পেরেছেন। সাকিব-তামিমও জুটির রেকর্ডকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গণ্ডিতে আটকে না রেখে ধীরে ধীরে সব দলের বিপক্ষে রেকর্ডের দিকেই নিয়ে গেছেন। গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেট জুটিতে অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়েছিলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। সেদিনের ২২৪ রানের পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো জুটিতে দ্বিশতক রান তোলার দ্বিতীয় ঘটনা এটি।

সাকিব-তামিম যেভাবে শুরু করেছিলেন, তাতে টেস্টের স্মৃতি ফিরে না এলেও স্বাদ পাওয়া যাচ্ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে ৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১৬! নবম ওভারে রাসেলের বলে তিন চারে একটু গতি আনেন তামিম। তবে সাকিবের প্রথম চারের দেখা মিলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরও ৮ ওভার। বাউন্ডারি মারায় তামিমের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও রান তোলার গতিতে সতীর্থের চেয়ে এগিয়েই ছিলেন সাকিব।

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ভিত্তি গড়ার পরও দলের স্কোর বড় না হওয়ার দায়টা তামিমের ওপর পড়বে। ইনিংসের শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ১৩০ করেছেন বটে, কিন্তু সে পথে বল খেলেছেন ১৬০টি (১০ চার, ৩ ছক্কা)! আধুনিক ওয়ানডেতে দলের অর্ধেক বল খেলে ফেলা এক ব্যাটসম্যানের জন্য স্কোরটা একটু কমই। ১৪৬ বলে সেঞ্চুরি পাওয়ার পরও তাঁর ব্যাটে ঝড় ওঠেনি অনেকক্ষণ। ৪৯তম ওভারে মুশফিক ২২ রান তুলে ঝড়ের পথ দেখালেন, শেষ ওভারে টানা দুই ছক্কায় আক্ষেপ বাড়ালেন তামিম।

৪ চার ও ১ ছক্কাতেও ফিফটির দেখা পেতে ৮৭ বল লেগেছে তামিমের। আর মাত্র ৩ চারেই ৬৮ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন সাকিব। তবে বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররা হাতে মাখন লাগিয়ে নেমেছেন আজ। ১৭ ও ২০ রানে দুবার জীবন পেয়েছেন তামিম। প্রথমে আলজারি জোসেফের বলে কভারে ক্যাচ ছেড়েছেন অ্যাশলি নার্স। একটু পরে ওই নার্সের বলেই ক্যাচ ছেড়েছেন উইকেটরক্ষক শাই হোপ। আর ১৫ রানে সাকিবকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন ক্রিস গেইল। এবারও দুর্ভাগা বোলারের নাম জোসেফ। ৮৪ রানেও সাকিবকে উপহার দিয়েছেন হেটমেয়ার। এবার দেবেন্দ্র বিশুর বলে ক্যাচ তুলেছিলেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত ৬ চারে ১২১ বলে ৯৭ রান করেছেন সাকিব।

সাকিব আউট হওয়ার একটু পরেই আউট হয়েছেন সাব্বির রহমান (৩)। তাঁকে সরাসরি স্টাম্পিংয়ের আউট দেখিয়েছেন জোয়েল উইলসন। অথচ স্টাম্প ভাঙার সময়ও মাটিতে পা ছিল সাব্বিরের!