জার্মান জার্সি পরতে রুচিতে বাধছে ওজিলের

বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে জার্মান জাতীয় দল ছাড়লেন মেসুত ওজিল। ছবি: এএফপি
বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে জার্মান জাতীয় দল ছাড়লেন মেসুত ওজিল। ছবি: এএফপি
বর্ণবাদী গালি শুনতে আর ভালো লাগছিল না। ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মানি এবার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই মেসুত ওজিলকে শুনতে হয়েছিল বর্ণবাদী কথাবার্তা। তাতে বীতশ্রদ্ধ হয়েই জার্মান জার্সি খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি


অভিযোগটা বেশ গুরুতরই। বিশ্বকাপে জার্মানির ব্যর্থতার পর থেকেই নাকি ‘বর্ণবাদী’ গালাগাল শুনতে হয়েছে মেসুত ওজিলকে। তুরস্কে জন্ম নেওয়া এই তারকা এতে এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন রোববার। যে দেশের মানুষ কারও সঙ্গে বর্ণবাদী আচরণ করে, সে দেশের জাতীয় দলের জার্সি পরে আর কখনোই খেলবেন না তিনি।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই ঝামেলার মধ্যে ছিলেন ওজিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করে আর্সেনালের জার্সি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরেক তুর্কি বংশোদ্ভূত ফুটবলার ইলখাই গুন্ডোগানকে। ব্যাপারটা জার্মানরা রীতিমতো ঘৃণার দৃষ্টিতেই দেখেছিল। তুরস্ক আর জার্মানির কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণেই মূলত ওজিল আর গুন্ডোগান বিপাকে পড়েছিলেন।
বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে জার্মানি বিদায় নেওয়ার পর ব্যাপারটি খারাপের দিকে মোড় নেয়। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনও নাকি তাদের নিয়ে বর্ণবাদী আচরণ করতে ছাড়েনি। একেবারে আঙুল তুলে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার জন্য ওজিলকে দায়ী করা হয়েছে। রোববার এক দীর্ঘ বিবৃতিতে সেই ক্ষোভের কথাই জানিয়েছেন ওজিল, ‘জেতার পর সবাই আমাদের জার্মান বলে আর হারলেই অনুপ্রবেশকারী! আমাকে বারবার এমন কথা শুনতে হয়েছে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করাটাই যে আগুনে ঘৃতাহুতি, সেটা বোঝাই গেছে। গুন্ডোগান এর জন্য আগেই প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেও ওজিল এত দিন এটি নিয়ে মুখ খোলেননি। টুইটারে তিনি এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক সাক্ষাৎ ছিল না। নিতান্তই সৌজন্যতাবশত সেই সাক্ষাৎ নিয়ে যে এত কিছু হবে, সেটি কখনো ভাবিনি। তা ছাড়া ভুলে গেলে চলবে না। আমার দুটি হৃদয়। একটি তুর্কি, অন্যটি জার্মান। তুরস্ক আমার জন্মস্থান। আমি ছোটবেলা থেকে শিখেছি, কখনো নিজের উৎসকে ভুলে গেলে চলে না। তুরস্ক আমার উৎসভূমি। আমার মা আমাকে সেটিই শিখিয়েছেন।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে এই ছবিটি নিয়েই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ওজিল। ছবি: এএফপি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে এই ছবিটি নিয়েই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ওজিল। ছবি: এএফপি

ওজিল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমি জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফবি) কিছু কর্মকর্তার মুখ থেকে যে ধরনের কটূক্তি শুনেছি, তাতে এই দেশটির জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর কোনো রুচি আমার অবশিষ্ট নেই। আসলে আমি মনে করি বর্ণবাদী মানসিকতার লোকজনের এমন কোনো ফুটবল ফেডারেশনে কাজ করা উচিত নয়, যেখানে প্রচুর খেলোয়াড়ের নাগরিকত্বে দ্বৈত সত্তা রয়েছে।’
তিনি জার্মান গণমাধ্যমের দ্বিচারিতারও সমালোচনা করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করার পর তাঁর যে সমালোচনা হয়েছে, তার কানাকড়িও হয়নি লোথার ম্যাথাউস যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ১৯৯০ সালে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক পুতিনের সঙ্গে বিশ্বকাপের সময় দেখা করেছিলেন।
২০০৯ সাল থেকে জার্মানির জার্সিতে খেলছেন ওজিল। ৯২ ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই তারকা ফুটবলার তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। ২০১০ বিশ্বকাপে নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। ছিলেন ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। রাশিয়াতে যেকোনো কারণেই হোক নিজের খেলাটা খেলতে পারেননি ওজিল।