আজ থেকে আবার রাত জাগা শুরু!

আজ মাঠে নামছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ছবিঃ এএফপি
আজ মাঠে নামছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ছবিঃ এএফপি
>ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান দিয়ে আজ থেকে মাঠে গড়াচ্ছে ইউরোপের ক্লাব ফুটবল।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে মাতামাতি, প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটানোর উৎসবটা শেষ হয়েছে মাসখানেক হতে চলল। বিশ্বকাপ ফুটবলের খোঁয়ারি তবু যেন কাটেনি। পেছনে ফুটবলের কত রোমাঞ্চ, সামনে চার বছরের অপেক্ষা। দুই বছর পরেই অবশ্য ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ আছে, সামনের বছর আছে কোপা আমেরিকা। মহাদেশীয় ওই সব টুর্নামেন্টের আলাদা মাহাত্ম্য আছে সত্যি। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির টুর্নামেন্টগুলো দিয়ে কি আর ফুটবলপ্রেমীদের নিত্যদিনের মনের খোরাক মেটে!

ইউরোপিয়ান লিগগুলোর আবেদন ঠিক এই জায়গাটাতেই। অহর্নিশ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ, সপ্তাহান্তে উত্থান-পতনের সাক্ষী হওয়া। ফুটবল রোমান্টিকদের সেই রোমাঞ্চের রাত ফিরিয়ে দিতে আজ মাঠে নামছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে মাঠে গড়াবে স্পেনের লা লিগা, ইতালির সিরি ‘আ’ ও জার্মানির বুন্দেসলিগাও। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম দিনই মাঠে মুখোমুখি সবচেয়ে সফল দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও দুই মৌসুম আগে রূপকথা লেখা লেস্টার।

ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে ফরাসি লিগ ওয়ান ওই অর্থে এখনো অতটা দাপুটে নয়। চলতি দশকের শুরুতে পেট্রোডলারের ঝনঝনানি বাজিয়ে পিএসজি আগমনী বার্তা ঘোষণার পর থেকে ওরাই মূল আকর্ষণ। বার্সেলোনা থেকে গত মৌসুমে দলবদলের ইতিহাস গড়ে নেইমারকে নেওয়ায় সেই আকর্ষণ আরও বেড়েছে। কিলিয়ান এমবাপ্পেও নেইমারের অনুগামী প্যারিসের ক্লাবটিতে। তবে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়ে ফুটবলের নতুন মহাতারকা হয়ে ওঠা ফরাসি ফরোয়ার্ড এই মৌসুমে পিএসজির অন্যতম বড় আকর্ষণ। নেইমার-এমবাপ্পে-কাভানি পিএসজির আক্রমণভাগের এই ত্রিফলা লিগ ওয়ানে চোখ রাখতে বাধ্য করবে ফুটবলপ্রেমীদের। পিএসজির খেলা দেখতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে রোববার পর্যন্ত।

লিগ ওয়ান দেখার এটাই যদি একমাত্র কারণ হয়, প্রিমিয়ার লিগ দেখার এমন অনেক কারণ। সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং অর্থে-প্রচারে সবচেয়ে জৌলুশপূর্ণ লিগ। বিশ্বসেরা ফুটবল-মস্তিষ্কের মিলনমেলাও তো একটা বড় আকর্ষণ। পেপ গার্দিওলা, হোসে মরিনহো, ইয়ুর্গেন ক্লপ, মরিসিও পচেত্তিনোরা তো আগে থেকেই ছিলেন। এ মৌসুমে মরিসিও সারি, উনাই এমেরিরা এসেছেন, ফিরেছেন ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি। এত এত তারকা কোচ আর কোথায় মিলবে একসঙ্গে!

অন্য লিগগুলো যেখানে দিনকে দিন এক বা দুই ঘোড়ার দৌড় হয়ে উঠছে, সেখানে প্রিমিয়ার লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড টানা তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার পর এই এক দশকে আর কোনো দল কখনো টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির জন্য চ্যালেঞ্জটা কত বড়, এই একটা তথ্যই তা বলে দেয়। অবশ্য বাকি দলগুলোর চ্যালেঞ্জ আরও বড়। ২২ বছর পর আর্সেন ওয়েঙ্গারকে ছাড়া কোনো মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে আর্সেনাল। ২০০৪ সালে শেষ শিরোপার পর ১৪ বছর ধরে যারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায়নি। নতুন কোচ উনাই এমেরি কি পারবেন এই ব্যর্থতার বলয় ভাঙতে?

বছর তিনেক হতে চলল অ্যানফিল্ডের দায়িত্ব নিয়েছেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, লিভারপুলের শিরোপা-খরাও ঘোচাতে পারেননি। এক এক করে ২৮ বছর হয়ে গেল! মোট পাঁচবার আর সর্বশেষ চার বছরে দুবারের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন চেলসি, তবু তাদের কোচের চাকরিটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো হয়ে গেছে। হোসে মরিনহো, স্টিভ হল্যান্ড, গাস হিডিঙ্ক, আন্তোনিও কন্তের পর এই চার বছরে পঞ্চম কোচ হিসেবে কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন মরিসিও সারি। তাঁর চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়।

ওদিকে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পর জৌলুশ হারানো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডেভিড ময়েস, লুই ফন গালকে দিয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল মরিনহোর কাঁধে। কিন্তু দুই মৌসুমে মরিনহোও কিছু করতে পারেননি। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, মৌসুমের শেষ পর্যন্ত মরিনহো ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেকেন কি না সেটাই বড় প্রশ্ন।

আর এসব প্রশ্নের উত্তর লুকানো প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুমে।