আফগান স্পিনে 'ভয়' নেই মিঠুনের

প্রথম ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসটি ছিল দারুণ সাহসী। তাঁর কাছে তাই প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেকটাই। ছবি: এএফপি
প্রথম ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসটি ছিল দারুণ সাহসী। তাঁর কাছে তাই প্রত্যাশা বেড়ে গেছে অনেকটাই। ছবি: এএফপি
নিজে স্পিন ভালো খেলেন বলেই হয়তো আফগান স্পিনে ভয় দেখেন না মোহাম্মদ মিঠুন

বাংলাদেশ দলে এখন ‘সাহস’-এর ছড়াছড়ি। তামিম ইকবাল ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাটিংয়ের সাহস দেখালেন। শুরুর বিপর্যয়ের পরও মুশফিকুর রহিমের সাহসী সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে দেখাল জয়ের পথ। মুশফিকের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটিতে মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটও তো কম সাহসী ছিল না!

সেই মিঠুনই কাল ঘোষণা করলেন, ‘আমি মনে করি, ভয় জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু...।’

অনুশীলনে যাওয়ার আগে দুবাইয়ের টিম হোটেলে মিঠুন কথাটা বলেছেন আসলে ভিন্ন উপলক্ষ সামনে রেখে। ২০ সেপ্টেম্বর পরের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। দেরাদুনে গত জুনের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের বিপক্ষে লেজেগোবরে অবস্থা হওয়ার পর এখন আফগানিস্তানের ‘আ’ শুনলেই ভয় পাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। মিঠুন সেই ভয় কাটাতেই বলেছেন, ‘আমি মনে করি, ভয় জিনিসটা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটাকে কাটাতে হবে। হতে পারে, ওদের দুই-তিনটা বিশ্বমানের স্পিনার আছে। কিন্তু এমন না যে তাদের খেলা যায় না, খেলা যায়।’

খেলা যায়, রশিদ খানদের কীভাবে খেলতে হবে, সে জন্য প্রয়োজন সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা। মিঠুন জোর দিলেন সেটার ওপর, ‘আমরা যদি আগে থেকেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করি, আমার মনে হয় সমস্যা হবে না। র‍্যাঙ্কিং বলেন, রেকর্ড বলেন—সব দিকেই ওয়ানডেতে ওরা আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। আমার মনে হয় না, খুব বেশি চিন্তার কিছু আছে।’ সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া দুরন্ত জয়ের রেশ তো আছেই। যদিও মিঠুন ওই ম্যাচ থেকে আত্মবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নেওয়ার দেখছেন না।

বাংলাদেশ দলের সামনে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে দাঁড়াতে পারেন মিঠুন নিজেও। ২০১৪ সালে ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ২৬ রান করেছিলেন। এটুকু শুনলে তাঁর অভিষেকটাকে মনে হতে পারে খুবই সাদামাটা। কিন্তু ওই ম্যাচের স্কোরকার্ডে একবার চোখ বোলালেই বুঝবেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফরমার মিঠুন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সাহসী তাঁর অভিষেক থেকেই। তাসকিন আহমেদের ৫ উইকেটের সৌজন্যে ভারতকে সেদিন ১০৫ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৮ রানে। ওই ৫৮-এর মধ্যে মিঠুনের একারই ২৬। সাহস আছে বলেই তো ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

এরপরও মিঠুন কী কারণে ওয়ানডে দলে নিয়মিত হলেন না, সেটা একটা প্রশ্ন। ভারতের বিপক্ষে ওই সিরিজের পর চার বছর আর ওয়ানডে খেলারই সুযোগ পাননি। এ বছরের জানুয়ারিতে দলে ফিরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে করেছিলেন ১০ রান। এরপর এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই চিনিয়েছেন নিজেকে। মিঠুনের ৬৭ বলে ৬৩ রানের যে ইনিংস নিয়ে মুশফিকের মন্তব্য, ‘ও আমার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে।’ আর মিঠুনের খেলা দেখে সহজ মনে হয়েছে ব্যাটিংটাও। প্রথম ওভারে লিটন ও সাকিবের বিদায়ের পর দ্বিতীয় ওভারে চোট পেয়ে তামিম বেরিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিংটা খোলসে ঢুকে পড়েছিল। মিঠুনের ব্যাটেই প্রথম ফুটে ওঠে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার প্রত্যয়। তাঁকে এশিয়া কাপের দলে ফেরানো প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, ‘মিঠুন স্পিন খুব ভালো খেলে।’ কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেখা গেল, পেস-স্পিন সব বোলিংয়েই তিনি দারুণ স্বচ্ছন্দ।

স্পিনের বিপক্ষে মিঠুনের আসল পরীক্ষাটা অবশ্য হবে আগামী পরশু। রশিদ খানের নেতৃত্বে আফগান স্পিন আক্রমণ খুবই শক্তিশালী। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জও এটাই।