ভারতীয় ভক্তের জন্য পাকিস্তানি ভক্তের অন্য রকম ভালোবাসা

বশীর চাচা ও সুধীর গৌতম। ছবি: টুইটার
বশীর চাচা ও সুধীর গৌতম। ছবি: টুইটার
টাকা-পয়সার টানাটানি থাকায় এবার এশিয়া কাপে ভারতকে সমর্থন দিতে আরব আমিরাত আসা হতো না সুধীর গৌতমের। ভারতের এই ক্রিকেটভক্তকে আমিরাত যাওয়া এবং সেখানে থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন পাকিস্তানের সমর্থক বশির চাচা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের এই দুই সমর্থক সৃষ্টি করেছেন সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ


তর সইছে না? আর মাত্র একটা রাত। এরপরই বেজে উঠবে ভারত-পাকিস্তান ময়দানি লড়াইয়ের ঘণ্টা। দুই দলের সমর্থকেরা তো বেশ আগে থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের মনোভাব সেই প্রবাদটির মতো, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’। এ নতুন নয়। ক্রিকেটের চিরন্তন এই দ্বৈরথের শুরু থেকেই এমন উত্তাপ ছিল, থাকবেও। কিন্তু এবার এশিয়া কাপে চিত্রনাট্যটা পাল্টে দিয়েছেন দুই প্রতিবেশী দলের অন্যতম সেরা দুই সমর্থক। তাঁরা একে-অপরকে জড়িয়েছেন সহযোগিতা ও সম্প্রীতির বন্ধনে।

বশির চাচা ও সুধীর গৌতম। প্রথম ব্যক্তিটি পাকিস্তানের বিখ্যাত ‘জলিল চাচা’র পর পাকিস্তান ক্রিকেটের নতুন ‘চাচা’। পেশায় ব্যবসায়ী, আমেরিকার শিকাগোতে খাবারের দোকান রয়েছে। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রতি টান থেকে তিনি ছুটে বেড়ান স্টেডিয়াম থেকে স্টেডিয়ামে। সরফরাজদের ম্যাচ থাকলে তাঁকে গ্যালারিতে দেখা যাবেই। ঠিক সুধীর গৌতম যেভাবে অনুসরণ করেন ভারতীয় দলকে। সর্বাঙ্গে ভারতের পতাকা এঁকে সুধীরকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিতে দেখা যায় গ্যালারিতে। কিন্তু এবার এশিয়া কাপে রোহিতদের সমর্থন দিতে সুধীরের আরব-আমিরাত যাওয়া হয়ে উঠছিল না। মনপ্রাণ খুব করে চাইলেও আর্থিক সমস্যার কারণে সুধীর আরব আমিরাতে যাওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন।

এমন সময় তাঁকে ফোন করেন বশির চাচা। দুজনের সখ্য আজকের নয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থাকলে গ্যালারিতে তাঁদের একসঙ্গেই দেখা যায় সব সময়। যে যাঁর দলের হয়ে গলা ফাটালেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কদর্য চেহারাটা তাঁদের মধ্যে কখনোই দেখা যায়নি। সহজ কথায়, দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোড়কে কোথায় যেন একটা নিরেট ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। বশির চাচা সেই ভালোবাসা থেকেই সাহায্য করেছেন সুধীরকে।

ফোনে বশির চাচা সুধীরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সে আরব আমিরাত যাচ্ছে কবে? কোথায় থাকা-খাওয়া? কিন্তু সুধীর তাঁর অপারগতার কথা জানালে বশির চাচা সিদ্ধান্ত নিতে এতটুকু দেরি করেননি। সুধীরকে তিনি বলেন, ‘তুমি শুধু আরব-আমিরাত চলে এসো। বাকিটা আমি দেখব।’

সংবাদমাধ্যম ‘এক্সট্রাটাইম’কে বশির চাচা জানিয়েছেন, সুধীরের প্রতি তিনি নিখাদ হৃদয়ের টান থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘এটা নির্ভেজাল ভালোবাসা। সৃষ্টিকর্তার রহমতে টাকা আসবে যাবে। আমি সুধীরকে বলেছি, তুমি শুধু এখানে (আরব আমিরাত) চলে এসো, বাকি ব্যবস্থা আমি করব। আমি কোনো ধনী ব্যক্তি নই। তবুও মনে করি যদি তাঁকে সাহায্য করি তবে সৃষ্টিকর্তা খুশি হবেন।’

একই সংবাদমাধ্যমকে সুধীর বলেছেন, ‘আমি শুধু ভিসার ব্যবস্থা করেছি। চাচা টিকিটের ব্যবস্থা করেন। শুধু তা–ই নয়, তিনি হোটেল থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন।’

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকের মধ্যে এই সম্প্রীতি কিন্তু কাল থাকবে না। এশিয়া কাপে ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। সুধীরের বিশ্বাস, রোহিত শর্মার দল এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেবে, ‘গত বছর আমরা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালে হেরেছি কিন্তু এ বছরটা আমাদের। এবার আমরা প্রতিশোধ নেব এবং এশিয়া কাপ জিতব।’

বশির চাচা অবশ্য প্রতিশোধের রাস্তা মাড়াননি। বরং ভারত জিতলে তিনি খুশিই হবেন! পাকিস্তানের এই পাঁড়ভক্তটি তাঁর দরাজ দিলের দরজা খুলে বললেন, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ প্রতিবছর হবে। গতবার আমরা জিতেছি এবার তোমরা জিতলে খুশি হব।’