নেইমার-এমবাপ্পেদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন

ইউরোপে আরেকটি পরীক্ষায় ফেল করেছে পিএসজি। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপে আরেকটি পরীক্ষায় ফেল করেছে পিএসজি। ছবি: রয়টার্স

চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে। গ্রুপ পর্বে একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে সব দল। নতুন মৌসুমেও পুরোনো কিছু স্বাদ মিলছে। গতবারের দুই ফাইনালিস্টের শুরুটা হয়েছে জয় দিয়ে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে হারিয়েও জৌলুশ কমেনি রিয়াল মাদ্রিদের। লিভারপুলও শক্তিশালী পিএসজিকে হারিয়ে পেয়েছে প্রত্যাশিত জয়। আর লিভারপুলের জয়ের সুবাদেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে নেইমারদের ওপর দিয়ে।

অ্যানফিল্ডে ৩-২ ব্যবধানের হারকে কোনোভাবেই খারাপ ফল বলা যায় না। নিজেদের মাঠে সমর্থকদের সামনে পেয়ে দুর্দান্ত খেলে লিভারপুল। তবু কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার কিংবা এডিনসন কাভানিদের সমালোচনা চলছেই। দলের রক্ষণকাজে এ তিনজনের একদমই মনোযোগ না দেওয়া, বাকিদের কাছে রক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকাটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না কেউ। আর সমালোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ব্যালন ডি’ অর জয়ী জ্যঁ পিয়েরে পাপিন।

ফ্রেঞ্চ লিগে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে পিএসজি। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ এলেই সে দাপট হারিয়ে যাচ্ছে। গত মৌসুমে গ্রুপ পর্বে তবু দাপুটে শুরু হয়েছিল। এবার তো প্রথম ম্যাচেই হার। শুধু লিভারপুলের কাছে হার বলে কথা নয়। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি আক্রমণভাগ গত মৌসুমেও কঠিন ম্যাচগুলোতে প্রত্যাশিত ফল এনে দিতে পারেনি। রিয়ালের বিপক্ষে ঘরে-বাইরে দুই ম্যাচেই হেরেছে পিএসজি। বায়ার্ন মিউনিখের মাঠেও হেরেছে তারা। অথচ চ্যাম্পিয়নস লিগে সাফল্য পেতেই গুচ্ছের টাকা খরচ করেছে পিএসজি। পাপিন তাই দোষ দেখছেন আক্রমণের তিনজনের, ‘পিএসজির হয়ে ওরা নায়ক নয় বরং এক একটা ইগো (অহংকারী তারকা)। তুমি যেই হও না কেন, দলের হয়ে কাজ তোমাকে করতে হবে। ফ্রান্সে যে তারকা দেখি আর বাইরের তারকার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। ফ্রান্সে আমরা ধরেই নেই ওদের সামলানো সম্ভব না। লিভারপুল যদি ওদের একত্রে খেলাতে পারে , তবে আমরা এখানে পারি না কেন? নেইমার যখন বার্সেলোনায় খেলত তখন তো দলের রক্ষণে ঠিকই সাহায্য করত।’

এসি মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী এই সাবেক ফরোয়ার্ডের দাবি, নেইমার-এমবাপ্পেদের মানসিকতাতেই সমস্যা, ‘ওদের দক্ষতা আছে, সেটা সব সময় থাকবে। এটা খেলোয়াড়দের ডিএনএতেই থাকেই। সেখানে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওদের এক হয়ে খেলতে হবে। ওদের এই ক্ষমতা দিয়ে চারপাশের সবাইকে সুবিধা করে দিতে হবে। দলের সেরা তারকা কে, এটা মাথায় আনা চলবে না। ক্লাবের লক্ষ্য হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা। কিন্তু খেলোয়াড়দের মাথায় যদি সে চিন্তা না থাকে, তবে ওরা জীবনেও সেটা পারবে না।’

ফ্রেঞ্চ লিগে শক্ত প্রতিপক্ষ না পাওয়াকেই পিএসজির জন্য প্রধান বাধা বলছেন পাপিন। ইউরোপে গিয়ে শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলতে গিয়ে তাই পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে। তবে পাপিন আশাবাদী, একবার কোনো বড় প্রতিপক্ষকে হারালেই হয়তো পথ খুঁজে পাবেন নেইমার-এমবাপ্পেরা, ‘এমন একটা ম্যাচ জেতা যা বদলে দেবে সবকিছু। পিএসজি কখনো দারুণ কোনো দলকে হারায়নি। ওরা এত শক্তিশালী... ফ্রান্সে সব জয়ের পর এখন ইউরোপেও দাপট দেখাতে চাইতে হবে পিএসজিকে। আমরা যখন মার্শেইয়ে খেলতাম যখনই বড় কোনো ইউরোপের দলের সামনে পড়তাম হারাতে চাইতাম। ফুটবলীয় দক্ষতা ও টেকনিকে ওরা হয়তো এগিয়ে থাকত কিন্তু মানসিকভাবে আমরাই শক্তিশালী ছিলাম।’

নেইমার-এমবাপ্পে-বুফনদের দল ফুটবলে এখন ইউরোপের অনেক বড় দলকেই টেক্কা দিতে পারে। মানসিক শক্তির ঘাটতিটা মেটাতে চাইলে আগে তারকাখ্যাতির কথা ভুলতে হবে। নেইমাররা সেটা করতে পারবেন?