আহা, এমন ওভার!

শেষ ওভারে জাদু নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ছবি: এএফপি
শেষ ওভারে জাদু নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ছবি: এএফপি
শেষ ওভারে মাত্র ৭ রানের পুঁজি নিয়ে বল হাতে নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। চরম চাপের মুখেও মাত্র ৪ রান দিয়েছেন। ব্যাটসম্যানরা নিতে পেরেছেন দুই রান, বাকি দুই রান এসেছে লেগ বাই থেকে। অসাধারণ এক ওভারে বাংলাদেশকে স্মরণীয় এক জয় উপহার দিয়েছেন মোস্তাফিজ

এমন কিছুর শিকার বাংলাদেশই হয়। শেষ ওভারে ৮ রান দরকার। এমন অবস্থায় ব্যাটিং দল যদি বাংলাদেশ হয়, সে ক্ষেত্রে কীভাবে না কীভাবে যেন ২-৩ রান কম দিয়ে বিজয়ী হয় প্রতিপক্ষ দল। কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন হলো। তার আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছিল ভারত। আর ফিল্ডিংয়ে থাকা দল যদি বাংলাদেশ হয়, তাহলে শেষ বলে হলেও ব্যাটিং দল জয় পেয়ে যায়। ওই যে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। আর এশিয়া কাপেরই ফাইনালে ২ রানে হেরে যাওয়ার সেই দুঃখ যে কত দিন বয়ে বেড়াতে হবে, কে জানে!

এমন কিছুকেই ভাগ্য মেনে নিত বাংলাদেশের সমর্থকেরা। অবশেষে আজ অন্য কিছু হলো। কঠিনতম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশই পেয়েছে জয়। মোস্তাফিজের শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান নিয়ে ৩ রানে হেরেছে আফগানিস্তান।

৪৯তম ওভারে সাকিব আল হাসান যখন এক ছক্কাসহ ১১ রান দিলেন, এরপরই কাঁধ ঝুলিয়ে মাঠে ঘুরে বেড়াতে পারত বাংলাদেশ। আগের ৮ ওভারে মাত্র ৪২ রান দিলেও শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ৭ রানকে পুঁজি করে লড়বেন, এতটা আশা করা যাচ্ছিল না। মোস্তাফিজ যে বোলিংয়ে যে জাদুর ন্যূনতম ছোঁয়াই ছিল না! কে জানত, নিজের সোনালি সময়ের কিছু ট্রিকস জাদুকর জমিয়ে রেখেছেন শেষ ওভারের জন্য!

মোস্তাফিজের প্রথম বলটা ঝাঁপিয়ে পড়া ফিল্ডারের সামনে দিয়ে যখন এক্সট্রা কভারে চলে গেল, তখন মনে হয়েছিল আরেকটি হারই বোধ হয় লেখা হচ্ছে বাংলাদেশের কপালে। প্রথম বলেই দুই রান। সমীকরণটা তখন আফগানিস্তানের জন্য আরেকটু সহজ, ৫ বলে ৬ রান। ৪ উইকেট হাতে থাকা এক দলের জন্য এ আর এমন কী?

পরের বলটা খাটো লেংথে ফেললেন মোস্তাফিজ। পুল করতে গিয়ে জায়গার অভাবে ভুগলেন রশিদ খান। মোস্তাফিজের হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন আফগান ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম বিজ্ঞাপন। ৪ বলে দরকার ৬ রান। পরের বলটাই চলে গেল শর্ট লেগে থাকা মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে। ক্যাচের আবেদনে ফেটে পড়ল বাংলাদেশ। কিন্তু লেগ বাইয়ের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন আম্পায়ার। সঠিক সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কিছু বলার ছিল না বাংলাদেশের। ৩ বলে ৫ রান দূরত্বে আফগানিস্তান। একটি চারেই তো ম্যাচ হেলে পড়বে আফগানিস্তানের দিকে।

চতুর্থ বলের জন্য নিজের সেই প্রিয় পুরোনো অস্ত্রকে খুঁজে নিলেন মোস্তাফিজ। অফ কাটারটি বুঝতেই পারলেন না গুলবাদিন নাইব। ২ বলে দরকার ৫ রান।

পরের বলেও নাইবকে পরাস্ত করলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু পায়ে লাগা সে বলে দৌড়ে স্ট্রাইক পাল্টালেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। ১ বলে ৪ রান দরকার আফগানিস্তানের। ব্যাটের কোনায় লেগেও চার হয়ে যেতে পারে, ম্যাচ হেরে যেতে পারে বাংলাদেশ।

মোস্তাফিজ সেটা হতে দিলেন না। সরে এসে মারতে গিয়ে নিজের ব্যাটই উড়িয়ে ফেললেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। কিন্তু ব্যাটে বল লাগল না। বল সোজা মুশফিকের হাতে। শেনওয়ারি আর দৌড়ানোর ঝামেলায় গেলেন না। কিন্তু পুরো বাংলাদেশ দল তখন দৌড়াচ্ছে। বারবার এভাবে কাছে এসেও হারের জ্বালা সহ্য করা এক দল অবশেষে শেষ ওভারে স্বল্প পুঁজিতেও জয় পেয়েছে আজ। আবেগের বিস্ফোরণ আজ মেনে নিতেই হবে।