মাশরাফির অবিশ্বাস্য ক্যাচে ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ
>
বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েও ২৩৯ রানে অলআউট হয়ছে বাংলাদেশ। বোলাররা দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন ১৮ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে। ইমাম-শোয়েবের জুটিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল পাকিস্তান। মাশরাফির দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরেছেন এশিয়া কাপে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান শোয়েব। ২৩ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ৯১/৪
পাঁজরের চোটটা আছে। ব্যথানাশক ইনজেকশন নিয়ে সেই চোট কোনোভাবে সামলে যাচ্ছেন। কিন্তু কন্ডিশনকে বাগে আনার যে কোনো উপায় নেই। মরুর মাঝে তীব্র গরমে মুশফিকুর রহিম কখনো কখনো ভীষণ হাঁপিয়ে উঠছেন। মাংসপেশিতে টান পড়েনি তো—মুশফিকের ক্লান্তিমাখা মুখটা কখনো এমন সংশয়ও জাগিয়ে তুলছে! ফিজিওর সাময়িক শুশ্রূষা নিয়ে আবারও উঠে দাঁড়াচ্ছেন। মুশফিক এভাবেই উঠে দাঁড়ান, উঠে দাঁড়িয়েছেন অতীতে। দল যত চাপে, তাঁর ব্যাট ততই হয়ে ওঠে চওড়া। চাপের মধ্যে মুশফিক আজও লড়লেন। কিন্তু সেই লড়াইয়ের সমাপ্তি হলো বড় আফসোস নিয়ে। মুশফিক ফিরলেন ৯৯ রানে!
পেরেও না-পারার যন্ত্রণা মুশফিককে পোড়াবে। আরও বেশি পোড়াবে দলের শেষ স্কোরটার চেহারা দেখে। ৫ উইকেটে ১৯৭ তোলা বাংলাদেশ যে ২৩৯ রানে অলআউট হয়ে গেল! ৪১.৪ ওভারে মুশফিক যখন ফিরলেন, দলের স্কোর তখনো ৬ উইকেটে ১৯৭। চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাওয়ার সম্ভাবনা তখনো শেষ হয়ে যায়নি। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে আজ বিদ্যুৎ চমকায়নি, মেহেদী মিরাজ ছোট কাঁধে বড় দায়িত্ব নিতে পারেননি। মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং-সত্তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। শেষ ৫০ বলে বাকি ৪ উইকেটে তাই ৪২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ । স্লগ ওভারটা ভালোভাবে কাজে না লাগাতে পারার আফসোস, মুশফিকের সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ার আফসোস, সম্ভাবনা জাগিয়েও ২৬০-এর লক্ষ্য দিতে না-পারা...তার অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুতেই পাকিস্তান ১৮ রানে হারিয়েছে ৩ উইকেট।
শুরুটা করেছিলেন মিরাজ। পাকিস্তানের ইনিংসের পঞ্চম বলেই ফখর জামানকে রুবেলের ক্যাচ বানান। অবশ্য মিডঅনে রুবেল যেভাবে ক্যাচটা ধরেছেন, লেখা উচিত: ফখরকে মিরাজের উইকেট বানিয়েছেন রুবেল। পরের ওভারে বাবর আজমকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। ৩ বলের মধ্যে দুই ব্যাটসম্যান নেই পাকিস্তানের। দলের বিপদ দেখে ওপরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন সরফরাজ। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তাঁকে মুশফিকের ক্যাচ বানান মোস্তাফিজ। ১৮ রানে ৩ উইকেট নেই, বাংলাদেশের বিপক্ষে এতটা বাজে শুরু আগে কখনো করেনি পাকিস্তান। সেখান থেকে ৬৭ রানের জুটি গড়ে ভয়ই দেখাচ্ছিলেন ইমাম ও শোয়েব মালিক। মাশরাফির দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরেন শোয়েব (৩০)। ইমাম অবশ্য ফিফটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেটটি পেতে পারত আরও আগে। মাহমুদউল্লাহ ঠিকমতো ফিল্ডিং করলে ইমাম অথবা মালিকের যেকোনো একজন রান আউটের শিকার হতেন ঢের আগে । সেই মূল্য চুকানো গেছে মাশরাফির ক্যাচে। ইমাম যদিও গলার কাঁটা হয়ে আছেন। তবে ম্যাচের লাগাম আবার বাংলাদেশের হাতে।
১২ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশরও। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশকে আবারও পথে ফেরানোর দায়িত্ব বর্তাল মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ওপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ দুজন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩১ রান যোগ করে দলকে বাঁচিয়েছিলেন। আজ জুটিটা হলো ১৪৪ রানের। দলকে নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন, মিঠুন একটা ধন্যবাদ পাবেন। কিন্তু পরক্ষণে তাঁকে কাঠগড়ায় উঠবে হবে দৃষ্টিকটু আউটের জন্য। হাসান আলীর বলটা ওভাবে না চালালে সুন্দর ইনিংসটার সমাপ্তি ৬০ রানে শেষ হয় না। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র ৪টি, মিঠুন এই তীব্র গরমে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ভীষণ তৎপর থেকে ৪৪ রান নিয়েছেন দৌড়ে।
তাঁর চেয়েও বড় অবদান মুশফিকের ৯৯ রানের। মুশফিক সেঞ্চুরি করলেই ঝড় তোলার চেষ্টা করতেন। দলের স্কোর আরও বড় করতেন। এসব তো হয়ইনি, বরং পেয়েছেন প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯৯ রানে আউট হওয়ার যন্ত্রণা। শুধু বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে কেন, এশিয়া কাপেই প্রথমবারের মতো কোনো ব্যাটসম্যান ফিরলেন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থেকে।
আফসোস-আক্ষেপ—এসব যদি দূরে সরিয়ে রাখেন, আজ মুশফিক যদি ওই ৯৯ রানের ইনিংসটাই না খেলেন, বাংলাদেশের ২৩৯ রানের স্কোর পাওয়াই কষ্ট! ইমরুলের সঙ্গে হঠাৎ উড়িয়ে নেওয়া সৌম্য সরকারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল আজ ‘সেমিফাইনালে’ রূপ নেওয়া মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটায়। কী করলেন বাঁহাতি ওপেনার? অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলটা অহেতুক পুল করতে গিয়ে শূন্যে তুলে দিয়ে শূন্য রানেই ফিরলেন। রঙিন পোশাকে উপেক্ষিত হয়ে পড়া মুমিনুল হক টুর্নামেন্টে তাঁর দ্বিতীয় সুযোগটি পেলেন। তিনিও কী করলেন, শাহিনের গতির কাছে হার মেনে বোল্ড ৫ রানে। খানিক পরে লিটন দাসের স্টাম্প উপড়ে ফেললেন জুনায়েদ খান।
মিঠুন আত্মাহুতি দিলেও মুশফিক তবুও ছিলেন। কিছুতেই হার মানব না—এ পণে যেন লড়ে গেছেন। চোট, কন্ডিশন সব উপেক্ষা করে পাকিস্তানকে চোখ রাঙিয়ে গেছেন। ৯ চারে ৯৯ রান, মুশফিকের সেঞ্চুরি পাওনাই ছিল। অথচ হলো না। শাহিন বলটা ভালো করেছেন, থিতু হয়ে মুশফিক আরেকটু সতর্ক হতে পারতেন—অনেক যুক্তিই আসতে পারে। তবে দিন শেষে মুশফিক দুষতে পারেন ভাগ্যকে। যদিও দল যদি জেতে, উঠে যায় ফাইনালে, সব যন্ত্রণা নিমিষেই ভুলে যাবেন নিশ্চিত!