উইকেটে যে বাঁক, মনে হচ্ছে তিন দিনের ম্যাচ খেলছি!

অলক কাপালির কাঠগড়ায় সিলেটের উইকেট। ছবি: প্রথম আলো
অলক কাপালির কাঠগড়ায় সিলেটের উইকেট। ছবি: প্রথম আলো
>

বিপিএলে সিলেট পর্বের প্রথম দিনেই আলোচনায় উইকেট

টি-টোয়েন্টি শুধুই ব্যাটসম্যানদের খেলা। অন্তত এবারের বিপিএলে কথাটা এখনো পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। বরং বোলারদের ছড়ি ঘোরানোর দৃশ্যই বেশি চোখে পড়ছে। কালকের কথাই ধরুন, দুটো ম্যাচই লো-স্কোরিং। এর মধ্যে দিনের শেষ ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে সিলেট সিক্সার্স তো ৬৮ রানেই গুটিয়ে গেল। বিপিএলের ঢাকা পর্বে উইকেট নিয়ে কথা হয়েছে। কাল সিলেট পর্বের প্রথম দিনেও কাঠগড়ায় উইকেট। অলক কাপালি তো বলেই দিলেন, উইকেটে যে বাঁক মনে হচ্ছে তিন দিনের ম্যাচ খেলছি!

সিলেটর ইনিংসে দ্বিতীয় ওভারেই পাঁচ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট নিয়েছেন কুমিল্লার স্পিনার মেহেদী হাসান। পরে আরও একটি উইকেট নেন তিনি। সিলেটের ইনিংসে ৬টি উইকেট নিয়েছেন কুমিল্লার স্পিনাররা। বিশেষ করে মেহেদী বড় বড় বাঁক পেয়েছেন। অথচ সিলেট স্টেডিয়ামের বাইশ গজ বেশ বাউন্সি বলে আচরণ করে বলে আলোচনায় হয়েছে। বল নাকি ব্যাটে আসে ভালোই। কিন্তু কাল উইকেট তেমন আচরণ করেনি। বল ব্যাটে এসেছে ঢিমেতালে, বড় বড় বাঁক নিয়ে। যা টি-টোয়েন্টির মার মার কাট কাট ব্যাটিংয়ের জন্য মোটেও আদর্শ নয়।

কাল সিলেট-কুমিল্লা ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই উইকেটের প্রসঙ্গ উঠল। সিলেটের ইনিংসে একাই প্রায় অর্ধেক রান (৩৩*) করা কাপালি জানিয়ে দিলেন উইকেটের আচরণ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কাপালি বলেন, ‘গত বছর উইকেট ফ্ল্যাট ছিল। টি-টোয়েন্টির জন্য সেরা উইকেট ছিল। আমরা ওভাবেই পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে উইকেটের আচরণ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। একটু সমস্যা হয়েছে। উইকেটে যেভাবে বাঁক নিচ্ছে মনে হয়েছে তিন দিনের ম্যাচ খেলছি।’

সিলেটের খুব কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে কাপালি সরাসরি উইকেটকে দোষারোপ করেননি। তবে ৬৮ রানে গুটিয়ে যাওয়াকে স্রেফ ‘দুর্ঘটনা’ বলেই মনে করছেন এক সময় জাতীয় দলে খেলা এই অলরাউন্ডার, ‘আমরা শেষ তিন ম্যাচ কিন্তু খারাপ খেলি নাই। আজকে (কাল) যেটি হয়েছে আমার কাছে মনে হয় এটি আসলে দুর্ঘটনা। এখনই যে সব শেষ তা কিন্তু নয়। সামনে আরও ম্যাচ আছে।’

তামিম ইকবালও উইকেট নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। ছবি: প্রথম আলো
তামিম ইকবালও উইকেট নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট-কুমিল্লা মুখোমুখি হওয়ার আগে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে লড়েছে খুলনা টাইটানস। এই ম্যাচেও উইকেটের আচরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাউন্সি উইকেটে সুবিধা পেয়েছেন স্পিনাররা। ১০ রানে ৩ উইকেট নেন খুলনার স্পিনার তাইজুল ইসলাম। স্পিনারদের এই সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি সিলেট-কুমিল্লা ম্যাচ শেষে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলেন তামিম ইকবাল। কুমিল্লার এই ওপেনার বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে। সাধারণত সিলেটের উইকেট ভালো থাকে। এত শিশির পড়ছে, শীতকালে আমাদের দেশের উইকেট গুলো নরম হয়ে যায়। তখনই স্পিন বেশি করা শুরু করে। আমরা তো অবশ্যই আশা করব যে আরও ভালো উইকেটে খেলা হোক। তবে আমরা অনেক সময় বেশি দোষারোপ করে ফেলি গ্রাউন্ডসম্যানদের।’

তবে উইকেটের আচরণ যে অস্বাভাবিক ছিল, সে কথাও স্বীকার করেছেন তামিম, ‘যারা খেলছে তাঁরা বুঝতে পারছে কি হচ্ছে। এটা মোটেও সহজ নয়। আপনি প্রত্যাশা করবেন না প্রথম ওভারেই বল টার্ন করবে। সাধারণত টি-টুয়েন্টি উইকেট ফ্ল্যাট, হাই-স্কোরিং হয়।’ সেটি যেহেতু হচ্ছে না তাই এমন উইকেটের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে হবে। আর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে উইকেট সাহায্য না করলেও সুযোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন তামিম। তবে জাতীয় দলের এই ওপেনার মনে করছেন, দলগুলোর উচিত ১৮০ রানের জায়গায় কীভাবে ১৪০ রান করা যায় তা নিয়ে ভাবা। যেহেতু উইকেট সেভাবে সাহায্য করছে না।

তামিম বলেন, ‘এটাও ঠিক মানিয়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু সংস্করণটাই এমন যে আপনাকে সুযোগ নিতেই হবে। উইকেট যদি সাহায্য না করে তাহলে কাজ কঠিন হয়ে যায়। উইকেট নিয়ে না বেশি কথা বলে আমাদের ১৮০ জায়গায় ১৪০ কীভাবে করতে পারি সেটায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমার কাছে যেটা মনে হয় বেশির ভাগ দল এই ভুল করছে। তবে এখনো টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে আছি আমরা। আমি নিশ্চিত যারা ভালো ব্যাটসম্যান আছে তাঁরা রান করার উপায় খুঁজে পাবে।’