শ্রীলঙ্কার চাকরিও হারাচ্ছেন হাথুরু?

>
শ্রীলঙ্কার চাকরি হারানোর শঙ্কায় হাথুরু। ছবি: প্রথম আলো
শ্রীলঙ্কার চাকরি হারানোর শঙ্কায় হাথুরু। ছবি: প্রথম আলো

হঠাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হাথুরুকে ডেকে পাঠিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সন্তুষ্ট নয় হাথুরুর ওপর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর চাকরিও হারাতে পারেন তিনি, এমন গুঞ্জন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে

শনিবার কেপটাউন ম্যাচে মনোযোগ কোথায় থাকবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের? মাঠে দলের খেলায় মন দেবেন নাকি পরদিন কী হবে তা নিয়ে ভাবতে বসে যাবেন? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা। ৪-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা লঙ্কানদের যখন ধবলধোলাই থেকে বাঁচার উপায় খোঁজার সময়, তখন আলোচনায় হাথুরু, যাঁকে দেশে ফিরতে হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজের পরই।

ওয়ানডে সিরিজ শেষে হাথুরুর সঙ্গে বসতে চায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর চাকরি হারাতে পারেন তিনি, এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। এসএলসি অবশ্য জানিয়েছে, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিয়ে হবে আলোচনা’। বিশ্বকাপের কথা বললেও হাথুরুর কাছে আসলে জবাবদিহি চাওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ আলোচনায় বিশ্বকাপের দল ছাড়াও শ্রীলঙ্কা দলের বর্তমান পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব—নানা বিষয়ে কথা হবে। হাথুরুর অবর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্টিভ রিক্সন। এসএলসির এক কর্মকর্তা ক্রিকইনফোকে জানিয়েছেন, ‘হাথুরু না থাকলে রিক্সন কেমন করেন, সেটি দেখতে চায় বোর্ড।’

আলোচনা যা-ই হোক, এসএলসির একাধিক সূত্র শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, চাকরি খোয়ানোর জোর সম্ভাবনা আছে হাথুরুর। রিক্সনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া সেটিরই অংশ। যদিও এসএলসির সঙ্গে হাথুরুর চুক্তি ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই চুক্তি শেষ করতে চাইলে এসএলসিকে মোটা অঙ্কের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।

চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগেই কেন এসএলসি হাথুরু-পর্ব শেষ করতে চাচ্ছে? ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ-অধ্যায় আকস্মিকভাবে শেষ করা হাথুরু শ্রীলঙ্কা দলের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। তাঁর শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে তিন সংস্করণের সিরিজেই হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে এর পর খেই হারাতে থাকে লঙ্কানরা । হাথুরুর অধীনে ৪৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচের ১৬টি জিততে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। গত দেড় বছরে হাথুরুর সবচেয়ে বড় সাফল্য কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়। এই সাফল্য কিছুটা ‘ঠান্ডা’ রেখেছিল এসএলসিকে। কিন্তু প্রোটিয়াদের কাছে টানা চার ওয়ানডে হারের পর ‘হাথুরু হটাও’ আওয়াজ তীব্র হয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে।

শুধু পারফরম্যান্সের কারণেই নয়, হাথুরুর ওপর বোর্ড অসন্তুষ্ট আরও অনেক কারণে। খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের অনেকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো নয়। গত মাসে তো তাঁকে নির্বাচক কমিটি থেকেই ছেঁটে ফেলেছে এসএলসি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা দলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন হাথুরু। যেমন—দিনেশ চান্ডিমালকে বাদ দেওয়া, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যাঁকে কেন্দ্রে রেখে হাথুরু পরিকল্পনা করেন। লাসিথ মালিঙ্গাকে যেভাবে আকস্মিকভাবে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয়েছে, এটা নিয়ে হাথুরু সন্তুষ্ট নন।

খুব সাধারণ এক কোচিং ক্যারিয়ার নিয়ে ২০১৪ সালের জুনে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাথুরু। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ দ্রুত কিছু সাফল্য পেলে দ্রুতই তিনি হয়ে ওঠেন দলের সর্বেসর্বা। যত দিন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন, নিজের ইচ্ছেমতোই সব করেছেন। বাংলাদেশ দ্রুত সাফল্য পাচ্ছিল বলে বিসিবিও তাঁর সব চাহিদা পূরণ করেছে হাসিমুখে। বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের সমর্থন পেয়ে হাথুরু ভীষণ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে অনেকবার। বিসিবির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ না শেষ হতেই নিজেই বাংলাদেশ কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করে দায়িত্ব নেন শ্রীলঙ্কার।

বিসিবির সঙ্গে যেটি অনায়াসে করতে পেরেছিলেন নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ড এসএলসির সঙ্গে সেটি আর করতে পারেননি হাথুরু। তাঁর অধীনে দলও পায়নি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। বোর্ড আর হাথুরুর সঙ্গে দূরত্ব তাই ক্রমেই বেড়েছে। এসএলসির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বোর্ড সন্তুষ্ট নয়। শুধু পারফরম্যান্স নয়; তাঁর আচরণ, চিন্তা-ভাবনা নিয়েও সন্তুষ্ট নয় বোর্ড।’ সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা-অধ্যায় শেষ করার সময় হয়েছে হাথুরুর, আপাতত সেটিই মনে করছে শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম।