সমালোচনার জবাব হোক পারফরম্যান্স

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উচিত পারফরম্যান্স দিয়েই সব সমালোচনার জবাব দেওয়া। ছবি: শামসুল হক
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উচিত পারফরম্যান্স দিয়েই সব সমালোচনার জবাব দেওয়া। ছবি: শামসুল হক
>বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বৈরথ মানেই ক্যারিবীয়দের ফাস্ট বোলিং আর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের লড়াই। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স দিয়েই সব সমালোচনার জবাব দিতে বলছেন

বেশ লম্বা একটা বিরতি দিয়ে আজ বাংলাদেশ খেলতে নামছে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই দলটার বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রেকর্ড বেশ ভালো। তবে ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেলদের নিয়ে এবারের বিশ্বকাপের ক্যারিবীয় দলটি যে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেটি না বললেও চলছে। তবে গেইল, রাসেলদের মতো তারকারা থাকলেও তাঁদের ধারাবাহিকতার কিছুটা অভাব আছে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটাররাও কোনো অংশে কম যান না। সাকিব আল হাসান তো প্রথম তিনটি ম্যাচেই জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েই তিনি এসেছেন।

বাংলাদেশ সবশেষ খেলেছে ৮ জুন, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ১১ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলাটা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। বড় বিরতিতে আমাদের সুবিধা-অসুবিধা দুটিই হয়েছে। অসুবিধা বলতে বসে থাকতে থাকতে একধরনের ছন্দপতন এসেছে দলে। আর সুবিধা হচ্ছে, আমরা নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার অনেক সুযোগ পেয়েছি। আমাদের বাকি প্রতিপক্ষ দলগুলোর শক্তি-দুর্বলতা আরও বিস্তারিত বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেয়েছি।

একটি ব্যাপার আমি এখানে বলতে চাই। অভিযোগের সুরেই বলতে চাই। বিশ্বকাপের শুরু থেকে ‘সেমিফাইনাল’, ‘সেমিফাইনাল’ রব তুলে আমরা আমাদের দলের ওপর একধরনের অবাঞ্ছিত চাপ এনে ফেলেছি। খেলোয়াড়দের নিয়েও চলছে অযথা কাটাছেঁড়া। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি বিন মুর্তজা—কেউই রেহাই পায়নি। অথচ আমাদের দল মাঠে খেলেছে মাত্র তিনটি ম্যাচ। একটিতে তারা জিতেছে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। আমি সেমিফাইনাল নিয়ে মোটেও ভাবছি না। আমি চাই বাংলাদেশ দল যেন নিজেদের বাকি পাঁচটি ম্যাচে একেবারে চাপমুক্ত হয়ে, নিজেদের খেলাটা খেলে। এ দলের যেকোনো কিছু করারই সামর্থ্য আছে।

টন্টনের মাঠ নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। মাঠ ছোট, এই মাঠে গেইলের মতো ব্যাটসম্যানরা ছক্কাবৃষ্টি নামাবে—এমন অনেক কথা। আমি কেবল একটি কথাই বলব, ক্রিকেটে মাঠ যতই ছোট থাক, ছক্কা ছক্কাই হবে, চার চারই হবে। ছক্কাকে ১২ কিংবা চারকে ৮ বানানো যাবে না। সুতরাং এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আর ছক্কা মারতে গিয়ে গেইল-রাসেলরা যে মিস হিট করবে না, সেটার কী গ্যারান্টি? আমাদের সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। নিখুঁত লাইন ও লেংথে বোলিং করে যেতে হবে। কোনো ব্যাটসম্যানই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, গেইল, রাসেলরা তো আরও অনেক বেশি ভুল করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলিংনির্ভর দল। তবে ভয় নেই। আমরা এই ম্যাচটা খেলছি, তিনটি ফাস্ট বোলিংনির্ভর দলের সঙ্গে খেলেই। দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদা, নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, ইংল্যান্ডের জফরা আর্চারদের খেলার পর নিশ্চয়ই শর্ট বল খেলার ব্যাপারে আমাদের ব্যাটসম্যানরা অনেক কিছু শিখেছে। তাই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো প্রস্তুতি নিয়েই মাঠ নামবে তামিম-সাকিবরা। ক্যারিবীয়রা যদিও ফাস্ট বোলিংনির্ভর দল, কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে সেই ছাপ দেখা যায়নি। সেদিন বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তারা বোলিং করেনি। তা ছাড়া আমরা ব্যাটিংনির্ভর দল। আমাদের ব্যাটসম্যানরা জানেন, কীভাবে উইন্ডিজ বোলারদের ভালোভাবে খেলতে হবে।

আজকের দলটা কেমন হবে, সেটা নিয়ে কথা থাকবে! আমি বলব, আমাদের চারজন পেস বোলার নিয়ে খেলা উচিত। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে যে প্রশ্নটা করেছিলাম, সেটি আজও করব। লিটন দাস যদি খেলে, তাহলে সে কোন ব্যাটিং পজিশনে খেলবে। একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হুট করে ৪/৫ নম্বর কিংবা এর নিচে নামিয়ে দেওয়াটা ওই ব্যাটসম্যানের জন্যই ঠিক না। আমি নিশ্চিত, আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটা ভালোভাবে ভেবেছে। আর দল বদল আসলেও মেহেদী হাসান মিরাজকে আমি দলে চাই।

সেদিন তামিমের প্রেস কনফারেন্সটা দেখলাম। তামিম মাশরাফিকে নিয়ে যা বলেছে, তার সঙ্গে আমি একমত। আমাদের সবারই ধৈর্য ধরা উচিত। কিন্তু একটা কথা আমি বলতে চাই, খেলোয়াড়দের ভাগ্যই এমন। ভালো খেললে তালি আর খারাপ খেললে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হবে। এটাই খেলোয়াড়দের নিয়তি। আমার মনে হচ্ছে, আমাদের ক্রিকেটাররা বাইরে তাদের নিয়ে কে কী বলল, সেটি নিয়ে খুব আগ্রহী থাকে, এটা ঠিক না। অনেকে অনেক কথাই বলবে, সেগুলো গায়ে মাখা ঠিক না। খেলোয়াড়দের একমাত্র অস্ত্র পারফরম্যান্স। সমালোচনাগুলোর জবাব তামিম-মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা পারফরম্যান্স দিয়েই দিক; প্রেস কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়ে নয়।