'আমরা কি খেলার সরঞ্জাম পুড়িয়ে চাকরিতে আবেদন করব?'

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার সিকান্দার রাজা। ছবি: টুইটার
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার সিকান্দার রাজা। ছবি: টুইটার
>

জিম্বাবুয়ের সদস্যপদ স্থগিত করেছে আইসিসি। এতে স্বাভাবিকভাবেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ফ্লাওয়ার-ক্যাম্পবেলদের উত্তরসূরি সিকান্দার রাজা যেমন বুঝিয়ে দিয়েছেন আইসিসির ‘একটি সিদ্ধান্ত’ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবার জীবন কীভাবে পাল্টে দেবে

এন্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হিথ স্ট্রিক, নিল জনসন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, মারে গুডউইন...এবং আরও কিছু নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এসব নাম নস্টালজিক স্মৃতি। এরা সবাই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের সময়ে দাপট ছড়িয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হামাগুড়ি থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বেশির ভাগ দল বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে অনাগ্রহী ছিল, জিম্বাবুয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল সহযোগিতার হাত। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অকৃত্রিম ‘বন্ধু’ হিসেবে এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে বেশ আগেই জায়গা করে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। সেই ‘অকৃত্রিম বন্ধু’র দুর্দশায় শুধু আশাই করা যায়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে আবারও সুদিন ফিরবে।

লন্ডনে আইসিসির বার্ষিক সম্মেলনে পূর্ণ সদস্য দেশ জিম্বাবুয়ের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। বোর্ড পরিচালনায় সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকা নিশ্চিত করতে না পারায় টেস্ট খেলুড়ে জিম্বাবুয়ের সদস্য পদ স্থগিত করেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। এতে স্বাভাবিকভাবেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। শুধু ক্রিকেটার কেন, দেশটির ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সব পর্যায়ে সবারই হৃদয় ভেঙে যাওয়াই স্বাভাবিক। ফ্লাওয়ার-ক্যাম্পবেলদেরই উত্তরসূরি সিকান্দার রাজা যেমন বুঝিয়ে দিয়েছেন আইসিসির ‘একটি সিদ্ধান্ত’ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত সবার জীবন কীভাবে পাল্টে দেবে।

জিম্বাবুয়ের হয়ে ১২ টেস্ট ও ৯৭ ওয়ানডে খেলা রাজা মনে করেন, আইসিসি সদস্যপদ স্থগিত করায় তিনি দেশের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই এভাবে বিদায় নিতে চাননি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়োনো এ ব্যাটসম্যান। রাজা টুইট করেন, ‘একটা সিদ্ধান্ত কীভাবে একটা দলকে অচেনা করে দেয়। একটা সিদ্ধান্তে কীভাবে অনেকে বেকার হয়ে পড়ে। একটা সিদ্ধান্ত অনেক পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলে। একটা সিদ্ধান্ত কীভাবে অনেক ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়। অবশ্যই আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এভাবে বিদায় জানাতে চাইনি।’

সিকান্দার রাজার টুইট। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত
সিকান্দার রাজার টুইট। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

আইসিসি জিম্বাবুয়ের সদস্যপদ স্থগিত করার মিনিটখানেক পর থেকেই দেশটির জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ফোনে একে-অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মুঠোফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তাও চালাচালি হয়েছে। ক্রিকইনফোকে রাজা জানিয়েছেন, সদস্যপদ স্থগিত হওয়ার ধাক্কাটা ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পাওয়ার মতোই কষ্টের। তবে বর্তমান অবস্থা আরও খারাপ। ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। আইসিসি বলে দিয়েছে, সদস্যপদ স্থগিত থাকাকালীন তাঁদের কোনো ইভেন্টে জিম্বাবুয়ে অংশ নিতে পারবে না। আগামী অক্টোবরের বোর্ড মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথাও বলেছে আইসিসি।

সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল জিম্বাবুয়ের। অক্টোবরে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। এ ছাড়াও আগস্টে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও জিম্বাবুয়ের অংশ নেওয়া ভীষণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। রাজা বলেছেন, আইসিসি শাস্তি দিয়ে অন্তত ক্রিকেট খেলার সুযোগটুকু রাখতে পারত। ‘আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার এভাবে শেষ হওয়ায় বড় ধাক্কা পেয়েছে সবাই। এটা শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, গোটা দেশের জন্যই। আমার জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন। সতীর্থদের ভাবনাও যে একইরকম তা নিশ্চিত। এখান থেকে আমরা কোথায় যাব?’—সংবাদমাধ্যমকে বলেন রাজা।

জিম্বাবুয়ের এ তারকা ব্যাটসম্যান আরও বলেছেন, ‘মুক্তির পথটা আমরা জানি না। বলা হয়েছে আমরা নিষিদ্ধ কিন্তু কত দিনের জন্য তা বলা হয়নি। দুই বছর হলে অনেকের ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যাবে। শর্তটা আমি জানি না আসলে জিম্বাবুয়েতে ক্রিকেটটাই বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি জানি না কেউ এটা কীভাবে করতে পারে কিন্তু আমাদের সঙ্গে তাই ঘটল।’ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এই ক্রান্তিকালীন সময় শুরু হয়েছে বেশ আগেই। রাজার ভয় ছিল, দেশের ক্রিকেটাররা হয়তো খেলা ছেড়ে অন্য কোনো পেশা বেছে নেবে। রাজা নিজেও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু অনেকের মতো ক্রিকেটকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘আমি জানি না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে এখন আমরা কোথায় যাব। ক্লাব ক্রিকেটে নাকি কোনো ক্রিকেটই খেলব না? আমরা কি খেলার সরঞ্জাম পুড়িয়ে চাকরিতে আবেদন করব? এখন ঠিক কী করা উচিত তা আমি জানি না।’

জিম্বাবুয়ের আরেক তারকা ব্যাটসম্যান ও দলটির সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরও আইসিসির সিদ্ধান্তকে ‘হৃদয়ভঙ্গ’ বলে মনে করছেন। রাজার টুইটটি রি-টুইট করে টেলর নিজেও একটি টুইট করেন। ‘আইসিসির জিম্বাবুয়েতে ক্রিকেট স্থগিত করার রায়ে হৃদয় ভেঙে গেল।... জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের জন্য নিবেদিত শত শত লোক,ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ ও গ্রাউন্ড স্টাফ চাকরিহারা হলো...।’