তিন গোলের হতাশায় শুরু বসুন্ধরার

আজ কেরালার এমন উদ্‌যাপনই বারবার দেখতে হয়েছে। ছবি: সৌরভ দাশ
আজ কেরালার এমন উদ্‌যাপনই বারবার দেখতে হয়েছে। ছবি: সৌরভ দাশ

বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোনের মুখটা ভার। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। হওয়ারই কথা। বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন দল ৪৬ মিনিটের মধ্যে ভারতের আই লিগের নবম দল গোকুলাম কোরালার কাছে ৩ গোল হজম করেছে! ৭৩ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া একটি গোল শোধ করলেও শেখ কামাল ক্লাব কাপে বসুন্ধরার শুরুটা হলো ভুলে যাওয়ার মতো। ৩-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার উপক্রম তাদের।

অথচ গোকুলামের চট্টগ্রাম আসাই চরম নাটকীয়। ঢাকা আবাহনী শেষ সময়ে নাম প্রত্যাহার করায় আয়োজকেরা তড়িঘড়ি করে গোকুলামকে নিয়ে আসে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচেই শক্তি জানান দিয়েছে প্রবলভাবে। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে যাওয়া ভারতের মোহনবাগান ও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটির চেয়ে গোকুলামকে শক্তিশালী দেখাচ্ছে। মাত্র দুই বছর বয়সী ক্লাবটি ভারতের ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপের শিরোপার মালিক। শেখ কামাল ক্লাব কাপের অন্যতম দাবিদার এই দলটি। সেই লক্ষ্যে যাত্রা হলো শুভ।

ম্যাচের অর্ধভাগেই ম্যাচ শেষ করে দেন ত্রিনিদাদ ও টোবাগো জাতীয় দলের মিডফিল্ডার নাথানিয়াল গার্সিয়া আর উগান্ডার জাতীয় দলের সাবেক জাতীয় ফুটবলার হেনরি কিসিবা। এই দুজন রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালান। হেনরির জোড়া গোল, অন্যটি গার্সিয়ার। ২৪ মিনিটে ইয়াছিন ও ইব্রাহিমের ফাঁক গলে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর ডান দিক দিয়ে বল জালে পাঠান হেনরি। ৩৩ মিনিটে ম্যাচ সেরা গার্সিয়ার দুরন্ত এক ফ্রি কিক জালে। বিরতির পর প্রথম মিনিটেই বক্সে ঢুকে গার্সিয়ার ক্যাটব্যাকে দারুণ শটে হেনরির লক্ষ্যভেদ। ৩-০!

বসুন্ধরার ভরসার কেন্দ্র দানিয়েল কলিনদ্রেসকে কিছু বল তৈরি করে দেন। কিন্তু কাজে লাগানো যায়নি। কখনো ভুল পাস। কখনো জায়গা মতো কেউ ছিলেন না। লেফট উইঙ্গার ইব্রাহিম কদিন আগে জাতীয় দলের জার্সিতে কলকাতার মাটিতে ভারতের বিপক্ষে চোখ কাড়া নৈপুণ্য দেখান। কিন্তু আজ সাদামাটা ছিলেন। মাঝখানে বিপলু ও রবিউলরা সেরাটা দিতে পারেননি। লেবাননের নবাগত স্ট্রাইকার মোহাম্মদ কাদু ম্রিয়মাণ। শেষ দিকে ২০১৫ শেখ কামাল ক্লাব কাপের নায়ক এলিটা কিংসলেকে নামিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি। কিংসের জন্য রাতটা হলো হতাশার। আন্তর্জাতিক আর ঘরোয়া ফুটবলের পার্থক্যটা এত দিন বোঝার সুযোগ হয়নি বসুন্ধরা কিংসের। আজ হলো, তবে সেটি সুখকর কিছু নয়।

দলটির কত উৎসাহ ছিল এই ম্যাচ ঘিরে! সবাই বৃথা গেল। অস্কার ব্রুজোন তাই হতাশ, ‘আমি ভাবিনি এভাবে তিনটি গোল খেয়ে বড় ব্যবধানে হারব।’ তবে প্রথম ম্যাচেই হেরেছে বলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপটা শেষ হয়ে যায়নি। এটাই বড় কথা। যদিও চেন্নাই সিটি আর মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসির সঙ্গে চূড়ান্ত ফলটা আনা চাই নিজেদের পক্ষে। তাহলেই সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। অস্কার তাকিয়ে সে দিকেই, ‘আমাদের রক্ষণের ফাঁক ফোকর ভরাট করতে হবে। কারণ আজ আমরা ভালো রক্ষণ কাজ করতে পারিনি। তা ছাড়া দলে নতুন কিছু খেলোয়াড় এসেছে । যাদের নিয়ে আমরা প্রস্তুতির সময় সেভাবে পাইনি। বলতেই হবে, প্রতিপক্ষ ভালো ফুটবল খেলেছে। তবে আমরা ঘুরে দাঁড়াব আশা করি। এখনই সব শেষ নয়।’

কথাটা ঠিক। এখনই সব শেষ নয়। তবে ম্যাচ মাঝপথে আসতেই ৩ গোল হজম করে যে দল, তাদের নিয়ে কেউ বাজি ধরতে রাজি হবে কিনা বলা কঠিন। বরং ভারতের আই লিগের নবম দল গোকুলাম কেরালাকে নিয়ে বাজি ধরা যেতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধে ৫ ডিফেন্ডার নিয়ে রক্ষণ কাজটা ভালোভাবে করে গেছে অতিথি দলটি।