কাঁপাকাঁপি ব্যাটিংয়ের পর ক্যাচ ছাড়ার আক্ষেপ

রানের জন্য ছুটছেন পুজারা-আগারওয়াল। কাল তাঁদের ছোটা থামাতে পারবে বাংলাদেশ? ছবি: এএফপি
রানের জন্য ছুটছেন পুজারা-আগারওয়াল। কাল তাঁদের ছোটা থামাতে পারবে বাংলাদেশ? ছবি: এএফপি
>ইন্দোর টেস্টে ১ উইকেটে ৮৬ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে ভারত। এর আগে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ

দিনের খেলা শেষ হতে তখন ৫ ওভার বাকি। আবু জায়েদের বলে স্লিপে ক্যাচ তুললেন মায়াঙ্ক আগাওয়াল। ইমরুল কায়েস হাতে রাখতে পারলেন না। গ্যালারি থেকে টিভি সেটের সামনে দর্শকদের তখন কি সেই দিনগুলো মনে পড়েছে? স্লিপে এক সময় নিয়মিত ক্যাচ ছাড়ার সে মুহূর্তগুলো, নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতার পর প্রতিপক্ষের উইকেট ফেলার সুযোগ নষ্টের স্মৃতিগুলো। ইন্দোরে আজ তেমন এক দিনই যেন ফিরে এল।

প্রথম দিনের খেলা শেষে দুই দলের মাঠ ছাড়ার দৃশ্যটাও প্রতীকী হয়ে রইল। মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছিলেন মুশফিক-মুমিনুলরা। আগারওয়াল (৩৭*) ও চেতেশ্বর পুজারার (৪৩*) মুখ ভাবলেশহীন। এমনটা যেন হওয়ার কথাই ছিল! প্রথম দিন শেষেই খেলা তিন দিনে শেষ হওয়ার শঙ্কা, প্রথম দিন শেষেই ইনিংস ব্যবধানে হারের হুমকি, প্রথম দিন শেষেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকভাবে এন্তার ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার যাতনা—এসব আরকি। আর তাই নিশ্চিতভাবেই অধিনায়ক মুমিনুল হক থেকে অভিজ্ঞতা বিচারে দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় এবাদত হোসেনেরও আজ রাতের ঘুমটা ভালো হওয়ার কথা না।

সে সুযোগই নেই। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সে সুযোগ রাখেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরাই। টেস্ট ক্রিকেটে কৈশোর (পড়ুন ১৯ বছর) পেরিয়ে বাংলাদেশ তারুণ্যে পা দেওয়ার পর প্রথম টেস্টেই যে ফিরে এসেছে হামাগুঁড়ি দেওয়ার দিনগুলো। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রানে অলআউট হওয়ার পর ২৬ ওভার বল করে ভারতের মাত্র একটি উইকেট ফেলতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। ইমরুল ক্যাচটি না ছাড়লে স্কোরবোর্ডে লেখা থাকত ২ উইকেটে ৮৬। কিন্তু তা না হওয়ায় শুধু রোহিত শর্মাকে (৬) ফিরিয়েই সন্তুষ্ট (!) থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ভারত। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস এখন কোন উচ্চতায় উঠে থামবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কাল দ্বিতীয় দিনে বোলাররা অন্যরকম শুরু করলে অবশ্য ভিন্ন কথা। তবে প্রথম দিনে খেলোয়াড় ব্যাটিং থেকে শরীরী ভাষা আর বোলিং দেখে কিন্তু তেমন কিছু আশা করার জায়গা খুঁজে পাওয়া ভীষণ দুষ্কর। এবাদত আজ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার ছোঁয়ার চেষ্টা করলেও তাঁকে অবলীলায় খেলেছে ভারতের টপ অর্ডার। আবু জায়েদের পেস তাঁর চেয়েও কম হওয়ায় ওই ক্যাচ ওঠা ছাড়া আর কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। তবু আবু জায়েদের নেওয়া রোহিতের উইকেটটি গোটা দিনে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি। তাইজুল ইসলাম কিছুটা বাউন্স পেলেও বাঁক আদায় করে নিতে পারেননি। পাল্টা যুক্তি হতে পারে, প্রথম দিনেই বাঁক পাবে কেন? তার জবাব কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংসে রবিচন্দ্র অশ্বিনের বোলিং।

দ্রুত উইকেট পড়ার পর পুজারা-আগারওয়ালের ইনিংস গড়ার ধরন দেখেও দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের পথ খুঁজে নিতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখে সে আশা করাও কঠিন। আজ ব্যাটিংটা স্রেফ যাচ্ছেতাই হয়েছে। শামি-অশ্বিনদের সামনে ব্যাটিংয়ের আগা থেকে গোড়া স্রেফ কেঁপেছে। ভারতের ফিল্ডাররা চার-চারটি ক্যাচ ছাড়ার পরও বাংলাদেশ দুই শ রানও তুলতে পারেনি। কোনো ব্যাটসম্যানই ফিফটির দেখা পর্যন্ত পাননি। সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। সেটিও কয়েকবার ‘জীবন’ পাওয়ার পর। পার্থক্য হলো, মুশফিক কয়েকটি জীবন পেয়েও যে ইনিংসটা খেলতে পারেননি আগারওয়াল একবার পেয়েই হয়তো তা কাল খেলে ফেলতে পারেন।

তখন প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং আর ক্যাচ ছাড়াটা নিশ্চয়ই পোড়াবে?