দিবারাত্রির টেস্টে শ্রীলঙ্কাই এখন বাংলাদেশের ভরসা

আগামীকাল দিবারাত্রির টেস্টে বাংলাদেশের প্রেরণা শ্রীলঙ্কা দল। ছবি: বিসিবি
আগামীকাল দিবারাত্রির টেস্টে বাংলাদেশের প্রেরণা শ্রীলঙ্কা দল। ছবি: বিসিবি

স্বাদটা কোনোভাবেই পাওয়া হচ্ছিল না বাংলাদেশের। প্রতিবেশী ভারতেরও তাই। ওদিকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা তো বটেই এমনকি জিম্বাবুয়েও স্বাদ পেয়ে গেছে দিবারাত্রির টেস্টের। ফ্লাডলাইটের আলোয় গোলাপি বলের মায়ায় বিভ্রান্ত হওয়ার এ খেলায় অবশেষে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। আগামীকাল ইডেনে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় শুরু হতে যাচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। যদিও ফ্লাডলাইট ও গোলাপি বলের আলোচনায় অনেকে ভুলেই যাচ্ছেন যে এটি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ।

সিরিজ হার এড়াতে চাইলে গোলাপি বলের এ টেস্টে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশ দলের জন্য কাজটা কঠিন। গত চার বছরে ভারতে প্রতিপক্ষের টেস্ট জয়ের ঘটনা মাত্র একটি, এ তথ্য জানা থাকলে তো অসম্ভব বলেই ঠেকে। আর দিবারাত্রির টেস্টের ইতিহাস জানলে ইডেন টেস্টে বাংলাদেশ দলের জয়ের আশা করাটাই বোকামি। কিন্তু জয়ের আশা ছাড়া ম্যাচ খেলতে নামে না কেউ, বাংলাদেশও নামবে না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একমাত্র আশা শ্রীলঙ্কা।

২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এরপর আরও ১০টি গোলাপি বলের টেস্ট খেলা হয়েছে। এই এগারো টেস্টের নয়টিতেই জিতেছে স্বাগতিক দল। মাত্র দুবার জিতেছে সফরকারী দল। মজার ব্যাপার, দুবারই জয়ী দলের নাম শ্রীলঙ্কা।

প্রথম দিবারাত্রির টেস্টেই এ বলে রান তোলা কত কঠিন সেটা বোঝা গিয়েছিল। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বলের বাড়তি সুইং প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করছিল বারবার। সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও দ্বিতীয় ইনিংসের প্রতিরোধে জয় পেয়েছিল স্বাগতিক দল। অস্ট্রেলিয়ার পরই দিবারাত্রির টেস্ট আয়োজনে আগ্রহী দেখিয়েছিল পাকিস্তান। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সে ম্যাচে অবশ্য গোলাপি বলকে বেশ নিরীহ মনে হচ্ছিল। দিবারাত্রির টেস্টের সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি ও ট্রিপল সেঞ্চুরি—সবই আদায় করে নিয়েছিলেন আজহার আলী। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম দিনেই খেল দেখায় গোলাপি বল। দেবেন্দ্র বিশুকে (৪৯/৮) খেলতেই পারেনি পাকিস্তান। ড্যারেন ব্রাভোর দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিও অবশ্য পাকিস্তানের জয় আটকাতে পারেনি।

দ্বিতীয়বার দিবারাত্রির টেস্ট আয়োজনেই অবশ্য আর হার এড়াতে পারেনি পাকিস্তান। টস জিতে ব্যাটিং করার পূর্ণ সুবিধা নেওয়া শ্রীলঙ্কা দিলরুয়ান পেরেরার অফ স্পিনে হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। শ্রীলঙ্কা নিজেদের দ্বিতীয় দিবারাত্রির টেস্টেও জয় পেয়েছিল। এবার তাদের শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রিজটাউনে বৃষ্টির সুবাদে পাঁচ দিন গড়িয়েছিল ম্যাচ। কিন্তু ঘরের মাঠে দুই ইনিংস মিলিয়ে উইন্ডিজের ২৯৭ রান তোলা ও শ্রীলঙ্কার ১৫৪ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যাওয়া বুঝিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সব প্রান্তেই গোলাপি বল ও ফ্লাডলাইটে রান তোলা কঠিন। জেসন হোল্ডারের দুর্দান্ত বোলিং-ও (দুই ইনিংসে ৯ উইকেট) অবশ্য শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেটের জয় আটকাতে পারেনি।

দিবারাত্রির টেস্টে শ্রীলঙ্কার একমাত্র হার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। নিজেদের মাটিতে খেলা অস্ট্রেলিয়া তাই এখনো ফ্লাডলাইটে সাদা পোশাকের খেলায় অপরাজিত। সবচেয়ে বেশি পাঁচটি দিবারাত্রির টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়া সবগুলো ম্যাচই জিতেছে। আর কারওরই সে সৌভাগ্য হয়নি। প্রতিপক্ষের মাটিতে ম্যাচ খেলার সুবাদে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড—সবারই হারের স্বাদ পাওয়া হয়ে গেছে। নিজের মাঠে হেরেছে শুধু পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর প্রতিপক্ষের মাঠে হার এড়ানোর চেষ্টায় সাফল্য শুধু শ্রীলঙ্কার।

বাংলাদেশ কি শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারবে?