মেসিদের সঙ্গীর খোঁজে খরচ ৪ হাজার ৫০০ কোটি

মেসির সঙ্গে সুয়ারেজ-নেইমার। সেই দিনগুলোতে নির্ভারই ছিল বার্সা। ছবি: এএফপি
মেসির সঙ্গে সুয়ারেজ-নেইমার। সেই দিনগুলোতে নির্ভারই ছিল বার্সা। ছবি: এএফপি

টাকার শ্রাদ্ধ আর কাকে বলে! বার্সেলোনা তা-ই করে চলেছে। তবু যদি একটা সমাধান খুঁজে পেত! যদি খুঁজে পেত আক্রমণে লিওনেল মেসি আর লুইস সুয়ারেজের একজন যোগ্য সঙ্গী! মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা হিসেব কষে দেখাচ্ছে, মেসি আর সুয়ারেজের সঙ্গীর খোঁজে গত পাঁচ বছরে বার্সেলোনা খরচ করে ৪৮ কোটি ২০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা!

খরচ করেছে না বলে বার্সেলোনা টাকাটা উড়িয়েছে বললেও বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না। বোর্ড পর্যায়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত আর বাজে ব্যবস্থাপনার কারণে নিয়মিত খবরের শিরোনাম হওয়া বার্সা দলবদলে যে একের পর এক ভুল করে চলেছে। সেই যে ২০১৪ সালে ৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো খরচায় লিভারপুল থেকে লুইস সুয়ারেজকে এনেছে, এরপর দলবদলে বার্সার আর সাফল্য কই! বিশেষ করে আক্রমণভাগের দলবদলে তো সাফল্য নেই-ই।

২০১৭ সালের আগস্টে নেইমার ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে পিএসজিতে চলে যাওয়ায় যে দৈন্য আরও বেশি করে চোখে পড়ে। বার্সার আক্রমণে ডানদিকে মেসি আছেন, স্ট্রাইকার হিসেবে সুয়ারেজ আছেন, কিন্তু বাঁ দিকে যে মানিয়ে নেওয়ার মতো কাউকেই পাচ্ছে না কাতালানরা! পাচ্ছে না মেসি-সুয়ারেজকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর মতো কাউকেও।

মার্কা হিসেবটা করেছে ২০১৫ সাল থেকে। যদিও তখন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ 'ত্রিরত্নে' খচিত ছিল বার্সার আক্রমণভাগ। তাঁদের বিশ্রামের প্রয়োজনেই মূলত ২০১৫ সালে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরোতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে আরদা তুরানকে আনে বার্সা। কিন্তু অ্যাটলেটিকোর তুরান বার্সায় এসে হারিয়ে গেলেন। এরপর আক্রমণভাগে যাঁরাই এসেছেন ক্লাবে, বার্সা যেন তাঁদের জন্য হয়ে উঠেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এলেই হারিয়ে যান!

ম্যালকম আর কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং যেমন। দুজনের জন্য খরচটা মাত্র ৪ কোটি ইউরোর কিছু বেশি বলে তাঁদের ব্যর্থতা তেমন চোখে পড়ে না। অবশ্য ম্যালকমকে যে দৃষ্টিকটু উপায়ে রোমার মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছে বার্সা, তারপর এক মৌসুম বাদেই আবার বিক্রি করে দিয়েছে, তা বার্সার বোর্ডের অদূরদর্শিতার কথাই বলে। বার্সার খুব বেশি একটা খরচ হয়নি দেউলোফেউ (১ কোটি ২০ লাখ ইউরো), পাকো আলকাসার (৩ কোটি) বা মার্টিন ব্রাথওয়েইটদের (১ কোটি ৮০ লাখ) জন্যও।

কিন্তু উসমান ডেম্বেলে আর ফিলিপে কুতিনহো তো যেন বার্সার ইতিহাসেরই সবচেয়ে দামি ভুল হয়ে থাকতে যাচ্ছেন! নেইমারের অভাব পূরণে দুজনকে আনতে ২২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো খরচ হয়েছে। অথচ দুজনের অবদান? এখন পর্যন্ত যতটুকু খেলেছেন বার্সার জার্সিতে, তাতে কুতিনহোর ম্যাচপ্রতি গোল ০.২৭ গোল, ডেম্বেলের ০.২৫ গোল। কুতিনহো মানিয়ে নিতে না পেরে এখন বায়ার্ন মিউনিখে ধারে খেলছেন, আর ডেম্বেলে তো মাঠের চেয়ে ডাক্তারের টেবিলেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন।

এই মৌসুমের শুরুতে তাই বার্সা নিয়ে এল আঁতোয়ান গ্রিজমানকে। খরচ? ১২ কোটি ইউরো। এখন পর্যন্ত কুতিনহো-ডেম্বেলের চেয়ে তাঁর ম্যাচপ্রতি গোলের হার ভালো - ০.৩৭। কিন্তু এই গ্রিজমান যে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে আলো ছড়ানো গ্রিজমানের ছায়া, তা নিয়ে তর্ক করবে কে?

বার্সার এত খরচের খতিয়ান নিয়ে বসার কারণ? আগামী মৌসুমে আবার আক্রমণভাগের খেলোয়াড় কিনতে টাকার ব্যাগ নিয়ে বার্সা নামছে বলে গুঞ্জন। ইন্টার মিলান থেকে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লওতারো মার্তিনেজকে আনতে চায়, পিএসজি থেকে ফেরাতে চায় নেইমারকেও।

মার্তিনেজের 'রিলিজ ক্লজে'র ১১ কোটি ইউরোর এক পয়সাও কম নিতে রাজি নয় ইন্টার। আর পিএসজি নেইমারকে কত বেশি দামে ছাড়বে বার্সার কাছে, আদৌ ছাড়বে কি না, সে উত্তর শুধু পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফিই সম্ভবত জানেন।

পিএসজির সঙ্গে বার্সার সম্পর্কটাই এমন সাপে-নেউলে কিনা! গত কয়েক মৌসুমে দলবদল নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করতে গিয়ে ইউরোপজুড়ে ক্লাবগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বার্সার, তার মধ্যে সবার ওপরেই সম্ভবত থাকবে প্যারিসের ক্লাবটি।