স্প্যানিশ শিখতে হবে বলে রিয়াল মাদ্রিদকে মানা

সবাইকে চমকে দিয়েছেন কন্টারম্যান। ফাইল ছবি
সবাইকে চমকে দিয়েছেন কন্টারম্যান। ফাইল ছবি
রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মতো ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই অনেক কারণে শেষমেশ যোগ দিতে পারেন না। যোগ না দেওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকে তাঁদের। সাবেক ডাচ ডিফেন্ডার বার্ট কন্টারম্যানও রিয়ালে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যোগ দেননি। তবে কারণ হিসেবে যা বলেছেন, তা শুনে চোখ কপালে উঠে গেছে অনেকের

ফ্রানসেস্কো টট্টি, স্টিভেন জেরার্ড, প্যাট্রিক ভিয়েরা, অস্কার, শিনজি কাগাওয়া, রামিরেস–এদের মধ্যে মিল কোথায় বলতে পারবেন?

ঠিক ধরেছেন। সবাই কোনো না কোন কারণে রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে পা রাখেননি। তবে এর পেছনে কারণও ছিল। প্রত্যেকেই যৌক্তিক কারণ দেখিয়েছিলেন রিয়ালে যোগ না দেওয়ার পেছনে। টট্টি আর জেরার্ড নিজেদের ক্লাবকে (যথাক্রমে এএস রোমা ও লিভারপুল) এতটাই ভালোবাসতেন, ক্লাব ছাড়ার কথা চিন্তাও করেননি। একই কথা বলা যায় রামিরেসের ক্ষেত্রেও, চেলসির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অফুরন্ত।

ওদিকে রিয়ালে যোগ দিলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবেন না এই ভয়ে সারা জার্সি গায়ে চড়াননি শিনজি কাগাওয়া, অস্কার। ওদিকে স্বদেশি ক্লদ ম্যাকেলেলের মত মিডফিল্ডার রিয়ালে তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননি দেখে নিজেও পরে ওই ক্লাবে যেতে চাননি আর্সেনালের তৎকালীন অধিনায়ক প্যাট্রিক ভিয়েরা। কিন্তু ডাচ ডিফেন্ডার বার্ট কন্টারম্যান যে কারণে রিয়ালে যোগ দেননি, সেটা শুনে মুখ হাঁ হয়ে যেতে বাধ্য!

নতুন দেশে গিয়ে নতুন ভাষা শিখতে কন্টারম্যানের বড্ড অনীহা ছিল। স্পেনে গিয়ে স্প্যানিশ ভাষা শিখতে হবে, এই চিন্তায় তাঁর জ্বর চলে এসেছিল যেন। শেষমেশ ১৯৯৯ সালে ডাচ ক্লাব ফেইনুর্দ থেকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রিয়ালে যোগ দেননি এই ডিফেন্ডার। নিজেই ব্যাপারটা খোলাসা করেছেন এতদিন পর।
'টকিং ফিটবো' পডকাস্টে নিজের ওই কাহিনি বর্ণনা করেছেন কন্টারম্যান, 'তখন সাবেক রিয়াল কোচ লিও বেনহ্যাকার ছিলেন ফেইনুর্দে, আমার কোচ হিসেবে। তিনি আমাকে চেয়েছিলেন মাদ্রিদে। নয় মিলিয়ন পাউন্ডের একটা প্রস্তাবও পাঠান হয়েছিল আমার জন্য। আমি ওনাকে বললাম, তুমি অবশ্যই মশকরা করছ আমার সঙ্গে। পরে দেখলাম না, তাঁরা আসলেই আমাকে চায়। বেনহ্যাকার আমাকে ফেইনুর্দেই রাখতে চেয়েছিলেন, তবে রিয়ালের মতো কোনো ক্লাব ডাক দিলে যে খেলোয়াড়েরা না গিয়ে থাকতে পারে না, সেটাও বুঝতেন তিনি। কিন্তু স্প্যানিশ ভাষা শিখতে হবে দেখে আমি পরে আর রিয়ালে যাইনি।'

পরে আরও এক বছর ফেইনুর্দে থেকে স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সে যোগ দেন কন্টারম্যান, 'আমার তখন মাথায় ছিল, আমার পরবর্তী ক্লাব হবে জার্মানি বা ব্রিটেনের কোনো ক্লাব। কারণ আমি তখন ডাচ ভাষার পাশাপাশি জার্মান ও ইংলিশ ভাষাটাও বেশ ভালোই বলতে পারতাম। স্প্যানিশ একদমই পারতাম না। রিয়াল মাদ্রিদের মতো বড় ক্লাবে যোগ দেওয়ার একটা আলাদা চাপ তো ছিলই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্প্যানিশ ভাষা শিখতে যাওয়ার চাপ। সব মিলিয়ে রিয়ালকে শেষমেশ না করে দিই।'

তবে রিয়ালে যোগ না দেওয়ার আফসোস কি পোড়ায় না কন্টারম্যানকে? তখন না পোড়ালেও, এখন পোড়ায় অবশ্যই, 'সে বছরই রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল। তবে আমার মনে হয়, তখন রিয়ালে যোগ দেওয়ার মতো মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না আমি। সেই মূহুর্তে আমার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না। তবে এখন মনে হয়, রিয়ালে না গিয়ে বোকামিই করেছি। এখন এসব কথা বললে কেউ বিশ্বাস করে না। তাই সে সময়কার খবরের কাগজ এখনও আমার কাছে আছে। মানুষকে দেখানোর জন্য যে "না, আসলেই রিয়াল আমাকে চেয়েছিল।"'


২০০০ ইউরোর সেমিফাইনালে ওঠা ডাচ দলে ছিলেন কন্টারম্যান।