আইপিএলে ডাক না পেয়ে নিজেকে নগ্ন মনে হয়েছিল 'নতুন কোহলির'

হতাশা ঘিরে ধরেছিল উন্মুক্তকে। ফাইল ছবি
হতাশা ঘিরে ধরেছিল উন্মুক্তকে। ফাইল ছবি

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, তা-ও আবার অধিনায়ক হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতকে যখন শিরোপা এনে দিলেন উন্মুক্ত চাঁদ, তাঁর ভবিষ্যৎ ঘিরে চাঁদের আলোই দেখছিলেন সবাই। আগ্রাসন, ব্যাটিংয়ের ধরন সব মিলিয়ে চার বছর আগেই ভারতকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা হচ্ছিল তাঁর। এই বুঝি নতুন কোহলি পেয়ে গেল ভারত!

কোথায় কী! যে উন্মুক্ত চাঁদকে ঘিরে বড় কিছুর স্বপ্ন ছিল, সেই উন্মুক্ত চাঁদের নামের পাশে এত বছর পরও ভারতের জার্সিতে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড হয়নি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ কী, ভারত 'এ' দলেও এখন আর জায়গা হয় না। ২০১৬ সালের পর আইপিএলেও কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। তা ২০১৮ আইপিএলে অবিক্রিত থাকার পর নাকি উন্মুক্ত চাঁদের নিজেকে নগ্ন মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল, কেউ তাঁর কাপড় ছিড়ে নিয়েছে!

ক্যারিয়ারের উত্থানের বদলে পতনই তো দেখেছেন বেশি। ভারতের ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বড় হতাশাও সম্ভবত উন্মুক্তই। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তবু ভারত এ দল, দিল্লি রাজ্য দল আর আইপিএলে দিল্লি-রাজস্থান-মুম্বাইয়ে খেলেছেন। কিন্তু ২০১৬ সালের পর এসে যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে উন্মুক্তের ক্যারিয়ার। দিল্লির ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়লেন, এরপর ভারত 'এ' দল থেকে, তারপর আইপিএলেও থাকলেন অবিক্রিত।

কী হয়েছিল, সেটিই ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছিলেন উন্মুক্ত। দিল্লির ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে প্রথমে বললেন, 'আমার জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল দিল্লির ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়া। সে সময় (২০১৬) ভারত 'এ' দলের অধিনায়ক ছিলাম আমি, রান করছিলাম, মুম্বাইয়ের হয়ে আঞ্চলিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলছিলাম। এর মধ্যে তাঁরা আমাকে দিল্লির ওয়ানডে দল থেকে বাদ দিয়ে দিলেন।'

উন্মুক্তের এরপরের পুরো গল্পটাই যেন প্রতিশ্রুতিভঙ্গের আর হতাশার। প্রথমে দিল্লির দল থেকে বাদ পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, 'আমি তখন শিখর ধাওয়ান আর গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে খেলছিলাম। নির্বাচকেরা আমাকে বললেন আমরা তোমাকে ভিন্ন কিছুর জন্য প্রস্তুত করছি। এরপর দিল্লি দল থেকে বাদ দিয়ে দিলেন।'

সেখান থেকেই শুরু তাঁর পতনের গল্পের, 'বাদ পড়লাম। এরপর দিল্লি প্রথম তিন ম্যাচে হারার পর আবার সুযোগ পেলাম। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ম্যাচে খেলি, সেখানে ৭৫ ও ৮০ রান করে ম্যাচসেরাও হই। কিন্তু যেহেতু আমি খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি, খুব বেশি রানও পাইনি। নির্বাচকেরা আমাকে ভারত 'এ' দল থেকেও বাদ দিয়ে দিলেন। ২০১৭ সালে এসে প্রথমবার আমি ক্যারিয়ারে ভারত 'এ' দল থেকে বাদ পড়লাম। একই সময়ে আইপিএল থেকেও বাদ পড়লাম।'

আইপিএলে অবিক্রিত থাকাও উন্মুক্তর কাছে আরেক প্রতিশ্রুতিভঙ্গের ইতিহাস। সে সময় মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে থাকলেও বেশি একটা খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। সে কারণে দল বদলানোর কথা ভেবেছিলেন। এরপর কি হলো? উন্মুক্তর মুখেই শুনুন, 'সেটা আরেক মজার গল্প। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে ছিলাম, ওরা আমাকে রিটেইন করেছিল। কিন্তু ওটা এত বড় দল ছিল যে সেখানে খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমি এমন কোথাও যেতে চাইছিলাম যেখানে খেলার সুযোগ পাব। একজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি আমাকে বললেন মুম্বাই ছেড়ে তাঁদের দলে যেতে। কিন্তু অকশনে কেউ আমাকে কিনল না!'

সব হারানোর অনুভূতিটা স্বাভাবিকভাবেই ভালো কিছু হওয়ার কথা নয়। উন্মুক্ত তা বর্ণনা করলেন এভাবে, 'হঠাৎ মনে হল যে হঠাৎ করেই আমি আইপিএলে খেলতে পারছি না, দিল্লি ক্রিকেটেও না। অনেক বড় ধাক্কা ছিল এটা। মনে হচ্ছিল, আমার কাপড় কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ছিল, সেখান থেকে হঠাৎ খালি হয়ে গেল। ৩-৪ দিন পর ঘুম থেকে উঠে অনুশীলনে যাই আমি।'