বার্সেলোনার পয়েন্ট হারানোর ম্যাচে মেসির ৭০০

শেষ পর্যন্ত মেসি ৭০০তম গোলের দেখা পেয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
শেষ পর্যন্ত মেসি ৭০০তম গোলের দেখা পেয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

টেবিলের শীর্ষস্থান দখলে রিয়াল মাদ্রিদের। বার্সেলোনার চেয়ে দুই পয়েন্টে তারা এগিয়ে। শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে আজকের ম্যাচটা জিততেই হত বার্সেলোনার। ক্যাম্প ন্যুতে নিজেদের মাঠে সুযোগটা হাতছাড়া করল কাতালানরা। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে নাটুকে এক ম্যাচে ২–২ গোলের সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসি–সুয়ারেজরা। ম্যাচে অবশ্য ক্যারিয়ারে নিজের ৭০০তম গোলটি পেয়েছেন মেসি। 

খেলা শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই বেশ কটা 'নাটক' দেখে ফেলল দর্শকেরা! প্রথমে বার্সেলোনার ডি বক্সের বাইরে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি–কিক পায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ক্যারেসকোর দুর্দান্ত ফ্রি–কিকে কস্তা–গিমেনেজদের কেউ পা ছোঁয়াতে পারলেই এগিয়ে যেত অতিথিরা। এরপরই পাল্টা আক্রমণে অ্যাটলেটিকোর রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন রাকিটিচ। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শট অ্যাটলেটিকোর গোলরক্ষক ওবলাক ঠেকিয়ে দেন। মিনিট দুয়েক পর নিজেদের সীমানায় ভিদালকে ফাউল করে বসেন সাউল। ফ্রি–কিক পায় বার্সেলোনা। মেসির নিচু শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন কস্তা। কর্নার কিকও নেন মেসি। আর্জেন্টাইন তারকার খানিকটা নিচু শট ওই কস্তার পায়ে লেগেই জালে জড়ায়। ম্যাচের ১১তম মিনিটে এক আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। দলকে রক্ষা করা কস্তা যে পরের মিনিটেই নায়ক থেকে ভিলেন হয়ে যাবেন কে জানত!

গোল হজম করে খেলায় গতি বাড়ায় অ্যাটলেটিকো। গোল পরিশোধেও খুব বেশি দেরি করেনি তারা। ম্যাচের ১৫তম মিনিটে নিজেদের সীমানা থেকে বল পেয়ে দারুন ক্ষীপ্রতায় বল নিয়ে আক্রমণে ওঠেন ক্যারেসকো। বার্সেলোনার রক্ষণে থাকা পিকের বাধা সহজেই পার করেন ক্যারেসকো। ডি–বক্সে তাকে ফাউল করে বসে ভিদাল। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজায়। আরও এক 'নাটক' দেখে খেলা দেখতে বসা লা লিগা ভক্তরা। কস্তার নেওয়া পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন বার্সার গোলপোস্টের নিচে আস্থার প্রতীক টের স্ট্যাগান। কাতালান সমর্থকেরা তখন উল্লাসে ফেটে পড়েছেন হয়তো। এ দিকে আরও একবার ভিলেনের চরিত্রে কস্তা!

নাটকের আরও বাকি আছে। মুহূর্ত পরেই বার্সেলোনা সমর্থকদের উল্লাসে জল ঢেলে দেন রেফারি। কস্তার শট নেওয়ার আগেই যে টের স্ট্যাগান গোললাইন থেকে অনেকটা বেরিয়ে আসেন। তাকে হলুদকার্ড দেখান রেফারি। আবারও পেনাল্টি শট নেওয়ার নির্দেশ দেন বাঁশিতে ফু দিয়ে। এবার আর কস্তা নয়, ম্যাচের ১৯ মিনিটে সাউলের পেনাল্টি শট বার্সেলোনার জাল খুঁজে নিলে সমতায় ফেরে অতিথিরা। প্রথমার্ধের খেলা শেষের খানিক আগে ব্যবধান বাড়াতে পারত কিকে সেতিয়েন শিষ্যরা। মেসির হাওয়ায় ভাসানো ফ্রি–কিক দুর্দান্ত ভাবে ঠেকিয়ে দেন ওবলাক।

রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে পয়েন্ট হারাল বার্সেলোনা। ছবি: এএফপি
রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে পয়েন্ট হারাল বার্সেলোনা। ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়ার্ধেও উত্তেজনার রেণু থেকে যায়। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে অ্যাটলেটিকোর ডি বক্সে ফাউলের শিকার হন স্যামেদো। পেনাল্টি থেকে ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোলটি করেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন গোলমেশিন লিওনেল মেসি। স্প্যানিশ জায়ান্টরা ২–১ গোলে এগিয়ে যায়। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন কস্তা। ডান দিক থেকে আরিয়াসের শটে ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলেই ফের সমতায় ফিরতে পারত সিমওনের শিষ্যরা।

অবশ্য সমতায় ফিরতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি অ্যাটলেটিকোর। ম্যাচের ৬২ মিনিটে সাউলের পেনাল্টি শট থেকে সমতায় ফেরে তার। বার্সার ডি–বক্সে বল নিয়ে ঢোকার সময় স্যামেদোর ফাউলের শিকার হন ক্যারেসকো। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে জোড়া গোল পূরণ করেন সাউল। ফের সমতায় ফেরে কস্তা–সাউলরা। অ্যাটলেটিকোর হয়ে দুটো প্যানাল্টিই আদায় করেন ক্যারেসকো। দুটোই গোলে পরিণত করেন সাউল।

এই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে শিরোপা দৌড়ে বার্সেলোনা পিছিয়ে পড়ল? শিরোপাটাই হাতছাড়া হয়ে যায়নি তো? নাকি মৌসুমে আরও রোমাঞ্চ দেখবে লা লিগা ভক্তরা! এসবের জবাব সময়ের হাতেই তোলা রইল আপাতত।