'আমাদের প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান সে'

পিঠের চোট তাঁকে ছিটকে দিয়েছে ভারত সফর থেকে। মাইকেল ক্লার্ক সামনের মাসে ফিরতি অ্যাশেজের আগেই সেরে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে শুনেছেন শচীন টেন্ডুলকারের অবসরের ঘোষণা। প্রতিপক্ষ হলেও অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক টেন্ডুলকারের দারুণ ভক্ত। ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াসের সঙ্গে আছে তাঁর অসাধারণ সব স্মৃতিও। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ক্লার্ক খুলে দিলেন সেই স্মৃতির দুয়ার। জানালেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের অবসর নিয়ে তাঁর ভাবনাটাও—

শচীন টেন্ডুলকার-মাইকেল ক্লার্ক ষ ফাইল ছবি
শচীন টেন্ডুলকার-মাইকেল ক্লার্ক ষ ফাইল ছবি

 টেন্ডুলকারের অবসর ঘোষণা শুনে কেমন লাগছে?
মাইকেল ক্লার্ক: এটা তো একসময় হতোই। তবে টেন্ডুলকারের মতো একজন কিংবদন্তি যখন অবসর নেয়, তখন খেলাটি হতশ্রী হয়ে যায়। আমাদের প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান সে। আমি যাদের সঙ্গে বা বিপক্ষে খেলেছি তাদের মধ্যেও সেরা। হয়তো স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর সে-ই দ্বিতীয়। এ রকম একজন যখন অবসর নেন, তখন ব্যথাটা সব ভক্তই অনুভব করেন।
 আপনি তো তাঁকে সবার সেরা বললেন। কোন গুণগুলো দেখে বলছেন?
ক্লার্ক: আমার দেখা সে-ই সবচেয়ে পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান। সে রক্ষণ ও আক্রমণ দুটিতেই সমান পারদর্শী। সব ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে সমান দক্ষতায় খেলে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তার দীর্ঘস্থায়িত্ব—এটা অতুলনীয়।
 আপনি তাঁর বিপক্ষে খেলেছেন, অধিনায়কত্ব করেছেন। দেখেছেন, প্রতিপক্ষ হয়েও টেন্ডুলকার ঘরের ছেলের মতো অস্ট্রেলিয়ানদের ভালোবাসা পাচ্ছে। এই ভালোবাসার রহস্য কী?
ক্লার্ক: অস্ট্রেলিয়ার সবখানেই সে শ্রদ্ধার পাত্র। অস্ট্রেলিয়ান ভক্তরা ভালো ক্রিকেটের কদর দিতে জানে। টেন্ডুলকার অস্ট্রেলিয়ায় কিছু অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। সে-ই সম্ভবত একমাত্র খেলোয়াড় যাকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি মাঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো হয়েছে। সে আমাদের খেলাটার সবচেয়ে আদর্শ দূত। ভারত ও সারা বিশ্বে ক্রিকেটের জন্য সে যা করেছে, অস্ট্রেলিয়ানরা সেটা মনে রাখবে। ওকে খেলতে দেখে আমি অনেক কিছু শিখেছি। অনেক বছর ধরে সে প্রায় অস্ট্রেলিয়ান ঘরানার ক্রিকেট খেলেছে। আক্রমণাত্মক ছিল, বোলারদের রাজত্ব করতে দিত না। দারুণ সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, হার না-মানার মানসিকতা ছিল।
 টেন্ডুলকার সই করে একজোড়া গ্লাভস উপহার দিয়েছিলেন আপনার অভিষেকে। সেগুলো কি আছে এখনো?
ক্লার্ক: অবশ্যই আছে। সিডনিতে আমার বাড়িতে একটা বিশেষ জায়গায় আমি সেগুলো রেখেছি। চিরদিনই থাকবে। ২০০৪ সালে ভারতে আমার অভিষেক সফরে সে আমাকে এই উপহার দিয়েছিল। আমার কাছে এর মূল্য অনেক। সে নিজে সই করে দিয়েছিল। আর যখন কোনো কিংবদন্তি নিজে সই করে আপনাকে কিছু দেন, সেটা অবশ্যই অমূল্য।
 ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটাররা টেন্ডুলকারের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?
ক্লার্ক: অনেক কিছুই শিখতে পারে। প্রথমত, টেস্ট ক্রিকেটই আসল ক্রিকেট। টেন্ডুলকার এটাকেই সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়েছে এবং এই বার্তাটা আগামী প্রজন্মের প্রতিটি ক্রিকেটারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, খেলাটির প্রতি তার দায়বদ্ধতা। মাঠে আপনি কখনো টেন্ডুলকারের গা-ছাড়া ভাব দেখবেন না। সে দুর্ধর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মানসিকতার। দীর্ঘ ২৪ বছর সে এভাবেই খেলে গেছে এবং এ কারণেই এত দিন ধরে শীর্ষে থাকতে পেরেছে।