মোহামেডানের গোল নষ্টের মহড়া

ঢাকা মোহামেডানের স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজকে ঘিরে ধরেছেন স্পিন গর বাজানের চার ফুটবলার। এই ঘেরাটোপ ভাঙতে পারেনি মোহামেডানও l শামসুল হক
ঢাকা মোহামেডানের স্ট্রাইকার নাবিব নেওয়াজকে ঘিরে ধরেছেন স্পিন গর বাজানের চার ফুটবলার। এই ঘেরাটোপ ভাঙতে পারেনি মোহামেডানও l শামসুল হক

৭৫ মিনিটে মালেকের ক্রস থেকে জীবন যে হেডটি করলেন, গোটা স্টেডিয়াম লাফিয়ে উঠল। এক গোলে পিছিয়ে থাকা দল তখন গোলের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছে। নাবিব নেওয়াজ জীবনের সামনে সুযোগ ছিল দলকে সমতায় ফেরানো। কিন্তু লাফিয়ে উঠে করা তাঁর কোনাকুনি হেডটা চলে গেল বাইরে। স্টেডিয়াম নিস্তব্ধ!
মিনিট কয়েক পরই ইব্রাহিমের ঠেলে দেওয়া বল পায়ে লাগালেই গোল। এমন সুবর্ণ সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারলেন না বিজেএমসি থেকে ধারে মোহামেডানের জার্সি গায়ে তোলা জীবন, কদিন আগেই যাঁকে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটিয়ে দিয়েছেন ফাবিও লোপেজ। শুধু জীবনই নন, মোহামেডান দলই যেন গোল মিসের মহড়া দিল কাল এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলোয়।
গোটা দশেক সুযোগ হারিয়েছে সাদা-কালোরা। ছয়-সাতটি তো অবধারিত গোল হওয়ার মতো। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন গোল নষ্ট, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তিনটিই নষ্ট করলেন জীবন। মোবারকও বক্সে ঢুকে তালগোল পাকিয়ে পড়ে গেলেন, নইলে গোল হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার। একবার তাঁর শট আটকে দিলেন আফগান গোলরক্ষক, বল গড়িয়ে গড়িয়ে বাইরে। পোস্ট বরাবর থাকলে সেটাও গোল হয়।
এই গোল নষ্টের মিছিলটা শুরুটা হয়েছিল ইব্রাহিমকে দিয়ে। শেষ দিকে বলও যেন বিদ্রোহ করে বসেছিল। পণ করেছিল, কোনোভাবেই সে জালে যাবে না! স্টেডিয়ামে তাই বারবার শোনা যাচ্ছিল, ইশ্...ইশ্!
একটি গোলও করতে না-পারা মোহামেডানের জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক। উল্টো ১ গোলে হেরে গেল স্পিন গর বাজান ক্লাবের কাছে। আফগান চ্যাম্পিয়নরা ৩৩ মিনিটে করা ওই গোল ধরে রেখে মাঠ ছেড়েছে, যা তাদের জন্য বড় কৃতিত্বই। গোলটিও মোহামেডানের কাছ থেকে উপহার পাওয়া। ডিফেন্ডার ইয়োন্টা মাইকেল গা-ছাড়া ছিলেন, বল ক্লিয়ার করতে তাঁর দৃষ্টিকটু ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে মাপা শটে লক্ষ্যভেদ করেন মিডফিল্ডার আনোয়ার আকবারি।
আফগান চ্যাম্পিয়নরা মূলত গতির ওপর খেলে গেল, পাসিংটাও তাদের বেশ ভালো। তবে একটি গোল করা ছাড়া তেমন সুযোগ আর পায়নি বাজান। দু-একবার গোলের চেষ্টা করলেও মোহামেডান গোলরক্ষক আরিফুল ইসলাম রানা ছিলেন তৎপর।
খেলল আসলে মোহামেডানই। গোল হয়তো পায়নি, কিন্তু মন জয় করেছে মাঠে আসা কয়েক হাজার দর্শকের। তাতে তো আর মন ভরে না কোচ জসিমউদ্দীন জোসির। ছলছল চোখে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রথমেই নিজের কপালে হাত রেখে বোঝালেন, ভাগ্যে নেই। দুঃখ করলেন এভাবে গোল নষ্ট করে হেরে যাওয়ায়, ‘আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে সবকিছু। অন্তত ৫ গোলে আমাদের জেতা উচিত ছিল।’
আফগান কোচ ওয়াহিদুল্লাহ মানতে রাজি হলেন না যে এটি তাঁদের ভাগ্যপ্রসূত জয়, ‘আমাদের লক্ষ্যই ছিল গোলটা ধরে রেখে খেলব। আমরা সফল।’