এল ক্লাসিকো, আগুনঝরা এক ম্যাচ

দুই দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেও ছিল উত্তেজনা। ছবি: রয়টার্স
দুই দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেও ছিল উত্তেজনা। ছবি: রয়টার্স
>
  • এল ক্লাসিকোর শেষ ম্যাচ হয়েছে আগুনঝরা।
  • ২-২ গোলে সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।
  • দুই দলের হয়ে মেসি–রোনালদো দুইজনই গোল করেছেন।

বার্সেলোনা ট্রফি জিতে ফেলায় কাগজে কলমে এই ম্যাচের গুরুত্ব হয়তো ছিল না। কিন্তু বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ যখন মুখোমুখি হবে তখন কাগজ-কলম শিকেয় তুলে রাখাটাই উত্তম। স্প্যানিশ এই দুই জায়ান্ট ক্লাবের খেলায় আগুন ঝরবে এটা অনুমিতই। সেটা মাঠের বাইরে দুই কোচের কথা চালাচালিতে এক চোট হয়ে গেছে গার্ড অব অনার দেওয়া না দেওয়া নিয়ে। তবে রোববার রাতে এই মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোয় ন্যু ক্যাম্পে রিয়াল আর স্বাগতিক বার্সেলোনার মধ্যে যা খেলা হয়েছে...বলতে পারেন পয়সা উসুল ম্যাচ। যদিও আগুনঝরা ম্যাচে শেষতক ২-২ গোলে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো মেসি-রোনালদোদের।
পুরো ম্যাচই ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। সেটা খেলায় তো বটেই খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেও প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকবার। প্রথমার্ধেই মেসি ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেছেন। হলুদ কার্ডের দেখা পেয়েছেন সুয়ারেজও। সার্জিও রবার্তো প্রথমার্ধেই শেষ কয়েক সেকেন্ড আগে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। রিয়ালের রামোস, ভারান, নাচোকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করে দেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে এসে গ্যারেথ বেল ও মার্সেলো হলুদ কার্ড দেখলে রিয়ালের রক্ষণের সবার হলুদ কার্ডের ‘কোটা’ পূরণ হয়। এবার বুঝুন কতটা আগুনের ফুলকি ছুটেছিল মাঠের এ মাথা ও মাথা!

হলুদ কার্ড দেখেছেন মেসিও! ছবি: রয়টার্স
হলুদ কার্ড দেখেছেন মেসিও! ছবি: রয়টার্স

প্রথম পনেরো মিনিট ছিল অসাধারণ ফুটবলের প্রদর্শনী। একের পর এক আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণে উত্তাপ ছড়ায় মাঠে। প্রথমার্ধের শুরুতে কিছু সময় প্রেসিং ফুটবল খেলে বার্সেলোনা। ওই সময়টুকু বল দখলে খানিকটা এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। একের পর এক আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণকে কিছুটা অসহায় মনে হচ্ছিল তখন। কিন্তু সেটা খুব বেশি সময় নয়। খেলা শুরুর মিনিট পাঁচেক পরই নিজেদের খেলায় ফিরে আসে রিয়াল খেলোয়াড়েরা। তবে রিয়ালের গোলমুখে প্রথম শটটা নেয় বার্সেলোনাই। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন সুয়ারেজ। মেসির দুর্দান্ত পাস ঠিকানা মতো পৌঁছাতে পারেননি সুয়ারেজ। যদিও ওই সুয়ারেজই দুর্দান্ত এক গোলে বার্সাকে এগিয়ে নেয় ম্যাচের দশম মিনিটে। পাল্টা আক্রমণে উঠে আসার মুহূর্তে মাঝমাঠে বল পান সুয়ারেজ। রিয়ালের সীমানায় এসে ডান প্রান্তে থাকা সার্জিও রবার্তোকে পাস দিয়ে ডি বক্সে ঢোকেন উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকার। রিয়াল গোলরক্ষক ধোঁকা খান অন্য জায়গায়। সুয়ারেজের পাশ ঘেঁষে মেসিও তখন ডি বক্সে ঢোকেন। নাভাস ভেবেছিলেন রবার্তো হয়তো মেসিকেই পাস দেবেন! কিন্তু রবার্তোর দুর্দান্ত ক্রস পৌঁছায় সুয়ারেজের কাছে। তাতে যা হওয়ার তা-ই হলো। ১-০তে এগিয়ে যায় কাতালানরা। তবে খুব বেশি সময় এগিয়ে থাকা হয়নি মেসি-সুয়ারেজদের। ১৪তম মিনিটে ক্রুস-বেনজেমা-রোনালদোর সমন্বিত আক্রমণে গোল হজম করে বার্সেলোনা। জার্মান তারকা ক্রুসের লম্বা ক্রস থেকে হেড করেন ফ্রেঞ্চ তারকা করিম বেনজেমা। ডি বক্সে পিকের মার্কে থাকা রোনালদো বল জালে জড়ালে ১-১ গোলে সমতায় ফেরে অতিথিরা। 

গোলের পর মেসির উদ্‌যাপন। ছবি: রয়টার্স
গোলের পর মেসির উদ্‌যাপন। ছবি: রয়টার্স

এরপর রিয়ালের গোলরক্ষক নাভাস আর বার্সার টার স্টেগানের অসাধারণ নৈপুণ্যে স্কোরলাইন বাড়াতে পারেনি কোনো দল। এই যেমন ২৭তম মিনিটে বার্সার ফাঁকা রক্ষণে রোনালদোর শট আটকে দিয়ে ত্রাতা বনে যান স্টেগান। মাঠের অন্য প্রান্তে থাকা নাভাস ৪২তম মিনিটে মেসির শট আটকে দিয়ে রিয়ালকে রক্ষা করেন।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে সার্জিও রবার্তো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দশ জনের দল নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু করে বার্সেলোনা। প্রথম গোল করার সময় হালকা চোট পেয়েছিলেন রোনালদো। নিজের প্রিয় ছাত্রকে নিয়ে তাই ঝুঁকি নিতে চাননি জিদান। রোনালদোর জায়গায় ভরসা রাখেন অ্যাসেনসিওর ওপর। দ্বিতীয়ার্ধে খানিকটা রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে বার্সা। ৪৯তম মিনিটে বেনজেমা-মার্সেলোর আক্রমণের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান পিকে। এরপর ৫২তম মিনিটে আক্রমণে উঠে আসে বার্সেলোনা। লুইস সুয়ারেজের দুর্দান্ত পাস থেকে মেসির শটে রিয়ালের জালে বল জড়ালে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ৫৪তম মিনিটে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে সুয়ারেজের আরেকটি গোল বাতিল হলে স্কোরলাইনে অপরিবর্তিত থাকে। কিছু সময় পর সুয়ারেজের পাস থেকে আবারও অসাধারণ হেড নেন আর্জেন্টাইন তারকা মেসি। এবার নাভাস বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা আটকান। 

গোল করেছেন রোনালদো। ছবি: রয়টার্স
গোল করেছেন রোনালদো। ছবি: রয়টার্স

এদিকে গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা রিয়াল মাদ্রিদ ৭২তম মিনিটে গ্যারেথ বেলের গোলে সমতায় ফেরে। জিদানের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন অ্যাসেনসিও। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকেই আড়াআড়ি শটে গোল করেন ওয়েলস ফরোয়ার্ড বেল। ৭৫তম মিনিটে বার্সার ডি বক্সে ফাউলের শিকার হন মার্সেলো। পেনাল্টির জোর আবেদনও জানান এই ব্রাজিলিয়ান। তবে সাড়া দেননি রেফারি। ৭৭তম মিনিটে এসে এই পেনাল্টি নিয়ে রেফারিকে লক্ষ্য করে ফের কিছু একটা বলেন মার্সেলো। যেটা ভালোভাবে নেননি রেফারি। হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন মার্সেলোকে। শেষের দশ মিনিটে ভালো কিছু সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় ২-২ স্কোরলাইন নিয়ে মাঠ ছাড়ে দুই দল।