অ্যাপে রক্তের খোঁজ

লাইফ‍ প্লাস অ্যাপের নির্মাতারা l ছবি: সংগৃহীত
লাইফ‍ প্লাস অ্যাপের নির্মাতারা l ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহখানেক আগের কথা। এক আত্মীয়ের জন্য রক্তের সন্ধান করতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয় আমিনুল ইসলামের। কয়েক মাস পরপরই তাঁর ওই আত্মীয়ের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। আর রক্ত জোগাড় করার দায়ভারটা পড়ে গণমাধ্যমকর্মী আমিনুলের ওপর। প্রতিবারই সহকর্মী কিংবা পরিচিতজনদের বলে রক্ত জোগাড় করে ফেলেন। এবার বিপত্তি বাধে। কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। চারদিকে রক্তের খোঁজ করে না পেয়ে যখন তাঁর হতাশ অবস্থা, তখনই জানতে পারলেন তিনি যে গ্রুপের রক্ত খুঁজছেন সেই গ্রুপের রক্ত বহন করেন তাঁর নিকট পরিচিত একজন।
মাঝরাত তখন। কোনো দ্বিধা না করেই আমিনুল ফোন দিলেন ওই পরিচিতজনকে, জানালেন রক্ত প্রয়োজন। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে রক্ত দেওয়ার সাড়া ফেল। রক্তদাতাকে আসতে হবে সকালে। কিন্তু বিধিবাম। সকালে পরিচিতজনটির ফোন বন্ধ। আবারও বেশ চিন্তায় পড়েন আমিনুল, সঙ্গে রোগীর পরিবারও। কয়েক ঘণ্টা পর সেদিন রক্ত পাওয়া গিয়েছিল ওই রোগীর জন্য। শুধু আমিনুল নন; আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিচিতজনের জন্য রক্তের প্রয়োজন হলে সবাইকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে দেখা যায়। আর বিভিন্ন মারফত রক্ত জোগাড় করার চেষ্টা চলে।
এমন মুহূর্তে লাইফ প্লাস নামের অ্যাপটি রোগীর পরিবারের দুশ্চিন্তা অনেকটা কমাতে পারে। অ্যাপটি ব্যবহার করে পাওয়া যাবে রক্তদাতার সন্ধান। গতকাল রোববার মুঠোফোনেই এমনটাই বলছিলেন, অ্যাপটির নির্মাতা দলের সদস্য আতিকুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন লাইফ প্লাস অ্যাপটি কীভাবে কাজ করে।

যেভাবে কাজ করে
স্মার্টফোনে অ্যাপটি নামিয়ে রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতা—সবাইকে শুরুতেই নিবন্ধন করতে হবে। যাঁরা রক্ত দিতে আগ্রহী তাঁরা নিবন্ধন করে রক্ত দিতে পারবেন। ইতিমধ্যেই ৫০০-এর বেশি রক্তদাতা নিবন্ধন করেছেন বলে জানান আতিকুর রহমান। আর রক্তদাতার সন্ধানে অ্যাপের সার্চ ট্যাবে গিয়ে রক্তের যে গ্রুপ দরকার তা নির্বাচিত করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও রোগীর ব্যবস্থাপত্র যুক্ত করতে হবে অ্যাটাচড ফাইলে। যদিও এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়নি তথ্যপ্রমাণাদি যোগ করার বিষয়টি। তারপর সাবমিট বোতামে চাপ দেওয়ার পর একটি তালিকা দেখা যাবে, কারা কারা ওই গ্রুপের রক্তদাতা আছেন তাঁর। রক্তগ্রহীতা থেকে রক্ত দিতে ইচ্ছুক কে, কত দূরত্বে আছেন তাও জানা যাবে। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা যাক, ধরুন কোনো রক্তদাতা ওই অ্যাপে নিবন্ধন করেছিলেন ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে। পরে তিনি যদি ঢাকায় না থেকে ভিন্ন কোনো জায়গায় অবস্থান করেন তাহলে ফোনের ‘অটো লোকেশন’-এর মাধ্যমে যে স্থানে আছেন তা দেখাবে। নিবন্ধিত ঠিকানা দেখাবে না।
এরপর নিবন্ধনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে কাছে থাকা ব্যক্তিকে রিকোয়েস্ট বোতাম চেপে অনুরোধ জানানো যাবে রক্ত দেওয়ার জন্য। অনুরোধ পাওয়ার পর রক্ত দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে দাতা ও গ্রহীতা যোগাযোগ করতে পারবেন। কারণ, তখন নিজেদের মুঠোফোন নম্বর দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে অ্যাপে। রক্ত দেওয়ার পর রক্তদাতা অ্যাপটিতে নিজেকে আন-অ্যাভেলেবল করে দিলে তিন মাস পর্যন্ত কেউ অনুরোধ জানাতে পারবে না।

যাঁদের উদ্যোগে এই অ্যাপ
ইকারাস দলের আতিকুর রহমান, রাশিক জামান ও মুশফিকুর রহমান বানিয়েছেন লাইফ প্লাস অ্যাপ। তাঁরা সবাই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র। এর মধ্যে আতিকুর রহমান পড়েন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে, বাকি দুজন কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগে। অ্যাপ তৈরির ধারণা তিনজনেরই। নির্মাণ করেছেন রাশিক জামান এবং ইন্টারফেস নকশা করেছেন আতিকুর রহমান।

কেন এই উদ্যোগ?
আতিকুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সবকিছুরই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে। তাই আমরা তিন বন্ধু মিলে রক্তের সন্ধানে এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যাতে মানুষের দৌড়াদৌড়ি না করতে হয়। সে জন্য এই অ্যাপ বানানো।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
‘আমরা মূলত সংযোগ করে দিচ্ছি রক্তদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে। অ্যাপের নিয়মিত হালনাগাদ ও কারিগরি উন্নয়ন ছাড়া এর বাইরে তেমন কিছু করার নাই। এই বিষয়টি নিয়ে মূলত আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া এই অ্যাপের ব্যবহারকারী যত বাড়বে তত বেশি রক্তদাতা ও গ্রহীতা বাড়বে। এ জন্য দেশের যাঁরা নিজ ইচ্ছায় রক্ত দেন তাঁরা যেন এই অ্যাপে যুক্ত হন সে আহ্বান জানাই’, বলছিলেন আতিকুর রহমান।
গত ২৬ মার্চ গুগল প্লে স্টোরে প্রকাশ করা হয় লাইফ প্লাস অ্যাপ। https://goo.gl/Zz3Dgw ঠিকানা থেকে বিনা মূল্যে নামানো যাবে অ্যাপটি।