বন্ধুত্বের হাত ধরে দুনিয়া কাঁপানো প্রযুক্তি

বন্ধু মানে নাকি সব। প্রযুক্তি দুনিয়া কাঁপানো অনেক উদ্যোগই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের হাত ধরে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় প্রভাবশালী প্রযুক্তি উদ্যোগ এবং সেসবের পেছনে থাকা বন্ধুদের কথা থাকছে এখানে

স্টিভ ওজনিয়াক ও স্টিভ জবস
স্টিভ ওজনিয়াক ও স্টিভ জবস

স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক

প্রতিষ্ঠান: অ্যাপল ইনকরপোরেটেড

গ্রীষ্মকালীন চাকরি করতে গিয়ে ১৯৭০ সালে বন্ধুত্ব হয় দুই স্টিভের, স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক। ওজনিয়াক তখন ব্যস্ত কম্পিউটার তৈরিতে। আর জবস তখন ওজনিয়াককে জানান, তৈরি কম্পিউটার বিক্রির সুযোগ রয়েছে। তাঁরা পেরেছিলেনও বটে। এরপর ভাবা শুরু করেন, কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় এ নিয়ে। দুই বন্ধুর সেই ভাবনাতেই প্রযুক্তি বিশ্বে বিপ্লব ঘটে। ছয় বছর পর ১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল ইনকরপোরেটেড। মাঝখানে বছর কয়েক স্টিভ জবস অ্যাপল থেকে দূরে ছিলেন। পরে আবার ফিরে এসে আমৃত্যু ছিলেন অ্যাপলেই।

বিল গেটস ও পল অ্যালেন
বিল গেটস ও পল অ্যালেন

বিল গেটস ও পল অ্যালেন

প্রতিষ্ঠান: মাইক্রোসফট

ওয়াশিংটনের লেকসাইড প্রাইভেট স্কুলে পরিচয় বিল গেটস ও পল অ্যালেনের। সেই পরিচয় ভালো লাগা থেকে বন্ধুত্বে পরিণত হতে সময় লাগেনি। দুজনেরই পছন্দ আবার কম্পিউটার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার পর গেটস ও অ্যালেন একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করেন। তা থেকেই ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল দুই বাল্যবন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো শহরে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট। সেই বন্ধুত্বে গড়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বিল গেটস আজ বিশ্বের শীর্ষ ধনী।

সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেইজ
সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেইজ

ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন

প্রতিষ্ঠান: গুগল

শত্রু থেকে বন্ধু হওয়ার একটি উদাহরণ ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সময় সারাক্ষণই দ্বন্দ্ব লেগে থাকত এ দুজনের। তবে একটি গবেষণা প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্ব হয় ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিনের। দুজনের কাজ ও ভালো লাগার বিষয় এক হওয়ায় তাঁদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। তবে তাঁরা সে সময় কোনো দিনও ভাবেননি যে ইন্টারনেট প্রযুক্তির দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে চলেছেন। ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এ দুই বন্ধু ইন্টারনেটে থাকা তথ্য খুঁজে বের করার গবেষণা করতে গিয়ে চালু করেন একটি সার্চ ইঞ্জিন, নাম গুগল। আর সেই গুগলই পেইজ ও ব্রিনের বন্ধুত্বকে বিখ্যাত করে তোলে।

গর্ডন মুর ও বব নোয়েস
গর্ডন মুর ও বব নোয়েস

গর্ডন মুর ও বব নোয়েস

প্রতিষ্ঠান: ইন্টেল

স্বাধীনচেতা দুই বন্ধু গর্ডন মুর ও বব নোয়েসসহ আটজন নিজেদের প্রতিষ্ঠান চালুর লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে তৎকালীন বিখ্যাত ‘সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরি’ ছেড়ে চলে আসেন। তাঁদের পদত্যাগ করার ঘটনা ইতিহাসে ‘আট বিশ্বাসঘাতক’ (Traitorous eight) নামে পরিচিত। এরপর ১৯৬৮ সালের ১৮ জুলাই মুর ও নোয়েস প্রতিষ্ঠা করেন ইন্টেল করপোরেশন। দুই বন্ধুর গড়া সেই ইন্টেলের প্রসেসর বর্তমানে প্রায় সব কম্পিউটারের প্রাণ।

ইভান উইলিয়ামস ও বিজ স্টোন
ইভান উইলিয়ামস ও বিজ স্টোন

ইভান উইলিয়ামস ও বিজ স্টোন

প্রতিষ্ঠান: টুইটার

গুগলের ওডিও ডট কমে (www.odeo.com) কাজ করার সময় ইভান উইলিয়ামস বিজ স্টোনকে নিয়োগ দেন। সেখানেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের। ইভান ২০০৪ সালে গুগল থেকে পদত্যাগ করলে স্টোনও তাঁর সঙ্গে চলে আসেন। পরে ওডিওর সাবেক প্রকৌশলী জ্যাক ডরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি সরল ধারণার কথা জানালে ইভান স্টোনসহ বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে টুইটার প্রতিষ্ঠা করেন। দুই বন্ধুসহ অন্যদের অক্লান্ত শ্রমে ২০০৬ সালের ২১ মার্চ সানফ্রান্সিসকোতে যাত্রা শুরু করে খুদে বার্তা লেখার ওয়েবসাইট টুইটার।

ডেভিড প্যাকার্ড ও উইলিয়াম রেডিংটন হিউলেট
ডেভিড প্যাকার্ড ও উইলিয়াম রেডিংটন হিউলেট

উইলিয়াম রেডিংটন হিউলেট ও ডেভিড প্যাকার্ড

প্রতিষ্ঠান: এইচপি

স্ট্যানফোর্ডের প্রকৌশল প্রোগ্রামিংয়ের ছাত্র ছিলেন উইলিয়াম রেডিংটন হিউলেট ও ডেভিড প্যাকার্ড। স্নাতক করার পর দুই সপ্তাহের জন্য ভ্রমণে যান ওই কোর্সের অনেকেই। আর সেখানেই বন্ধুত্ব হয় হিউলেট ও প্যাকার্ডের। এরপর খুব কম সময়ের মধ্যেই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রেড টেরমেনের অনুপ্রেরণায় কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরা। নিজেদের নামেই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন হিউলেট-প্যাকার্ড, সংক্ষেপে এইচপি। ১৯৩৯ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোর গ্যারেজে যাত্রা শুরু হয় আজকের জনপ্রিয় কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এইচপির।

স্টিভেন চ্যান, চ্যাড হার্লে ও জাভেদ করিম
স্টিভেন চ্যান, চ্যাড হার্লে ও জাভেদ করিম

জাভেদ করিম চ্যাড হার্লে ও স্টিভেন চ্যান

প্রতিষ্ঠান: ইউটিউব

২০০২ সালের অক্টোবরে মার্কিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইবে পেপ্যাল কিনে নিলে অনেকেরই মতো বেকার হয়ে পড়েন বাংলাদেশি-জার্মান বংশোদ্ভূত জাভেদ করিম। তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী হারান চ্যাড হার্লে এবং স্টিভেন চ্যানও চাকরি হারান। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনজন মিলে নতুন কিছু করার চিন্তা করেন। আর সেই নতুন কিছু নিয়ে কাজ করতেই বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয় করিম, হার্লে ও চ্যানের। এরপর এই তিন বন্ধু মিলে ২০০৫-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি ভিডিওভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। চাকরিচ্যুত সেই তিন বন্ধুর বন্ধুত্বের নিদর্শনই আজকের ইউটিউব।

জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলো
জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলো

জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলো

প্রতিষ্ঠান: ইয়াহু

ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন কিংবা হিউলেট ও প্যাকার্ডের মতো জেরি ইয়াং ও ডেভিড ফিলো—এই দুজনের পরিচয়ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে এই দুজনকে কম্পিউটারের চিপসেট নিয়ে একটি প্রকল্পে কাজ করতে দিলে দুজনেই অনাগ্রহ থেকে ক্লাস ফাঁকি দিতে শুরু করেন। ফাঁকি দিয়ে তাঁরা ওয়েব সার্ফ শুরু করেন। সেই সময় তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় তাঁরা প্রিয় ওয়েবসাইটগুলোকে সাজিয়ে রাখতে চেষ্টা করতেন। আর সেখান থেকেই নিছক মজার ছলেই তৈরি করে ফেলেন ইয়াহু। তবে প্রথমে ব্যবসায়িক দিক না ভাবলেও অচিরেই তাঁরা তা উপলব্ধি করেন। ১৯৯৫ সালের ২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ইয়াহুর। চলতি বছরে টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান ভেরাইজন কমিউনিকেশনস ইয়াহুকে অধিগ্রহণ করে নেয়।

জেফরি স্কল ও পিয়ের ওমিদিয়ার
জেফরি স্কল ও পিয়ের ওমিদিয়ার

পিয়ের ওমিদিয়ার ও জেফরি স্কল

প্রতিষ্ঠান: ই-বে

অবসর সময় কাটাতে একটি ওয়েবসাইটের কোডিং করেছিলেন পিয়ের ওমিদিয়ার। সেই ওয়েবসাইটের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করতে জেফরি স্কলকে নিয়োগ দেন ওমিদিয়ার। সেখান থেকেই শুরু হয় দুজনের বন্ধুত্ব। দুজনে মিলেই ১৯৯৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ওয়েবসাইট ইবে। তবে জেফরি ইবের সহপ্রতিষ্ঠাতা না হলেও ওমিদিয়ারের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন ইবে গড়ে তুলতে।

গ্রন্থনা: শাওন খান, সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার