গোল্ডফিশেরা মদ্যপ!‍

বেঁচে থাকতে শরীরের ভেতর অ্যালকোহল উৎপন্ন করে গোল্ডফিশ। ছবি: এএফপি
বেঁচে থাকতে শরীরের ভেতর অ্যালকোহল উৎপন্ন করে গোল্ডফিশ। ছবি: এএফপি

ভীষণ ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গরম কাপড় মানুষের অন্যতম অবলম্বন। তাতেও কুলিয়ে উঠতে না পারলে আছে নানা উপায়। শীতপ্রধান দেশের মানুষের ঝামেলা একটু বেশি। শরীর উষ্ণ রাখতে দুই পাত্তর ব্র্যান্ডি পেটে না পড়লে তাদের চলে না। এটাই সেসব দেশের মানুষের জীবনধারণের রীতি, শরীর গরম রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণে অ্যালকোহল পানের কেতা সেসব দেশের সংস্কৃতির অংশ।

একই কায়দা যে গোল্ডফিশও জানে, এটা জানেন? ভীষণ হিমশীতল পরিবেশে গোল্ডফিশ টিকে থাকে অ্যালকোহলের সাহায্যেই। শরীর থেকে নিঃসৃত ল্যাকটিক অ্যাসিডকে তারা অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করতে জানে।
উত্তর ইউরোপের শীতপ্রধান দেশে বরফজমাট পানিতে গোল্ডফিশের বেঁচে থাকার সামর্থ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন সেই আশির দশক থেকে। শুধু গোল্ডফিশই নয়, তাদের সমগোত্রীয় ক্রুশিয়ান কার্প মাছের ওপরও চালানো হয়েছে গবেষণা। বেঁচে থাকার জন্য গোল্ডফিশ শরীরের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিডকে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করে, এটা জানার পর বিজ্ঞানীরা দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন—কেন এবং কীভাবে?
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, কয়েক প্রজাতির গোল্ডফিশের শরীরে যে পরিমাণ অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়, ইউরোপের অনেক দেশেই একই পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণ করলে গাড়ি চালানো নিষেধ।
মানুষের শরীরে অ্যালকোহলের প্রভাব, এর ক্ষতির দিকটা সম্পর্ক জানতে গোল্ডফিশের এই বিচিত্র সামর্থ্য নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। কার্প প্রজাতির এ মাছের ‘মলিকুলার মেকানিজম’ উন্মোচনের পরই রহস্যটা ভাঙতে পেরেছেন তাঁরা। জানা গেছে, গোল্ডফিশের এমন সামর্থ্যের নেপথ্য কারণ।
প্রাণিজগতের বেশির ভাগের শরীরেই রয়েছে প্রোটিনের একক সেট; যা কার্বোহাইড্রেটকে নিয়ে যায় মাইটোকন্ড্রিয়ায়; এ মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় কোষের ‘শক্তিঘর’। পানিতে অক্সিজেন না থাকলে কার্বোহাইড্রেটের ক্ষয়টা বেশি হয় গোল্ডফিশের শরীরে। এতে উৎপন্ন হয় ল্যাকটিক অ্যাসিড, যার কারণে গোল্ডফিশের ভবলীলা সাঙ্গ হতে পারে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ বলুন কিংবা সৌভাগ্য, গোল্ডফিশের শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিকশিত হয় প্রোটিনের দ্বিতীয় সেট; যা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে উৎপন্ন ল্যাকটিক অ্যাসিডকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে। পরবর্তী সময়ে ফুলকা দিয়ে সেই অ্যালকোহল নিঃসরণ করে থাকে গোল্ডফিশ।
গোল্ডফিশের শরীরে এই দ্বিতীয় সেট প্রোটিনের ব্যাখ্যা করেছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক মাইকেল বেরেনব্রিঙ্ক, ‘কেবল অক্সিজেন না থাকলেই এই দ্বিতীয় পথ (দ্বিতীয় সেট প্রোটিন) তৈরি হয়। বরফের কারণে তাদের ওপরকার বাতাস গ্রহণ ব্যাহত হয়। এ কারণে কোনো বরফঢাকা পুকুরে ভেতরকার সব অক্সিজেন নিঃশেষ করে ফেলে গোল্ডফিশ। এরপর বেঁচে থাকার জন্য তারা অ্যালকোহলের ওপর নির্ভর করে।’
ঠান্ডার পরিমাণ যত বেশি হবে, পানিতে অক্সিজেন যত কম থাকবে, গোল্ডফিশের শরীরে অ্যালকোহলের পরিমাণ ততই বাড়বে। বেরেনব্রিঙ্কের ব্যাখ্যা, ‘পানির মধ্যে তাদের পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, প্রতি ১০০ মিলিলিটার রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ ৫০ মিলিগ্রামের বেশি; যা স্কটল্যান্ড কিংবা উত্তর ইউরোপের দেশগুলোতে মদ খেয়ে বৈধ ড্রাইভিং সীমা লঙ্ঘন করে। অর্থাৎ তারা সত্যিই মাতাল!’ সূত্র: বিবিসি।